বিভিন্ন দেশের আদলে বাংলাদেশের টেলিভিশন (টিভি) চ্যানেলগুলোতে প্রতি ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ মিনিট বিজ্ঞাপন প্রচার করার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ ‘জাতীয় সম্প্রচার কমিশন’ গঠনের অনুরোধ জানিয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স সভাপতিকে বিবাদী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বিবাদীদের বরাবর নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি নিজেই জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও নোটিশে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪’ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
নোটিশে আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, প্রতিটি রাষ্ট্রে টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারের একটি নীতিমালা অনুমোদিত আছে, যা দ্বারা সম্প্রচারের সময়সীমা অর্থাৎ অনুষ্ঠান, সংবাদ, নাটক, আলোচনা ইত্যাদির মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় বিজ্ঞাপনের জন্য সময় নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়সীমার সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। তাই চ্যানেলমালিকেরা প্রতিটি অনুষ্ঠানে যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষণই বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন।
তিনি বলেন, ফলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করার পরিবর্তে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ প্রতি ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা বাংলাদেশে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়নি।
নোটিশের শেষাংশে বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে টেলিভিশন চ্যানেলে প্রতি ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ মিনিট বিজ্ঞাপন প্রচার করার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ ‘জাতীয় সম্প্রচার কমিশন’ গঠনের অনুরোধ জানানো হলো। তা করতে ব্যর্থ হলে বিষয়টি জনস্বার্থ বিবেচনায় প্রতিকারের জন্য উপযুক্ত আদালতের আশ্রয় নেওয়া হবে।
২০১৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪’ অনুমোদন করে। ওই নীতিমালার ৪.৫.১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত চর্চা ও যৌক্তিক বিরতির সময়সীমা অনুসরণ করতে হবে।
নোটিশে বলা হয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কোনো চ্যানেলই সরকারের এই নীতিমালা অনুসরণ করে না। বরং নীতিমালাটির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যতক্ষণ খুশি ততক্ষণই বিজ্ঞাপন প্রচার করে এবং চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়সীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কোনো ভূমিকা বা পদক্ষেপ নেই। ফলে দর্শক-শ্রোতাদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে।
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার ৬.১.১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠিত হবে। ৬.১.৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, এ কমিশন সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান তথ্য ও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত মান সম্পর্কে জনগণের অভিযোগ গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।