কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি॥
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় দুর্জয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও মোবাইল সঞ্চয় প্রকল্পে দুটির এক পরিচালকের মৃত্যু। মৃত্যুর সংবাদে সোমবার সকাল থেকে জিয়া সুপার মার্কেটের তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান/কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছে গ্রাহকরা। পরিচালকের মৃত্যুতে গ্রাহকরা হতাশায় ভোগছেন। এঘটনায় জড়িত বাকিরা পলাতক।
ভুক্তভোগী গ্রাহক সুত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় পাঁচ বছর আগে দুর্জয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডে নামে পরিচালক হুমাযুন কবীরসহ কয়েকজন এটি নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম শুরু করেন। একই ব্যক্তি মোবাইল সঞ্চয় প্রকল্প নামের আরও একটি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এই দুই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ আরও কয়েক জন কর্মকর্তা এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড কারখানায় চাকুরি করত। তার দুই সমবায় সমিতি ও সঞ্চয় প্রকল্পে সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। পরিচালক হুমায়ুন কবীর গত বুধবার রাতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে অগ্নিদগ্ধ হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তিনি সোমবার ভোর ৪ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর খবর জানা জানি হলে গ্রাহক/সদস্যরা তার প্রতিষ্ঠানের সামনে একে একে জড়ো হতে থাকে। পরে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান/কার্যালয়ের সামনে দলে দলে পরিচালকের পরিবারের সদস্য ও কার্যালয়ের ম্যানেজারকে তারা খুজতে থাকে। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান/কার্যালয়ের সামনে কাউকে না দেখতে পেয়ে হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন এবং কান্নাকাটি করেন সদস্যরা। দুর্জয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডে ও মোবাইল সঞ্চয় প্রকল্প নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তারা এখন পলাতক রয়েছেন।
সদস্য মোসা. নাছিমা বেগম জানান, আমাকে পরিচালক বলেন এক সাথে বেশি টাকা জমা রাখলে প্রতি মাসে সঞ্চয় দেওয়া লাগবে না। আর বেশি টাকা জমা দিলে ১০০ টাকার ষ্ট্যামে লিখিত দেওয়া হয়। ষ্ট্যামে লিখিত ভাবে লেনদেন নিরাপদ। তিনি বলেন আপনি ৩ লাখ টাকা জমা রাখলে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে সঞ্চয় বইতে জমা করা হবে। আর আপনি তা থেকে ৪ বছর পর সঞ্চয় জমার দিগুন টাকা পাবেন। আমি পরিচালকের কথায় ৩ লাখ টাকা জমা করি। নাজমা বেগমের দুটি সঞ্চয় বই করেন। একটিতে ৩ লাখ টাকার লাভ থেকে মাসে ৪ হাজার জমা করেন। আর একটিতে তিনি মাসে ২ হাজার করে টাকা জমাদেন। সব শেষে গত ১৬/০৩/২০১৮ইং তারিখে আমাকে ১১ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ পরিচালক গত বুধবারে অগ্নিকান্ডে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে তাই টাকা নিতে পারি নাই। আজ শুনতে পেলাম তিনি মারা গেছেন।
আমি নিস্ব হয়ে গেলাম। এখন কি যে করি। নাছিমার মতো লাখ লাখ টাকা জমা রেখেছেন, মনিরা সুলতানা- ৪ লাখ, সেলিনা বেগম-৩ লাখ, রুবি- ২ লাখ ৮০ হাজার, রহিমা বেগম-২ লাখ, সাফিয়া- ১ লাখ ৫০ হাজার, সুফিয়া- ১ লাখ ৭৩ হাজার। এ রকম আরও কয়েক হাজার সদস্য আছে।
এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, আমাদের কারখানার কোন লোক এর সাথে জড়িত থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কালিয়াকৈর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন জানান, দুর্জয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড ২০১২ইং সনে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। রেজিস্ট্রেশনের পর থেকে আমাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ করেনি ঐ সমিতি। উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে অডিট করার জন্য। এবং ঐ সমিতি কোন উপজেলা মিটিংয়ে যোগদান করেনি। তাতেও কোন সাড়া দেয়নি ঐ সমবায় সমিতি। আর সমবায়ের কাজ হলো যৌথভাবে কোন উন্নয়ন মূলক কাজ করা। আমরা সমবায় সমিতিকে কোন প্রকার সুধের লেন-দেনের অনুমতি দেই না। আমরা প্রতি বছর তালিকা দেখে বাছাই করি কোন কোন সমিতি নিয়ম মানছে না। তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। আমরা বাছাই করে উপজেলা অফিসে সম্প্রতি গাজীপুর জেলা সমবায় অফিসে তালিকা করে পাঠিয়েছি। তার মধ্যে এ সমবায়ের নামও আছে।