বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জের ১১৪ নং এসপি বারইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি নির্মিত হইয়াছিল প্রায় শত বত্সর পূর্বে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে অর্ধশত বত্সর ধরিয়াই বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। অবস্থাদৃষ্টে ইতোপূর্বে ভবনটিকে পরিত্যক্তও ঘোষণা করা হইয়াছে। গত সোমবারের দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত বিদ্যালয়টির করুণ চিত্রদৃষ্টে যুগপত্ হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এমনকি ২০১১ সালে বিকল্প শ্রেণিকক্ষ হিসাবে একটি বেসরকারি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় নির্মিত তিন কক্ষবিশিষ্ট টিনের ঘরটিও সম্প্রতি ভাঙিয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে। অথচ স্থানীয় পর্যায়ে রীতিমতো উন্নয়নযজ্ঞ চলিতেছে গত কয়েক বত্সর যাবত্। এই দীর্ঘ সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এই ব্যাপারে কেন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করিলেন না তাহা আমাদের বোধগম্য নহে।
মোরেলগঞ্জ একটি উদাহরণ মাত্র। জানা যায়, সারা দেশে এমন জরাজীর্ণ আরো প্রায় ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় রহিয়াছে। অতএব, সরকারের যত সদিচ্ছাই থাকুক, জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত কয়েক হাজার বিদ্যালয় রাতারাতি সংস্কার কিংবা নূতন করিয়া নির্মাণ করা যে প্রায় অসম্ভব তাহা সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন। কেননা, একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়া ভবনগুলি মেরামত বা নূতন করিয়া নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু যখন এমন অভিযোগ শোনা যায় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বা বয়সের ভারে জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলি বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া পরিত্যক্ত হইয়া আছে এবং বারংবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কোনো প্রতিকার মিলিতেছে না, তখন উদ্বিগ্ন না হইয়া উপায় থাকে না। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা কার্যক্রমকে সর্বতোভাবে বাধামুক্ত রাখা যাহাদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য তাহারা যদি তাহাদের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য বা উদাসীনতা প্রদর্শন করেন—তাহা হইলে অবধারিতভাবে দায়িত্বটি বর্তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর। আমরা বিশ্বাস করি যে, জনপ্রতিনিধিরা তাহাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিলে বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া কোনো বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকিতে পারে না।
ইহা সুবিদিত যে, শিক্ষার প্রতি বর্তমান সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়া আসিতেছেন। ফলে প্রাথমিকে বর্তমানে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি পাইয়া প্রায় ৯৮ শতাংশে পৌঁছাইয়াছে। কিন্তু অনুকূল পরিবেশে পাঠদানের নিমিত্তে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা না হইলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরিয়া রাখা কঠিন হইয়া পড়া খুবই স্বাভাবিক। সংস্কার কিংবা নূতন করিয়া বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ উভয়ই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহল ইচ্ছা করিলে এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা দ্রুততর করিতে পারেন বৈকি। কিন্তু সেই আশায় শিক্ষা কার্যক্রম যেমন বন্ধ রাখা যাইবে না, তেমনি শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মুখে ঠেলিয়া দেওয়াও কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নহে। এই ক্ষেত্রে নূতন বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক বরাদ্দ দিয়া প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয় ভবনগুলির জরাজীর্ণতা দূর করা যাইতে পারে। আর যেখানে বিদ্যালয় ভবন একেবারেই ব্যবহার-অনুপযোগী হইয়া পড়িয়াছে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।