হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। আর এই মাসের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য গুরুত্ববাহী দিন। মহানবী (স.) এই দিনে রোজা পালন করতেন এবং সাহাবিদেরকেও রাখতে উৎসাহিত করতেন। আশুরার রোজার মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে সহিহ হাদিসগুলোতে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়।
আশুরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
রাসুলুল্লাহ (স.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন তিনি দেখতে পান যে ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। তিনি তাদের কাছে এর কারণ জানতে চান। তারা বলেন- هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى ‘এটি একটি কল্যাণময় দিন। এই দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রু থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তাই মুসা (আ.) রোজা রেখেছিলেন।’ (সহিহ বুখারি: ২০০৪)
এই কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ ‘আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক নিকটবর্তী’। অতঃপর তিনি নিজেও রোজা রাখলেন এবং সাহাবিদেরও রোজা রাখার আদেশ দিলেন। (সহিহ বুখারি: ২০০৪, সহিহ মুসলিম: ১১৩০)
ফরজ না হলেও বিশেষ গুরুত্ব
আশুরার রোজা প্রথম দিকে ফরজ ছিল। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা ঐচ্ছিক (নফল) করা হয়। এতে রোজার গুরুত্ব কমেনি। হাদিসে আশুরার রোজাকে একটি বিশাল ফজিলতের রোজা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ‘আমি আশা করি, আশুরার রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
নবীজির কাছে আশুরার রোজার গুরুত্ব সর্বাধিক
ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে আশুরা ও রমজানের রোজার চেয়ে অন্যকোনো রোজাকে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখিনি।’ (বুখারি: ২০০৬)
আশুরার রোজার বিশেষত্ব: ইহুদি থেকে পার্থক্য করার নির্দেশ
রাসুলুল্লাহ (স.) পরবর্তীতে আশুরার দিনের সঙ্গে আরও একটি দিন (৯ বা ১১ মহররম) যুক্ত করে দুটি রোজা রাখতে বলেন, যাতে মুসলমানরা ইহুদিদের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিল না রাখে। তিনি বলেন- ‘যদি আমি আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তবে ৯ তারিখেও রোজা রাখব ইনশাআল্লাহ।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৩৪)
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, আশুরার সঙ্গে ৯ অথবা ১১ তারিখের রোজা রাখা উত্তম।
আশুরার রোজা শুধুমাত্র অতীতের একটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণ নয়, বরং এটি নৈতিক শিক্ষা, ধৈর্য, তাওবা এবং তাকওয়ার অনুশীলনের একটি মহৎ উপলক্ষ। নবীজি (স.) যে গুরুত্ব দিয়ে এই রোজাকে গ্রহণ করেছেন, তা আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এ দিনে রোজা রাখা যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম, তেমনি এটি আমাদের ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রেও একটি চমৎকার সুযোগ। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।