রংপুর অফিস॥
সরকারি ও বে-সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও নেই ৫ টাকার নোট। রংপুরে ৫ টাকার কাগজের নোটের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি ৫ টাকার নোটের সংকট দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রংপুর শাখায়ও। ৫ টাকার নোটের বদলে কয়েন বা ধাতব মুদ্রা দিচ্ছেন ব্যাংকগুলো। এদিকে, ব্যাংক থেকে কয়েন দিলেও গণনার ঝামেলা এড়াতে এসব কয়েন জমা নিতে নারাজ ব্যাংকগুলো। এতে কয়েন লেনদেন করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ১, ২ ও ৫ টাকা সরকারি মুদ্রা এবং ৫ টাকার উপর বাকি সব টাকা ব্যাংক নোট। এর আগে শুধু মাত্র ১ ও ২ টাকা সরকারি মুদ্রা থাকলেও ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো সরকারি নোট হিসেবে পাঁচ টাকার নোট বাজারে আসে। কিন্তু বর্তমানে বিপলু পরিমাণ ৫ টাকার কয়েন বাজারে থাকার কারণে সরকার ৫ টাকার কাগজের নোট ছাপানো বন্ধ রেখেছে । ফলে রংপুরে ৫ টাকার কাগুজে নোটের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী জুন্নুন জানান, জনতা ব্যাংকের রংপুর কর্পোরেট শাখায় গিয়েছিলাম ৫ টাকার নতুন অথবা পুরাতন নোট নেওয়ার জন্য। তারা দিতে পারেনি। এরপর ইউসিবিএল ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের রংপুর শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকে গেলেও কোনো ব্যাংকেই ৫ টাকার নোট দিতে পারেনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলেও তারাও ৫ টাকার নোট দিতে ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, তাহলে কি রংপুরে ৫ টাকার নোটের লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে? একই কথা বলেন রংপুরের একাধিক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। মামুন মিয়া নামের এক অটো যাত্রী জানান, কয়েনের তুলনায় কাগুজে নোট ব্যবহারে সুবিধা বেশি। আর অটোর ক্ষেত্রে বেশিভাগ সময় ৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়। অনেক অটো চালক কয়েন নিতে চান না। তাই ৫ টাকার নোটের প্রয়োজন বেশী। এদিকে, ব্যাংক থেকে কয়েন দিলেও গণনার ঝামেলার কারণে ব্যবসায়ী ও সাধারন গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েন নিচ্ছেন না রংপুরের সরকারি ও বে-সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে মুদি দোকান, ফেরিওয়ালা, মিষ্টির দোকান, যাতায়াতের ভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েন নিয়ে শুরু হয়েছে ভোগান্তি। এছাড়া বিপুল সংখ্যক কয়েন লেনদেন করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ীরা। মিলন বেকারীর স্বত্ত্বাধিকারী বারেক হোসেন জানান, বিভিন্ন স্থানে বেকারীর খাদ্য সামগ্রী বিক্রির সময় অনেক কয়েন সংগ্রহ হয়। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েনগুলো আমরা নিয়ে থাকলেও ব্যাংকগুলো এসকল কয়েন নিচ্ছে না। ফলে আমরা বিপুল পরিমাণ কয়েন নিয়ে বিপাকে পড়েছি। দীর্ঘদিন ধরে কয়েনগুলো লেনদেন করতে না পারায় মুলধনে টান পড়েছে। মোশারফ হোসেন নামে এক পান দোকানদার বলেন, সারাদিন মানুষের কাছ থেকে ২/১টি করে কয়েন নিতে নিতে দিন শেষে অনেক কয়েন জমা হয়। কিন্তু এসকল কয়েন পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিতে চান না। ফলে কয়েন নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। তাই কয়েন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। নগরীর নবাবগঞ্জ বাজারের মামুন শেখ নামে এক ডিলার ব্যবসায়ী জানান, ছোট বা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০০ বা ২০০ টাকার সমপরিমাণ কয়েন না নিলে কেউ মালামাল নিতে চায় না। কিন্তু সেগুলো আবার ব্যাংক বা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা না নেওয়ায় বিপাকে পড়েছি। রংপুরের বিভিন্ন সরকারি ও বে-সরকারি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাধারণ গ্রাহকসহ ব্যবসায়িরা প্রতিদিন ৫ টাকার নোটের জন্য ব্যাংকে আসছেন। কিন্তু ৫ টাকার নোটের সরবরাহ নেই। চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে আসলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। তাই বর্তমানে ৫ টাকার কাগজের নোটের সংকট দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, কয়েন জমা নেয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, বরং নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু খুচরা কয়েন গুনতে অনেক সময় লাগে। এতে অন্য গ্রাহকদের সেবায় কিছুটা বিলম্ব হয়। তাই সময় বাঁচাতে তারা অনীহা প্রকাশ করেন। আবার যে ব্যক্তি ব্যাংকে কয়েন জমা দেন, তিনিই আবার টাকা তোলার সময় কয়েন নিতে চান না। তাছাড়া কয়েনে ব্যাংকের ভল্ট ভরে যায়। এক্ষেত্রে কাগজের নোটের ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ। তাই অনেক সময় কয়েন জমা নেওয়া হয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ৫ টাকার নোট ছাপানো বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে রংপুরে ৫ টাকার নোটের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। মূলত বাজারে ৫ টাকার ধাতব মুদ্রার সরবরাহ বেশি থাকায় ৫ টাকার কাগুজে নোট ছাপানো হচ্ছে না। তাছাড়া মানুষ ধাতব মুদ্রার ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র নোট ব্যবহার করছেন। সে কারণেই ৫ টাকার নোটের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা সাধারণ জনগণকে ধাতব মুদ্রা ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কয়েন না নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, কয়েন নেওয়াটা একটি জটিল গ্রক্রিয়া। কয়েন গুনে নিতে অনেক সময় ব্যয় হয়। এতে অন্য গ্রাহকদের সেবায় বিলম্ব হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখায় একটি কাউন্টার আছে। সেখানে দু’জন কর্মকর্তা সারাদিন যতটা সম্ভব কয়েন নেন। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েন নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। প্রতিটি ব্যাংককে কমপক্ষে ৫ হাজার কয়েন রাখতে হবে।