পিএসজির বিপক্ষে বতাফোগোর দারুণ জয়ের বিস্ময়ের রেশ মিলিয়ে যায়নি এখনও। এর মধ্যেই আরেকটি চমক নিয়ে হাজির ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এটিও উপহার দিল ব্রাজিলের আরেকটি ক্লাব। চেলসিকে স্তব্ধ করে পেছন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্মরণীয় জয়ে নিজেদের রাঙাল ফ্ল্যামেঙ্গা।
গতপরশু রাতে ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে চেলসি ম্যাচের শুরুর দিকে এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ইংলিশ ক্লাবটিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেয় ফ্ল্যামেঙ্গো। টানা দুই জয়ে ফ্ল্যামেঙ্গো এখন এই গ্রুপের শীর্ষে। নক আউট পর্বও নিশ্চিত হলো তাদের। ক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর বিস্ময়যাত্রাও রইল অব্যাহত। আসরের ৩২ দলের মধ্যে ব্রাজিলের ক্লাব চারটি। কোনোটিই এখনও হারের স্বাদই পায়নি!
ফিলাডেলফিয়ার লিঙ্কন ফিন্যান্সিয়াল ফিল্ডে ম্যাচের শুরুতে চেলসিকে চেপে ধরে ফ্ল্যামেঙ্গো। অল্প সময়ের মধ্যেই তিন দফায় চেলসিকে রক্ষা করেন গোলকিপার রবের্ত সানচেস। তবে প্রথম গোল পেয়ে যায় চেলসি। ত্রয়োদশ মিনিটে ফ্ল্যামেঙ্গোর রক্ষণভাগের ভুলে বল পেয়ে যান ফাঁকায় থাকা পেদ্রো নেতো। ফায়দা নিতে ভুল করেননি পর্তুগিজ উইঙ্গার। গোলের পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও বদলে যায়। গুছিয়ে উঠে বেশ কয়েকবার আক্রমণ চালায় চেলসি। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ান ফ্ল্যামেঙ্গোর আর্জেন্টাইন গোলকিপার আগুস্তিন রসি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল ফ্ল্যামেঙ্গোও। জেহসনের ভলি গোলে ঢোকার মুখে লাইন থেকে রক্ষা করেন চেলসির এন্সো ফের্নান্দেস।
বিরতির পর ফ্ল্যামেঙ্গো গোছানো ফুটবল খেলে চাপে ফেলে দেয় চেলসিকে। ফলও পায় তারা। ৬২তম মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরান বদলি নামা অভিজ্ঞ উইঙ্গার ব্রুনো এনহিকে। তিন মিনিট পরই চেলসিকে হতভম্ব করে এগিয়ে যায় ব্রাজিলের ক্লাবটি। কর্নার থেকে এনহিকের মাথা ছুঁয়ে আসা বল জালে জড়ান দানিলো।
পোর্তো, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি ও জুভেন্টসের মতো ক্লাবে খেলে আসা অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার গত জানুয়ারিতে ফিরেছেন নিজ দেশের ফুটবলে। পিছিয়ে পড়ার মিনিট তিনেক পর আরেকটি বড় ধাক্কা খায় চেলসি। বদলি হিসেবে মাঠে নামার মিনিট চারেকের মধ্যেই লাল কার্ড দেখেনে নিকোলাস জ্যাকসন। ৮৩তম মিনিটে ওয়ালাসে ইয়ানের গোল আবার উল্লাসে ভাসায় ফ্ল্যামেঙ্গোকে। একটু পর মেতে ওঠে তারা জয়ের উৎসবে।
এদিকে, অভিযান শুরুর ম্যাচে রেকর্ড ব্যবধানে জয়ের পর, দ্বিতীয় ম্যাচে কিছুটা পরীক্ষার মুখে পড়ল বায়ার্ন মিউনিখ। তবে তাদের জয়রথে বাধা হতে পারল না বোকা জুনিয়র্স। টানা দ্বিতীয় জয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠল জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। ফ্লোরিডায় হার্ড রক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় গতকাল সকালের ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে বায়ার্ন। প্রথম ম্যাচে তারা ‘অ্যামেচার দল’ নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটিকে ১০-০ গোলে বিধ্বস্ত করে। ক্লাব বিশ্বকাপের পুরোনো ও নতুন সংস্করণ মিলিয়ে এত বড় ব্যবধানে আগে জিততে পারেনি কোনো দল।
আর্জেন্টিনার ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের বিপক্ষেও শুরুর দিকে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। অষ্টাদশ মিনিটে কিংসলে কোমানের পাস পেয়ে গোলটি করেন হ্যারি কেইন। ৬৬তম মিনিটে সমতা টেনে অঘটনের সম্ভাবনা জাগান উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড মিগেল মেরেন্তিয়েল। ম্যাচে ৭০ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে, আক্রমণেও আধিপত্য করে তেমন কিছু হতে দেয়নি বায়ার্ন। ৮৪তম মিনিটে কেইনের বাড়ানো বল ধরে ব্যবধান গড়ে দেন মাইকেল ওলিসে। প্রথম ম্যাচেও দুটি গোল করেছিলেন এই ফরাসি মিডফিল্ডার।
দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষে বায়ার্ন। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বেনফিকা, পরের ধাপে ওঠার জোরাল সম্ভাবনা আছে তাদের। ১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে বোকা জুনিয়র্স। শেষ ষোলোয় ওঠার সম্ভাবনা আছে তাদেরও, তবে শেষ রাউন্ডে বড় জয়ের পাশাপাশি প্রার্থনা করতে হবে বায়ার্নের বিপক্ষে বেনফিকা যেন হারে। আগামী মঙ্গলবার একই সময়ে মাঠে গড়াবে ম্যাচ দুটি।