খন্দকার নজরুল ইসলাম সোহেল: একজন ছাত্রনেতা, যার পরিচয় রাজনীতির ময়দানে সৎ আর সাহসী হিসেবেই বেশি পরিচিত—সে কিনা জড়িয়ে পড়েছে চোরাই মাল ক্রয়ের অভিযোগে! লুট হওয়া এক মোটরসাইকেল নিজের করে নিতে গিয়ে এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে তার পুরো রাজনৈতিক পরিচয়। ঘটনার পর স্থানীয় মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। ছাত্র রাজনীতি কি তবে অপরাধীর আড়াল হয়ে উঠছে!?
আদনান রহমান রিয়াদ! ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি। তিনি রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাত্রদলের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে এমনটাই উঠে এসেছে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে।
গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় লুট হওয়া একটি হোন্ডা ব্রান্ডের মোটরসাইকেল তিনি ছিনতাইকারীদের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্রয় করেন। লুট হওয়া বাইকটি নিয়ে আদনান খুব দাপটের সাথেই চলাফেরা করছে এলাকায়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তরুণ এই ছাত্রদল নেতা এতটাই বেপরোয়া যে তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। কথায় কথায় বলে “আমি উপরের বড় নেতাদের ম্যানেজ করেই চলি, এরকম আরও দশটা চুরির বাইক যদি চালাই তবুও আমার কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। এমনকি প্রশাসন জানলেও আমার কিচ্ছু হবে না”। একজন সামান্য ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হয়ে এত ক্ষমতা পায় কোথায় এই ছাত্রদল নেতা!? তার এই রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের খুটির জোর কোথায়!? এমনটাই প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় জনমনে।
প্রসঙ্গত, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দেউলা ইউনিয়ন সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আদনান রিয়াদ ছাত্রদল রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন উপজেলায় পাওয়ার হাউজে কর্মরত আছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে উক্ত বিষয় নিয়ে আদনান রহমান রিয়াদের সাথে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের করজোড়ে অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের “ম্যানেজ” না করতে পেরে তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ান এই ছাত্রদল নেতা। শুধু তাই নয় তথাকথিত এই ছাত্রদল নেতা তিনি সাংবাদিকদের“দেখে নেওয়ার”হুমকিও দেন।
এখানেই শেষ নয়— ছাত্রদল নেতা রিয়াদ দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাছে পাঠিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে একপর্যায়ে টাকার প্রস্তাব দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টাও করেন!
স্থানীয় সাংবাদিক মহল এই ঘটনাকে গভীরভাবে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে এবং বিষয়টির দ্রুত যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা কামনা করছে।
দেউলা ইউনিয়নের ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আদনান রহমান রিয়াদের এরকম প্রশ্নবিদ্ধ কাণ্ডে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে আদৌ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে জানতে বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ডেনিস চৌধুরীকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেন নি।
সাম্প্রতিক এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে কেউ যদি এভাবে আইনের চোখ ফাঁকি দেয়, তাহলে তা সমাজের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে মত দিয়েছেন সচেতন মহল। আদনান রিয়াদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
অনুসন্ধানী পর্ব: ১, প্রতিবেদন চলমান থাকবে…