• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধে জাতিসঙ্ঘে প্রস্তাব বিবেচনায়

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
সংগৃহীত

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে আগামী এক বছরের মধ্যে ইসরাইলের ‘অবৈধ উপস্থিতি’ বন্ধ এবং দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিস্তিন। এই প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।

বুধবার এই প্রস্তাব ১৯৩ সদস্যের এসেম্বলিতে ভোটের জন্য উত্থাপন করা হবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকী নিকটে আসতে থাকায় এবং পশ্চিম তীরে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দিচ্ছে জাতিসঙ্ঘ।

এদিকে সদস্য দেশগুলোকে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, এটি ‘কূটনৈতিক সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ইসরাইলকে ধ্বংস করার চেষ্টা’ ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রস্তাব ‘সত্যকে উপেক্ষা করে, ঘটনাকে বিকৃত করে এবং বাস্তবতার বদলে কল্পকাহিনী তুলে ধরেছে।’

ড্যানন আরো বলেন, ‘হামাস ৭ অক্টোবর যে ধর্ষণ ও গণহত্যা চালিয়েছে তার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাবের পরিবর্তে, আমরা এখানে জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনিদের সার্কাস দেখতে জড়ো হয়েছি, যে সার্কাসে মন্দকে ন্যায়সঙ্গত, যুদ্ধকে শান্তি, হত্যাকারীকে নির্দোষ এবং সন্ত্রাসের প্রশংসা করা হয়।’

জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, এই প্রস্তাব এ অঞ্চলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না বরং পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। শান্তি ও অগ্রগতির আশাকে বিলম্বিত করবে।

সাধারণ পরিষদে গৃহীত হলেও প্রস্তাবটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে না। তবে এর সমর্থন বিশ্ববাসী কী চায় সেই জনমত প্রকাশ করবে। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের মতো এই পরিষদে কোনো ভেটো নেই।

এর আগে গত জুলাইয়ে জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ আদালত এক রায়ে বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের উপস্থিতি অবৈধ এবং অবশ্যই এর অবসান ঘটাতে হবে।

১৯৬৭ সালে যুদ্ধের সময় দখল করা জমির ওপর ইসরাইলের শাসনের ব্যাপক নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত বলেন, এই এলাকাগুলোর ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের কোনো অধিকার নেই। বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরাইল।

ফিলিস্তিনিরা ‘অস্তিত্বের হুমকির’ মুখোমুখি উল্লেখ করে সাধারণ পরিষদের বৈঠকের শুরুতে জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ইসরাইল তাদের ‘শেকলে’ বদ্ধ করে রেখেছে। ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান এবং ফিলিস্তিনিদের ‘মর্যাদা, শান্তি ও নিরাপত্তার’ সাথে নিজেদের পূর্বপুরুষের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘যারা মনে করে ফিলিস্তিনি জনগণ দাসত্বের জীবন, বর্ণবাদের জীবন মেনে নেবে, তারাই বাস্তববাদী নয়। ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান ছাড়া আমাদের অঞ্চলে শান্তি সম্ভব বলে যারা দাবি করে, তারা বাস্তববাদী নয়।’

প্রস্তাবে ইসরাইলকে তার সেনা প্রত্যাহার, অবিলম্বে নতুন সব বসতি নির্মাণ বন্ধ এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সব বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

এছাড়াও ইসরাইলকে তার দখলদারিত্বের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

ইসরাইলের সাথে সম্পৃক্ত বাণিজ্য বা বিনিয়োগ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে এবং ‘বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতাসহ’ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবটি প্রসঙ্গে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস বলেন, প্রস্তাবে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে। এটি আইসিজের নিয়মনীতির সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। এছাড়াও গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন’ এবং ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের বিষয়টি এই প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য বাস্তব সুফল বয়ে আনবে না বলে আমরা মনে করছি। এটি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। সঙ্ঘাত অবসানে যেসব চেষ্টা চলছে সেগুলো জটিল করে তুলতে পারে। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলোকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আমি মনে করি।’

রিয়াদ মনসুর বলেন, প্রাথমিক খসড়ায় ছয় মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর দাবি জানানো হলেও কিছু দেশের উদ্বেগের কারণে সময় বাড়িয়ে এক বছরের কথা বলা হয়েছে।

মনসুর আরো বলেন, এই প্রস্তাবটির লক্ষ্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় পাওয়া যদিও তা আইনত বাধ্যতামূলক নয়।

ইসরাইল এই প্রস্তাবে গুরুত্ব নাও দিতে পারে মনে করছেন মনসুর। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিরা তখন আরেকটি প্রস্তাব জমা দেবে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুসালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরাইল। ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য এই তিনটি ভূমিই চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই তিনটি এলাকাকেই দখলকৃত ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
সূত্র : এএফপি ও রয়টার্স


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ