একাধিক দাবিতে ভারতের কেন্দ্রে আসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ফের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কৃষকরা। সেই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানী দিল্লির অভিমূখে রওনা হয়েছেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার অন্তত এক লাখ কৃষক। তাদের যে কোনো মূল্যে আটকাতে মরিয়া হরিয়ানার প্রাদেশিক সরকার।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার সকালে দিল্লির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে কৃষকদের বিশাল ওই মিছিল। তার পর থেকেই পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তের শম্ভু এলাকায় কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। খবর: এনডিটিভি
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, দেশটির প্রায় ২০০ কৃষক ইউনিয়ন এবং হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের আনুমানিক এক লক্ষ কৃষক আজ মঙ্গলবার ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে দিল্লির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। তাদের আটকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এসময় কৃষকদের ওপর টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান থেকে গরম পানি নিক্ষেপ করা হলে তারাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী। এছাড়াও কৃষক এবং তাদের সমর্থকদের পাশাপাশি মিডিয়া কর্মীদের টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ার শব্দে আশেপাশে পালাতেও দেখা যায়। শম্ভু সীমান্তের কাছে তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মীরা কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য ড্রোন থেকে স্মোক বোমা নিক্ষেপ করেছে।
ভিডিওতে কৃষকদের তখন মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকতে দেখা গেছে। কৃষকরা এসময় ধাতব ব্যারিকেডগুলো ডিঙিয়ে অপর পাশে যাচ্ছিলেন। একটি ভিডিওতে কৃষকদের পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতেও দেখা যায়।
পাঞ্জাব কিষাণ মজদুর সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ান সিং পান্ধের বলেছেন, কৃষকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলেও তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যতক্ষণ না সরকার আমাদের দাবিতে রাজি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই প্রতিবাদ চলবে। পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরের হরভজন সিং বলেন, সুই থেকে হাতুড়ি পর্যন্ত, পাথর ভাঙ্গার সরঞ্জামসহ আমাদের যা যা দরকার সবই আছে। আমরা আমাদের সাথে ছয় মাসের রেশন নিয়ে আমাদের গ্রাম ছেড়ে এসেছি। তিনি বলেন, গতবার আমাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এবার আমাদের সব দাবি পূরণ হলে তবেই আমরা চলে যাব।
এদিকে কৃষকদের আন্দোলন প্রতিহত করতে দিল্লিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ট্র্যাক্টর এবং ট্রলিগুলোকে শহরে প্রবেশ করা আটকাতে দিল্লিতে যাওয়ার মূল রাস্তাগুলোতে কংক্রিট ব্লক এবং রাস্তায় পেরেক লাগানো হয়েছে। সেখানে ১২ মার্চ পর্যন্ত যেকোন বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে আন্দোলনকারী কৃষকরা জানিয়েছেন, তারা আরেকটি অবরোধের মতো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সাল কৃষি আইন প্রণয়ন করেছিল মোদি সরকার। একই বছরের নভেম্বর মাস কৃষি আইন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ভারতের কৃষকরা। প্রায় এক বছর ধরে দিল্লিতে কৃষকদের অবস্থান, প্রতিবাদ কর্মসূচী এবং ৭ শতাধিক কৃষকের মৃত্যুবরণের পর ২০২১ সালের নভেম্বরে বিতর্কিত ওই কৃষি আইন বাতিল করে সরকার। ওই সময় কৃষক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করে।
আন্দোলনের সময় নতুন কৃষি আইন বাতিলসহ ৩টি দাবি জানিয়েছিলেন কৃষকরা: ফসলের ন্যূনতম ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি, কৃষি ঋণের শর্ত সহজ করা ও সুদ মওকুফ এবং স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন। কৃষকদের অভিযোগ, ২ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।