আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথসহ সারাদেশের মাঠ দখলে রাখবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি- বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। গত তিন মাস ধরে শহর-বন্দর-নগর-গ্রাম-গঞ্জ-মাঠ-ময়দান-জনপদগুলোতে সভা-সমাবেশ-প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে আসছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী জনসভা শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি ৫ টি বিভাগীয় সদরে মহাসমাবেশ করেছেন। এই সমাবেশগুলোতে ঢল নামছে মানুষের। প্রতিটি মহাসমাবেশে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অনুরোধ জানাচ্ছেন শেখ হাসিনা। আরো ৫ টি জেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী মহাসমাবেশের নির্ঘন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ চট্রগ্রামের পটিয়ায় মহাসমাবেশে ভাষণ দেবেন তিনি। দলগতভাবে আওয়ামীলীগ এবং তাদের মিত্ররাও জোর কদমে মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের ১৫টি টিমের নেতারা বিভিন্ন জেলা সফর করেছেন। জনসভা-সমাবেশ করেছেন। ১৪ দলীয় জোট গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছে। আগামী ৩০ মার্চ রংপুর ও ৫ এপ্রিল যশোরে জনসভা করবে ১৪ দল।
১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, দেশের সব জেলা ও বিভাগসহ সর্বত্রই সমাবেশ-জনসভা করবেন তারা। নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ দখলে থাকবে আওয়ামীলীগের। জনগনের ভোটে আবারো ক্ষমতায় আসবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি। পাশাপাশি দাবি-দাওয়া নিয়ে বিএনপি যাতে আবার মাঠে নেমে জ্বালাও-পোড়াও না করতে পারে সেজন্য সতর্ক রয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। যে কোনোভাবেই হোক সারাদেশের মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনার বার্তা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ মহানগর, জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের ধারণা, আদালতে শাস্তি পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। একই সঙ্গে মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কাছে তারা টিকতে পারবে না।
ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতা জানান,বিএনপির প্রতি আর নরম সুরে কথা বলবে না সরকার। জাতীয় নির্বাচনের অব্যবহিত আগে আন্দোলনের নামে পরিবেশ ঘোলাটে হতে দেবে না প্রশাসন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে হার্ডলাইনে যাবে তারা। এজন্য নানা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা।
এছাড়া বিএনপিকে যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে হলে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে না- কেবল এমন নিশ্চয়তা পেলেই বিএনপিকে প্রশাসন কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেবে। সরকারের বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এখন থেকেই ‘এন্টি গভর্নমেন্ট মুভমেন্ট’ প্রতিরোধে মাঠে থাকবে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দলীয় কর্মসূচি পালনের নামে অপতত্পরতা রোধ করবেন তারা। শাসক দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা করে। জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুর করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। দলটির আন্দোলন কর্মসূচি যেহেতু লোক দেখানো, তাই আর সামনে এগোতে দেয়া যাবে না। নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের শক্ত অবস্থানে যাওয়ার বিকল্প নেই।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারনায় দেশের সবগুলো গুরুত্বপুর্ন জেলায় জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সফরে নির্বাচনি প্রচারণার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করবেন তিনি। আগামী এক মাসে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় জনসভা করবেন তিনি। ১ এপ্রিল চাঁদপুরে, ৫ এপ্রিল ময়মনসিংহ, ২৫ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও জনসভায় যাবেন তিনি। এর আগে-পরে গাজীপুরে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি সিলেটের জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি শুরু করেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারণা। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল এবং ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী,৩ মার্চ খুলনায়,৭ মার্চ রাজধানীতে জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। একই সঙ্গে জনসভাগুলোতে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর যশোরে জনসভায় ভাষন দেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছরই প্রথমবারের মতো ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালন করবে আওয়ামী লীগ। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস বরাবরের মতোই জাঁকজমকভাবে পালন করা হবে। এতে অংশগ্রহণ থাকবে শরিক দলগুলোরও। এছাড়া সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম এবং সমমনা সংগঠনগুলোও আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি সাড়ম্বরে পালন করবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হবে ২২ মার্চ।
জানা গেছে, জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠিত জনসভাগুলোয় নির্বাচনি জনসংযোগ ছাড়াও বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল করে দেওয়ার উদ্দেশ্যও রয়েছে। এ কারণেই এসব জনসভায় বিএনপির দুর্নীতি-দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার দুর্নীতি ও কারাদণ্ডের বিষয়টিও তুলে ধরছেন ক্ষমতাসীনরা।
একদিকে মাঠে চলছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি,অন্যদিকে বিএনপির কর্মসূচি রয়েছে চার দেয়ালে বন্দি। এতেই রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে বিএনপি। তারা জনসভা করতে পারছে না ঢাকায়। এপর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩ দফা আবেদন করেও অনুমতি পায়নি। বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপি জনসভা করতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাদেরকে কর্মসুচি পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছেন। নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারা মাঠে নামতে পারছে না।