• মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারের সময় নবজাতককে দুই খণ্ড ; হাইকোর্টে তলব

আপডেটঃ : রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৮

সাজু সরকার । কুমিল্লা প্রতিনিধি।

জমজ সন্তানের একজনকে ভূমিষ্ট করিয়ে আরেকজনকে পেটে রেখে অস্ত্রোপচারের ঘটনার পর আবারও কুমিল্লায় প্রসূতির পেটে নবজাতকের মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই প্রসূতির জরায়ু কেটে অপারেশন করা হয়েছে।এ ঘটনায় কুমিল্লার সিভিল সার্জন, কুমিল্লা মেডিকেলের পরিচালকসহ অপারেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ ডাক্তারকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল তাদেরকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।রোববার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। ‘ডাক্তার দুই খণ্ড করলেন নবজাতককে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জুলেখা বেগম নামের ওই প্রসূতি গত এক সপ্তাহ ধরে সন্তান ও শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়ে হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন।শনিবার সকালে এ খবর জানাজানি হলে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ভিড় জমান। এ ঘটনায় হাসপাতালসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, ওই প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে অপারেশন করে নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন করে বের করা হয়েছে এবং জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগমের (৩০) প্রসব বেদনা নিয়ে গত ১৭ মার্চ রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।পরদির দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের চিকিৎসক দল ওই অপারেশন করেন। এ সময় ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন ও ডা. আয়েশা আফরোজসহ অন্যরা অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন।প্রসূতির স্বামী সফিক কাজী বলেন, প্রসব বেদনায় ছটফট করলেও ডাক্তাররা আমার স্ত্রীকে সিজারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরদিন দুপুরে জুলেখার সিজার করা হয়। এ সময় নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন এবং আমার স্ত্রীর জরায়ু কেটে ফেলা হয়।তিনি আরও জানান, ওদিন হাসপাতালের একজন দারোয়ান এসে তার কাছে মৃত নবজাতককে মাটিচাপা দেয়ার জন্য ৫০০ টাকা চান। পরে তিনি ৩০০ টাকা দেন। ওই দারোয়ান নবজাতকের মরদেহ মাটিচাপা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান তার সন্তানের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি মোবাইলে নবজাতকের ছবি তুলে রাখেন। এরপর দারোয়ান হাসপাতালের অদূরে নিয়ে নবজাতককে মাটিচাপা দেন।জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই প্রসূতি বলেন, ডাক্তাররা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। হাসপাতালে আসার পরও আমার পেটে সন্তান নড়াচড়া করছিল। আমি সিজারের কথা বললেও তারা (ডাক্তার) রাতে সিজার করেনি। ডাক্তার আমার সন্তানকে কেটে ফেলেছে। সেইসঙ্গে আমার জরায়ু কেটে অপারেশন করে দিয়েছে।অপারেশনে অংশ নেয়া হাসপাতালের ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. আয়েশা আফরোজ, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির গর্ভের সন্তান মৃত ও অস্বাভাবিক পজিশনে ছিল। কিন্তু শিশুটির হাত-পা জরায়ু মুখ দিয়ে বের হয়ে চলে আসায় বাধ্য হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত শিশুর দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে বের করা হয়েছে।এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমরা জরায়ু কেটে ফেলি। অপারেশনের আগে এসব বিষয়ে প্রসূতির স্বামীর অনুমতি নেয়া হয়েছে এবং এতে ডাক্তারদের অবহেলা ছিল না বলে তারা দাবি করেন।হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মতিউর রহমান সংশ্লিষ্ট চারজন ডাক্তারকে তার কার্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে ডাক্তাররা অপারেশন করে গর্ভের সন্তান দুই খণ্ড করে বের করে আনেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ