• বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্টা শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫
শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী

এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বুধবার (১২ মার্চ) সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

এপেক্স গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টা) সেখানকার একটি হাসপাতালে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে এপেক্স পরিবার গভীর শোকাহত।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার পাশে ছিলেন ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও মেয়ে মুনিজে মঞ্জুর। তারা আজই মরদেহ দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।

দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তার মৃত্যুতে দেশের ব্যবসায়ী মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৬ মে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী ও সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১৯৬৬ সালে তারা সংসার জীবন শুরু করেছিলেন।

এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৭২ সালে মঞ্জুর ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কোম্পানি করে কমিশনের ভিত্তিতে চামড়া বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায় আসেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। চার বছর পর ১৯৭৬ সালে ১২ লাখ ২২ হাজার টাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওরিয়েন্ট ট্যানারি কিনে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এপেক্স ট্যানারি। তারও ১৪ বছর পর যাত্রা শুরু করা এপেক্স ফুটওয়্যার এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ১৯৯৬ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তখন তিনি যোগাযোগ, নৌপরিবহন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালেও তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি কৃষি, নৌপরিবহন, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এসবের বাইরে সংগঠক হিসেবেও অনেক কাজ করেছেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও তিনি।

১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তার বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী (১৮৮৭-১৯৪৬) কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৩৩ সালে। তার এক যুগ পর তিনি প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী কলকাতাতেই স্কুল ও কলেজের পাট শেষ করেন। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর স্নাতকোত্তর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলে থাকতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন।

তিনি একজন দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ছিলেন: প্রধান উপদেষ্টা

মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “বাংলাদেশের উদ্যোক্তা জগতে সকলের শ্রদ্ধাভাজন, দেশপ্রেমিক শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে আমি গভীর শোক জানাই। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাংলাদেশের উদ্যোক্তা জগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ছিলেন। দেশের চামড়া শিল্পকে এগিয়ে নিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ