• শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘ কারাভোগের পর মুক্তি পেলেন বিডিআর জওয়ানরা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে কারাগারে আটক ১৭৮ জন সাবেক বিডিআর জওয়ান জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন আজ। এরমধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন ১২৬ জন। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৬ জন কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হয়েছেন।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়া এই ১৭৮ আসামির জামিননামা গতকাল কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়। সেসব জামিননামা যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিরা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় জামিন পান গত ১৯ জানুয়ারি। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের (প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) বিচারক ইব্রাহীম মিয়া ওই জামিন আদেশ দেন। ওই আদেশের মধ্যে দিয়ে গত ১৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই আসামিরা জামিন পান।

আদেশের পরে মামলার চিফ প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন খান সাংবাদিকদের জানান, এভাবে জামিনের আদেশটা হয়েছে— যারা আগে খালাসপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রায় পরিবর্তন হয়েছে বা কারো বিরুদ্ধে আপিল পেন্ডিং আছে এবং বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় আলাদা ৩০ জনের মতো আসামি শুধুই বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার আসামি ছিলেন, তাদের ব্যতিরেকে অন্যান্য খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।

অর্থাৎ হত্যা মামলায় যে আসামিরা বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন তাদের জামিন দেন আদালত।

১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। সেদিন বিডিআরের কয়েক শ সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।

এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা যান। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেন।

২০১০ সালে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচার কাজও শুরু হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহিদ পরিবারের সদস্যরা।

এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয় সরকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ