• মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন

শর্ত পূরণ ও কঠিন নিবন্ধন পরীক্ষায় নতুন দল এনসিপি

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ৩ মার্চ, ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে যারা ছিলেন, তারা এরইমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ নামের দলটি আত্মপ্রকাশ করেছে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

এরপর থেকেই নতুন এ দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। আগামী নির্বাচনের আগে বিদ্যমান আইনে নতুন দলটির নিবন্ধন সম্ভব, না কি নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা হবে, তা নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন।

বলা হচ্ছে, নিবন্ধন পেতে প্রধান তিন শর্তের প্রথম দু’টি পূরণ করা নতুন দলটির নাগালের বাইরে। কেননা, দলটি আগে কোনো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং কোনো আসনে জয়লাভ করেনি বা ন্যূনতম ভোটও পায়নি। এক্ষেত্রে কেবল একটি পথ খোলা। সেটি হলো নির্দিষ্ট কার্যালয়সহ কমিটি গঠন ও সমর্থক জোগাড় করা। তবে অক্টোবরে তফসিল হলে আট মাসে সেটাও কতটুকু সম্ভব সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

এদিকে নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আইনি দিক নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ আসে কি-না, সে অপেক্ষা করতে চায় সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। ঐক্যমত কমিশনেও বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসবে সে দিকেই যাবে কমিশন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশে বলেছে, নতুন দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের লক্ষ্যে বিদ্যমান এক তৃতীয়াংশ জেলা কমিটির পরিবর্তে ১০ শতাংশ জেলা এবং ১০০ উপজেলার পরিবর্তে ৫ শতাংশ উপজেলা/থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার বিধান করতে হবে।

একই রকম দাবি বিভিন্ন দল থেকেও করা হয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এ বিষয়ে বলেন, আমরা মনে করি, পুরো নিবন্ধন বিধিমালাই পরিবর্তন করা দরকার। কারণ দল নিবন্ধনের যে আইন ও বিধি তৈরি করা হয়েছে তা জনগণের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার অধিকার ক্ষুণ্ন করে।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের যে নিবর্তনমূলক বিষয়গুলো ছিল, যেভাবে ফ্যাসিস্ট কায়দায় জনগণের অধিকারকে হরণ করতে চেয়েছে, একই কায়দায় রাজনৈতিক দলও যাতে বিকশিত হতে না পারে, সেজন্য নানাভাবে যেন রাজনৈতিক কার্যক্রম সংকুচিত করে রাখা যায়, সেটার অংশ হিসেবেই গণসংহতির ছয় বছর নিবন্ধন আটকে রেখেছিল।

জোনায়েদ সাকি বলেন, পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশ মান্য করা হচ্ছে না, এই রকম দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও আবার আদালতের দারস্থ হলেন। তবে আপিল চালাতে আগ্রহী কি না, সরকার পতনের পর সেই ইসির কাছে জানতে চাইলে তারা আপিল প্রত্যাহার করে নেয়। এভাবে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

নিবন্ধিত দল:
ইসিতে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলন নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর প্রায় প্রতিটিই আবেদনের পাঁচ থেকে ছয় বছর পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালেও শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছিল।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা।

নতুন দল:
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা ইতিমধ্যে নতুন দল গঠন করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি নামের দলটির আহ্বায়ক হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য পদত্যাগী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন। ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট দলটির কমিটিতে রয়েছেন আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা ছাত্র নেতারা। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দলটির আত্মপ্রকাশের পর ইসির দল নিবন্ধন নিয়ে ফের সামনে এসেছে আলোচনা।

নিবন্ধনের বর্তমান পদ্ধতি:
গণপ্রতিনিধি আদেশ-১৯৭২ এ নতুন দল নিবন্ধনের জন্য তিনটি প্রধান শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করতে হয়।
(ক) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল; অথবা
(খ) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র; অথবা
(গ) দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্যূন একশটি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং ওই রকম প্রতি উপজেলায় বা থানায় অন্যূন দুইশত ভোটার সদস্য হিসাবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল।

এছাড়া দলের প্রতিটি কমিটি নির্বাচিত, সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ রাখা, বিদেশি শাখা না রাখার মতো শর্তগুলোও রয়েছে।

কী বলছে ইসি:
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, অনেকেই দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য বলছেন। কোনো কোনো দল থেকে আরো কঠিন করার জন্য বলা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বর্তমান প্রক্রিয়া রাখার পক্ষে। অনেকেই নিবন্ধন প্রথা তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। কাজেই এটা একটা জটিল বিষয়।

তিনি বলেন, সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনও দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে সুপারিশ করেছে। সরকার ঐক্যমত কমিশন গঠন করেছে। এখন সেখান থেকে কী সুপারিশ আসে সেটা দেখতে হবে। যেহেতু এটা রাজনৈতিক দলের বিষয়, তাই তাদের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তে সহজে আসা যাবে না। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

অতিরিক্ত সচিব আরো বলেন, প্রতি সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করা হয়। এক্ষেত্রে আইনে যে প্রক্রিয়া আছে সেটাই ফলো করতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নিবন্ধন আইন তো একটা থাকতে হবে। বর্তমানে যে আইন আছে, সেটার হয়তোবা সংযোজন, বিয়োজন কিছু থাকতে পারে।

তবে বর্তমান আইন নিয়ে আমরা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। যেহেতু একটা আইন আছে, সবাই বলতেছে। এখন বিষয়টা ঐকমত্যের প্রশ্ন। কেউ বলবে যে আরও কঠিন করতে। কেউ বলবে যে আরও সহজ করতে। কেউ বলবেন যে আইনটা বাতিল করে দেন। বলার স্বাধীনতা সবার আছে। আমরা কোনো মন্তব্য করে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাই না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ