বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ দীর্ঘদিন ধরিয়া অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাইয়া আসিতেছেন। একে তো পরীক্ষা নিয়া মানসিক চাপ, তাহার উপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দৌড়ঝাঁপের কারণে অনেকে অসুস্থ হইয়া পড়েন। প্রায় একই সময়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হইবার কারণে কেহ কেহ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করিয়াও শেষপর্যন্ত ভর্তিপরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে পারেন না। কেহবা বহু দূর-দূরান্ত হইতে যাত্রা করিয়া পথিমধ্যে যানজট ও অন্যান্য কারণে ভর্তিপরীক্ষা মিস করেন। বিশেষত এইক্ষেত্রে ছাত্রীদের সবচাইতে বেশি বিড়ম্বনায় পড়িতে হয়। এমতাবস্থায় মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভর্তিপরীক্ষাও সমন্বিত তথা গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। খোদ মহামান্য প্রেসিডেন্ট এই বিষয়টি সমর্থন করিয়া এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করিয়াছেন। ইহা লইয়া গত এক দশক ধরিয়াই চলিয়া আসিতেছে আলাপ-আলোচনা। তবে আশার কথা হইল, অবশেষে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাইতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আগামী শিক্ষাবর্ষ হইতেই সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করিয়া এই ব্যাপারে একটি কমিটিও গঠন করা হইয়াছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
উল্লেখ্য, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয় ২০০৮ সালে। তাহার ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত উপাচার্যদের এক সভায় বেশির ভাগ উপাচার্যই এই ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করিয়াছিলেন। কিন্তু কয়েকটি বৃহত্ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহ ও আপত্তির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগটি অবাস্তবায়িতই থাকিয়া যায়। পাশাপাশি, যাহারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও কোচিং-গাইড বাণিজ্যের সহিত সরাসরি জড়িত, তাহারা বরাবরই ইহার ঘোরবিরোধী বলিয়া অভিযোগ রহিয়াছে। কিন্তু জনগণের নির্বাচিত সরকারকে দেখিতে হইবে জনগণের স্বার্থ। কোনো কায়েমী স্বার্থকে এখানে প্রাধান্য দিবার কোনো অবকাশ নাই।
আলোচ্য কমিটিকে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে এই ব্যাপারে ধারণাপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হইবে। ইহার আগে কমিটি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপাচার্যদের সহিত কথা বলিবেন। তাহাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সহিত উচ্চশিক্ষা বিষয়ে বৈঠকে বসিবার কথা রহিয়াছে। সেখানে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাইবে বলিয়া জানা যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাহার মধ্যে ৩৭টি কার্যকর। এইসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়ে ও পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হইলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক দুর্ভোগের যেমন অবসান ঘটিবে, তেমনি অভিভাবকগণও বাড়তি খরচ ও ছুটাছুটির বিড়ম্বনা হইতে রেহাই পাইবেন। মেডিক্যাল কলেজসমূহের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাইয়া সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়— এই তিন বা ততোধিক ক্যাটাগরিতে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা মোটেও কোনো কষ্টসাধ্য বিষয় নহে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়বস্তু নিয়াও নূতন করিয়া চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন, যাহাতে মেধার যথার্থ মূল্যায়ন হয়।