বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়িয়াছে। গেল বৃহস্পতিবারের ঘোষণা অনুযায়ী দাম ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হইয়াছে। গত ৯ বত্সরে অষ্টম বারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ান হইল। এমনিতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে স্বল্পআয়ের মানুষেরা দিশাহারা। তাহার উপর বিদ্যুত্ বিল বাবদ বাড়তি ব্যয় তাহাদের আরো বেশি ভোগান্তিতে ফেলিবে। কারণ, বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধি শুধু মাসিক বিলের ওপর চাপ দিবে—এমন নহে। ঘরে ব্যবহূত বিদ্যুতের বাহিরে বাণিজ্যিক ও শিল্পখাতেও বিদ্যুতের দাম বাড়ান হইয়াছে। যাহা পণ্য ও সেবামূল্য বাড়াইতে অগ্রণী ভূমিকা রাখিবে।
বিদ্যুত্ লইয়া সংকট নূতন কিছু নহে। সরকার দাম বাড়াইলেও বিদ্যুত্ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করিবার সকল চেষ্টা এখনো দেখা যায় নাই। গ্রামগঞ্জেও বিদ্যুতের লোডশেডিং তীব্র। শিল্পাঞ্চলগুলিতে বিদ্যুত্ লইয়া ভোগান্তির শেষ নাই। কোনো কোনো কারখানায় দিনে আট ঘণ্টা বিদ্যুত্ না থাকিবার ঘটনাও ঘটিয়াছে। বিদ্যুত্ এই আসে—এই যায়, এমন অবস্থার মধ্যে কলকারখানা চালাইয়া রাখা মুশকিল হইয়া পড়িয়াছে। অনেক নূতন উদ্যোক্তা কারখানা করিবার পর বিদ্যুত্ সংযোগের অভাবে কারখানা চালু করিতে পারেন নাই। অনেকে নির্বিঘ্ন সরবরাহ না থাকায় মানসম্মত পণ্যের উত্পাদন করিতে সক্ষম হইতেছেন না। এমতাবস্থায় ব্যবসা খারাপ হইয়াছে এবং ব্যবসায়ের টাকা শোধ দিতে না পারিয়া খেলাপি হইয়াছেন অনেক উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তাদের কথা কী নীতিনির্ধারকদের মাথায় রহিয়াছে? কেবলি দাম বাড়াইয়া ক্ষান্ত হইলে উন্নয়নের চাকা বেশিদূর ঘুরানো যাইবে না—এই সত্যটিও অনুধাবন করিতে হইবে।
আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প—সবখাতেই বিদ্যুতের দাম বাড়াইবার ফলে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত—সবার উপরেই ইহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িবে। অথচ এই সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াইবার যৌক্তিকতাও ছিল না। গণশুনানি করা হইলেও তাহাতে দাম কমাইবার পক্ষে যুক্তি তুলিয়াছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাবের দাবি, গণশুনানি করিয়া কী লাভ—যদি সরকার দাম বাড়াইবারই পক্ষে থাকে। আবার সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা মহোদয় এই দাম বৃদ্ধিকে মামুলি ব্যাপার বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন। তাহার ফল মানিয়া লওয়া যাইত যদি এই মূল্যবৃদ্ধি উত্পাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় না বাড়াইত। কেবল তাহাই নহে, ইহা রফতানি খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে। কমাইবে রফতানি সক্ষমতাও। যদি এমন হইত যে, বিদুতের মূল্যবৃদ্ধির সহিত বিদুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হইবে—তাহা হইলেও অন্তত এই মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক মূল্য থাকিত। সুতরাং বিদুতের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্লেষণ করিয়া তাহা যথাযথভাবে মোকাবিলা করিবার উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করিবে—ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।