ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির শীর্ষ পদ নিয়ে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পিটিআই নেতা শের আফজাল মারওয়াত শুক্রবার দাবি করেছেন যে দক্ষতা সন্তোষজনক না হওয়ায় ব্যারিস্টার গওহর আলি খানকে পার্টির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
গওহর আলি দলের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যারিস্টার আলি জাফরকে মনোনীত করার এক দিন পর এই দাবি উত্থাপিত হলো। তবে আলি জাফর বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি দলের চেয়ারম্যান পদটি গ্রহণ করবেন কিনা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
গওহর আলি ঘোষণা করেছিলেন যে ৩ মার্চ আন্তঃদলীয় বৈঠকে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
জিও নিউজের সাথে আলাপকালে মারওয়াত বলেছেন, ‘অপটুতা এবং বাজে পারফরমেন্সের কারণে গওহরকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার গওহর ভদ্রলোক। তবে তার দক্ষতা সন্তোষজনক নয়, বিশেষ করে জালিয়াতপূর্ণ ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গওহর আলি দলের এবং এর কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তিনি সার্বক্ষণিক সময় দেবেন। কিন্তু তা হয়নি।
এ ব্যাপারে গওহর আলির বক্তব্য শোনার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে জিও নিউজের ‘নয়া পাকিস্তান’ শোয়ে ব্যারিস্টার আলি জাফর বলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে মনোনয়নের ঘোষণাটি সময়ের আগেই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গওহর খুবই ভালোভাবে কাজ চালাচ্ছিলেন। তারই দলের প্রধান হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চেয়ারম্যান পদ নিয়ে আলোচনা করব। আমি এখন পিটিআইয়ের মামলাগুলো নিয়ে খুবই ব্যস্ত। চেয়ারম্যান পদের জন্য অনেক সময় দরকার। দলীয় প্রধানের মনোনয়নের বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, তিনি পিটিআইয়ের মামলাগুলো নিয়ে সময় দিতে চান।
তিনি জানান, আমি যদি পার্টির চেয়ারম্যান হতে না চাই, তবে গওহর আলি চেয়ারম্যান পদে থেকে যাবেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ইমরান খানের সাথে সাক্ষাতের পর রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের বাইরে সাংবাদিকদের গওহার বলেন, ‘এবার পার্টির চেয়ারম্যান পদে আমাদের প্রার্থী হচ্ছেন ব্যারিস্টার আলী জাফর এবং মহাসচিব হচ্ছেন ওমর আইয়ুব।’
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) দলটির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সাম্প্রতিক নির্বাচনে তাদেরকে কোনো প্রতীক দেয়নি। ইসিপি জানায়, দলটির নিজস্ব গঠনতন্ত্র এবং নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তাদের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হয়নি। ফলে দলটি শীর্ষ পদগুলোতে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি।
পেশোয়ার হাই কোর্ট পিটিআইকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও সুপ্রিম কোর্ট ডিসেম্বরে দলটির প্রতীক কেড়ে নেয়। এটি দলটির জন্য বড় আঘাত ছিল। এ কারণে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে নির্বাচনে তারা সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করে। নির্বাচনের পর সংরক্ষিত আসনগুলো লাভ করার জন্য এসব নির্বাচিত এমপি সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে (এসআইসি) যোগ দেয়। তবে এতে কাজ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পিটিআইয়ের নতুন দলীয় নির্বাচন হবে ৩ মার্চ। গওহর নির্বাচনের কথা জানিয়ে বলেন, পার্টির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে জাফরকে বিজয়ী করতে প্রত্যেকে তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
চলতি মাসের প্রথম দিকে পিটিআএয়র মুখপাত্র রউফ হাসান ঘোষণা করেন যে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দলের আন্তঃনির্বাচন চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক কমিটি নির্বাচন করা হবে। কিন্তু ওই নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
পিটিআইয়ের নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, আন্তঃপার্টি নির্বাচন করতে আগ্রহীরা ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। বাছাই হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে প্রায় ৯০টি পার্লামেন্টারি আসন, পাঞ্জাব প্রদেশে শতাধিক আসন লাভ করে। এছাড়া খাইবার পাকতুনখাওয়া প্রদেশে তারা বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ৭০টি নারী ও সংখ্যালঘু আসন নিশ্চিত করার জন্য তারা কেন্দ্র, পাঞ্জাব, খাইবার পাকতুনখাওয়া প্রদেশে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগ দেয়ার কথা ঘোষণা করে।