গাইবান্ধা প্রতিনিধি:- গাইবান্ধায় দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার শিক্ষক/শিক্ষিকার বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতি প্রমান সনাক্তের দীর্ঘ আড়াই বছরেও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি! ফলে তারা বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। প্রকাশ, গত ২৪/০১/২০২৩ তারিখে জনৈক সাংবাদিক কর্তৃক গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর উত্তরপাড়া কমিউনিটি বিদ্যালয়ে (বর্তমানে সরকারি করণ) কর্মরত শিক্ষক যথাক্রমে ফরহাদ হোসেন, জান্নাতুল ফেরদৌসী ও বৌলেরপাড়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (বর্তমানে সরকারি করণ) কর্মরত সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ সাথী আক্তার ও শাহানারা খাতুনসহ ৪ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ এনে গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেন।
এদিকে, ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক গত ১৪/০২/২০২৩ ইং তারিখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। তদন্ত প্রতিবেদন মতে জানা যায়, গাইবান্ধা সদরের সাহাপাড়া ইউনিয়নের বৌলেরপাড়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বর্তমানে বৌলেরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ২৪/০১/২০২৩ ইং তারিখে বিষ্ণুপুর উত্তরপাড়া কমিউনিটি বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক যথাক্রমে ফরহাদ হোসেন, জান্নাতুল ফেরদৌস ও বৌলেরপাড়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক মোছাঃ সাথী আক্তার ও শাহানারা খাতুন সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করা হয়। তদন্তে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার বানিয়ারজান গ্রামের মোছাঃ সাথী আক্তার, যার পোষ্টঃ গাইবান্ধা।
সহকারী শিক্ষক। সার্ভিস বুক মোতাবেক যোগদান করেন ০২/০২/২০০৮ ইং তারিখে। তার দেয়া তথ্য ছকে দেখা যায়, স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সদর গাইবান্ধার স্বাক্ষর এবং সীল এলোমেলো এবং একই বাক্তির দ্বৈত স্বাক্ষর দেখা যায়। যা অফিসিয়ালী হওয়ার কথা নয়, স্বাক্ষর সমূহ যাচাই এর জন্য কর্মকর্তাদের পত্র দিয়ে স্বাক্ষর নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। মোছাঃ শাহানারা খাতুনের দেয়া তথ্য ছকে দেখা যায়, তিনি সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে গত ০৩/০২/২০০৮ যোগদান করেন। সার্ভিস বুক মোতাবেক তার ঠিকানাঃ গ্রামঃ ডুমুরগাছা, পোষ্টঃ নাকাইহাট, উপজেলাঃ গোবিন্দগঞ্জ, জেলাঃ গাইবান্ধা। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে গাইবান্ধা সদর উপজেলার প্রার্থী চাওয়া হয়। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি নিয়োগ বিধির শর্ত ভঙ্গ করে নিয়োগ পেয়েছেন।
উভয় শিক্ষক ৩ তারিখ বা ০২/০২/২০০৮ তারিখে যোগদান করে বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জেপ্রাশিঅ/গাই/সংযুক্তি/২০১৫/৯১৯/১২ তারিখ: ০৪/০৩/২০১৫ মোতাবেক উক্ত বিদ্যালয়ে মোঃ আব্দুল ওয়াহাব, সহকারী শিক্ষক, কাশদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সংযুক্তি দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্য ছকেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী কমিশনার ভুমি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদর, গাইবান্ধার স্বাক্ষরের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। স্বাক্ষরসমূহ যাচাই এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পত্র দিয়ে সাক্ষর নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। তদুপরি যদি উভয় শিক্ষক ৩ তারিখ বা ০২/০২/২০০৮ তারিখে যোগদান করে বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছে বটে তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জেপ্রাশিঅ/গাই/সংযুক্তি/২০১৫/৯১৯/১২ তারিখ: ০৪/০৩/২০১৫ মোতাবেক উক্ত বিদ্যালয়ে মোঃ আব্দুল ওয়াহাব, সহকারী শিক্ষক, কাশদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সংযুক্তি দেয়ার বিষয়টি সচেতন জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধা সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসার, মোঃ জব্বার ৫৪৭ নং স্মারক, তারিখ ৫/৮/২০১৩ মোতাবেক পূর্ব বেড়াডাঙ্গা কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষিকার এমপিও ভুক্তির জন্য যে তথ্য প্রেরণ করেন সেই স্বাক্ষরের তথ্য ফরমেও স্বাক্ষরের কোন মিল নেই। বৌলেরপাড়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরীরত দুইজন শিক্ষক যথাক্রমে মোছাঃ সাথী আক্তার ও মোছাঃ শাহানারা খাতুনের তথ্য ফরমের সঠিকতা যাচাই করা প্রয়োজন এবং তথ্য ফরমটি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, তথ্য ফরমটিতে এলো মেলো ভাবে স্বাক্ষর করা ও সীল লাগানো। তাই তথ্য ফরমের সঠিকতা ও স্বাক্ষরের সঠিকতা যাচাই করা প্রয়োজন।
সুতরাং ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই করে ওই চার শিক্ষক/শিক্ষিকার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির বিষয়ে তদন্তে সুনির্দিষ্ট ভাবে সনাক্ত হয়েছে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের কমপক্ষে আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে অদ্যাবধি ওই অভিযুক্ত ৪ শিক্ষক/শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে তারা বহাল তবিয়তে চাকরি করছে! তাই এলাকার সচেতন মহল জরুরি ভিত্তিতে উল্লেখিত অভিযুক্ত ৪ শিক্ষক/ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।