জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নিজেদের অধীনে রাখার দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সারাদেশে দুই ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা। বেলা ১১টা থেকে ১ পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন তারা। ফলে এ সময়ে সারাদেশে বন্ধ থাকবে এনআইডি সেবা।
বুধবার (১২ মার্চ) নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় সারাদেশে একযোগে আগামীকাল বৃহস্পতিবার স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’র ব্যানারে সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে করে এসময় সারাদেশে এনআইডি সেবা বন্ধ থাকবে।
মুনীর হোসাইন বলেন, এনআইডি প্রথমে সুরক্ষাসেবা বিভাগে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সবাই চায় এটি ইসির অধীনে থাকুক। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয় এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার আইন বাতিল করে তা ইসির অধীনেই ন্যস্ত করার। কিন্তু আরেকটি উদ্যোগ মাঝখানে নেওয়া হয়েছে, আলাদা কমিশন গঠন করে এনআইডি পরিচালনার জন্য।
তিনি বলেন, গত ৫ তারিখে এনআইডি সেবা ইসিতেই রাখার দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম সরকার ও কমিশনের দৃশ্যমান উদ্যোগের জন্য। কমিশন একমত পোষণ করে ৯ তারিখে সরকারকে চিঠি দিয়েছে। কমিশনের কাছ থেকে সাড়া পেলেও সরকারের কোনো কিছু আমরা পাইনি। তাই পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ মার্চ স্ট্যান্ড ফর এনাইডি কর্মসূচিতে (মানববন্ধন) যাব। সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত পালন করব। এরমধ্যে কোনো সাড়া না পেলে পরবর্তীতে আমরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেব।
সম্প্রতি ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। যার ফলে এনআইডি সেবা ইসি থেকে আলাদা কমিশনের অধীনে যাবে। উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া পর্যালোচনার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি’র সভা করে গত ৩ মার্চ।
উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনায় বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। তবে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা এবং জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক। এই উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করতে পারে।