• রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০১:১৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
নিজ দলের কর্মীদের হামলার শিকার মির্জা ফখরুলের ভাই ফেনীতে পানি কমতে শুরু করায় ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ইরানকে পরমাণু ইস্যুতে নতুন প্রস্তাব পুতিনের, যে সিদ্ধান্ত নিল তেহরান ব্রিটিশ ৬০ এমপির ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা: আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আসামির। এবার ‘৫ কোটি টাকা’ দাবিতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-গুলি রাস্তায় অভিনেত্রী যৌন হেনস্তা শিকার সারাদেশে চাঁদাবাজ ও আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা হচ্ছে: আইজিপি শ্রীপুরে নির্যাতিত নেতা কর্মীদের সংবর্ধনা ও মিলন মেলা অনুষ্ঠিত গাবতলীতে জিয়া পরিষদ নেতা ছানার বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ

বাংলাদেশী আমের কদর বাড়ছে বিশ্ববাজারে

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

রফতানির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফল মেলা। প্রায় ১০০ টন আম মেলা উপলক্ষে দেশটিতে যাওয়ার কথা।

চাষিরা সরাসরি রফতানিতে যুক্ত হচ্ছেন

এখন পর্যন্ত ১১০০ টন আম রফতানি, সবচেয়ে বেশি গেছে যুক্তরাজ্যে ৩২৫ টন
ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যোর দেশগুলোতে ক্রমাগত চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশের আম্রপালি, হিমসাগর, বারি ৪, ব্যানানা ম্যাংগোসহ নানা জাতের আমের। এর বাইরে যুক্ত হয়েছে বড় দেশ চীন। রফতানির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফল মেলা। প্রায় ১০০ টন আম মেলা উপলক্ষে দেশটিতে যাওয়ার কথা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ১০০ টন আম রফতানি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গেছে যুক্তরাজ্যে, ৩২৫ টন। তিনি জানান, ২০২৩ সালে রেকর্ড তিন হাজার ১০০ টন আম রফতানি হয়েছে। চলতি বছর চার হাজার টন আম রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।

কৃষির ছোট প্রকল্পে বড় সাফল্য

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ৩২টি প্রকল্প চলমান। সাত হাজার কোটি টাকার পার্টনার সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

দ্বিতীয় সর্বনিম্ন বাজেটের প্রকল্প রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প। প্রকল্পের বরাদ্দ ৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে ২০২৭ সালের জুনে। স্বল্প বাজেটের এই প্রকল্পটি বর্তমানে আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য আমকে রফতানিযোগ্য পণ্যে রূপান্তরে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। চাষিকে গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস বা গ্যাপ মেনে মানসম্পন্ন আম উৎপাদনে প্রশিক্ষণসহ নানা সহায়তা করছে। ডিএইর ৩২টি চলমান প্রকল্পের মধ্যে বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হলেও বড় সাফল্য দৃশ্যমান।

বাংলাদেশে আম চাষ বহু পুরনো চর্চা। গ্রীষ্মকালের শুরুর ফলটি এত দিন মূলত দেশের বাজারেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই প্রকল্পের হাত ধরে এখন সেই আমই পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াসহ বিশ্বের ৩৬-৩৮টি দেশে।

বিশ্ববাজারে ‘ক্ষীরসাপাত’, ‘গোপালভোগ’, ‘ফজলি’, ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ ও ‘আম্রপালি’র মতো দেশী জাতের আমের কদর বাড়ছে। পাশাপাশি হিমসাগর, ব্যানানা ম্যাংগো, বারি ৪ সহ আরো অনেক জাতের আম রফতানি হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে দুই হাজার ৭৬০টির বেশি উত্তম কৃষি চর্চা (জিএপি) ভিত্তিক আম প্রদর্শনী প্লট। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি আমচাষি, রফতানিকারক, পরিবহনকারী ও বাজারজাতকারীদের। ইউরোপীয় মান অনুসারে চাষ, প্যাকিং ও রফতানির উপযোগী আম চাষ শেখানো হচ্ছে চাষিদের। শুধু প্রশিক্ষণ নয়, কৃষকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে হ্যান্ড স্প্রেয়ার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, গার্ডেন টিলার, ম্যাংগো প্লাকারসহ নানা আধুনিক কৃষিযন্ত্র।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার মাঠে এখন নিয়ম মেনে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে রোপণ হচ্ছে আমগাছ। চাষিরা এখন জানেন, কখন আম তুললে মান ভালো থাকে, তা রফতানিযোগ্য হয়, কতটুকু পাকলে তা ইউরোপে রফতানির উপযুক্ত হয়।

এই প্রকল্পের অনন্য একদিক হলো- নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ। গ্রেডিং, প্যাকিং, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে শুধু উৎপাদন নয়, কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে।

প্রকল্পের অধীনে তৈরি হচ্ছে আম প্রক্রিয়াজাতকরণের ছোট প্ল্যান্ট, ওয়াশিং-গ্রেডিং-কুলিং শেড এবং অনলাইনভিত্তিক বাজার সংযোগ প্ল্যাটফর্ম। রফতানির পাশাপাশি দেশের সুপারশপ ও পাঁচতারকা হোটেলেও মানসম্পন্ন এই আম সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ আরো বড় পরিসরে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকারের।

চাষিরাই রফতানিকারক হচ্ছেন

নওগাঁর সাপাহারের আলোচিত আমচাষি সোহেল রানা। শুধু গ্যাপ মেনে আম চাষ করেই বসে নেই, নিজেই বিদেশে রফতানি করছেন। গত ২৫ জুলাই কাতারের দোহায় শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী ফল মেলায় তিনি নিজের বাগানের আম নিয়ে হাজির হয়েছেন।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আমচাষি মো: মাফুল বাবু বলেন, আমরা আগে জানতাম না রফতানির জন্য আলাদা মানদণ্ড আছে। এখন জানি এবং সে অনুযায়ী আম চাষ করছি।

তিনি জানান, ৫২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আম চাষ করেছি। তার বেশির ভাগই আম্রপালি জাতের আম। গত বছর এক কোটি চার লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এবার আমের ফলন ভালো, তবে দাম কিছুটা কম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার আমচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে তার প্রতিষ্ঠান ফার্মি এগ্রো নানাজাতের আম চাষ করেছেন। তিনি জানান, গত তিন বছর হলো রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাপ ফলো করে আম উৎপাদন করছি। গ্যাপ প্রযুক্তি ফলো করে আম চাষে খরচ বেশি হয়। তবে নিরাপদ আম উৎপন্ন হয়। কোয়ালিটি আম পাওয়া যায়, যা বিদেশে রফতানি হয়।

তিনি জানান, আমাদের উৎপন্ন মানসম্পন্ন আম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। আমি নিজেও ইউরোপে আম রফতানি করছি। ২০২৩ সালে ১৩ দেশে প্রায় ৪০ টন আম রফতানি করেছি। এ বছর ইতোমধ্যে সুইডেনে পাঁচ টন আম রফতানি করেছি। পর্যায়ক্রমে যাচ্ছে।

আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন ফলবাগান ঘুরে জানা যায়, দেশে ক্রমাগতভাবে মানসম্পন্ন রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়ছে। আমচাষে শিক্ষিত যুবকরা যুক্ত হওয়ায় নিজেরাই হয়ে উঠছেন রফতানিকারক।

রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা মাঠে থেকে কৃষকদের পাশে আছি। তাদের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করছি।’ আম রফতানিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আম রফতানির ক্ষেত্রে দু-তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিমান ভাড়া যদি স্থিতিশীল থাকে ও বিমানের যদি সঙ্কট না হয়, তা হলে আরো বড় পরিসরে আম রফতানি করা যাবে। এ বিষয়টি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ