উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি॥
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রায় ৮ বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি প্রকল্প দাখিলেই আটকে আছে। প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পটির অনুমোদন ও বাস্তবায়নে উল্লাপাড়া পাউবোর বিভাগীয় কার্যালয়টি আবারও পুনঃস্থাপন করা হবে বলে জানা যায়। প্রায় ৩০ লাখ জনবসতি আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
এদিকে প্রায় ২৮ বছর আগে উল্লাপাড়ায় পাউবোর একটি বিভাগীয় অফিস ছিল। বর্তমানে অফিস ঠিকানা ঠিকই আছে। তবে এটি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর দফতরের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ নামে চলছে। এ অফিসের ঠিকানায় কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন ছোটখাটো প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। তবে বাস্তবে এখানে অফিসটি চলছে না। কোন অফিসিয়াল(দাফতরিক) কার্যক্রম এখানে হচ্ছে না। এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারি মিলে ১২ জনের কেউ এখানে অফিস করেন না। এভাবেই দু’যুগের বেশি সময় ধরে চলছে। এর একমাত্র কারণ এখানে অফিস করার মত কোন অবস্থা কিংবা পরিবেশ নেই। সরকারি এ অফিসের বিভিন্ন অবকাঠামোর সবই বেহাল দশায় আছে। এরই মধ্যে দরজা জানালা খোয়া গেছে। ভবনগুলো ভাঙ্গাচোড়া আর বিধ্বস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় দু’একরের গোটা এলাকা বন বাদাড়ে ভরপুর হয়ে আছে। সব মিলিয়ে পৌর এলাকার পাউবোর অফিসটি পরিত্যক্ত ভূতুড়ে জায়গা হয়েছে।
জানা যায় বিগত ১৯৭৮ সালে উল্লাপাড়ার পৌর এলাকার ঝিকিড়া মহল্লায় (বাখুঁয়া) পাউবোর একটি বিভাগীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এ অফিসের প্রায় ২ একর জায়গা বর্তমানে বাজার দরে প্রায় ২ কোটি টাকা হবে বলে হিসাব মেলে। এখানে পাকা ও আধা পাকা মিলে বড় ধরনের ৪টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে দোতলা একটি ও একটি একতলা পাকা ভবন রয়েছে। এছাড়া বড় মাপের পাকা গোডাউন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ আছে। এ অফিস স্থাপনের পেছনে জমি সম্পদসহ বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে সরকারের মোটা অংকের টাকা ব্যয় হয়েছে।
উল্লাপাড়ার পাউবোর অফিসটি স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার ৭ উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন এবং পরবর্তীতে এর সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করা বলে জানা যায়। উপজেলাগুলো হলো- উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও ফরিদপুর। সিরাজগঞ্জ সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের (এসআইআরডিপি) আওতায় ইফাদ সাহায্যপুষ্ট এ প্রকল্পে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা প্রদান ব্যবস্থা ছিল। এর মধ্যে প্রকল্প এলাকায় বাঘাবাড়ি থেকে নিমাইচরা পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, পানি নিষ্কাশনে ২৪টি ফার্ম ইনলেট নির্মাণ, নদ-নদীতে স্লুইচ গেট নির্মাণ সহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটির কার্যক্রম চলাকালে বাঘাবাড়ির কাছাকাছি রাউতারা এলাকায় ফি বছর বাঁধ ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মূল বাঁধা চিহ্নিত করে এর সমাধানের নতুন করে আরও কয়েকটি বাঁধসহ অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন জানিয়ে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় বলে জানা যায়। সেখানে এর বাস্তবায়নের আগেই বিগত ১৯৯১ সালে প্রকল্পটির যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর উল্লাপাড়ার বিভাগীয় কার্যালয়টি বিভিন্ন কারণে গুটিয়ে নেওয়া হয়। এটি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দফতর হয়ে তখন থেকে নামমাত্র বছর দুয়েক চলে। এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের পাউবোর অফিস থেকেই উল্লাপাড়ার পাউবোর আওতায় এলাকায় বিভিন্ন ছোটখাটো প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হয়ে আসছে। সেখান থেকেই যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকি করা হয়। উল্লাপাড়ার পাউবোর কার্যালয়ে বর্তমানে একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পদে মোট ১২ জন আছেন। এর মধ্যে শাখা কর্মকর্তা ২ জন, কার্য সহকারী ৪ জন, হিসাব করণিক ১ জন, ডাটা এন্ট্রি বিভাগে ১ জন ও ৩ জন অফিস সহায়ক পদে আছেন। উল্লাপাড়া অফিসটিতে ৪র্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী থেকে দেখাশোনা করেন। এ অফিসের আওতায় ছোটখাটো নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন সহ আগে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার হয়ে আসছে। এদিকে পুরানো প্রকল্পে নির্মিত বিভিন্ন অবকাঠামোর অনেক কিছুরই ক্ষতি হয়ে গেছে। বিভিন্ন নদীতে পানি নিষ্কাশনে নির্মিত স্লুইচ গেট গুলো পাকা স্থাপনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর দু’পাশের মাটি অনেক আগেই ধসে গেছে। উল্লাপাড়ার পাউবোর আওতায় অতি সম্প্রতি সোনতলা এলাকায় করতোয়া নদী খনন ও নদী তীর সংরক্ষণ এবং ঘাটিনা পালপাড়া, এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রাম ও বড়হর নবান্নপাড়া এলাকায় নদী তীর সংরক্ষণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ৪৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, বিগত ২০১১ সালে উল্লাপাড়ার পাউবোর আওতায় প্রকল্প সীমা এলাকা চিহ্নিত করে প্রায় ৩শ ৩৬ কোটি ৩১ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে নতুন একটি প্রকল্প পাউবোর উর্ধ্বতন বিভাগে দাখিল করা হয়েছে। এতে প্রকল্প এলাকার ৪ হাজার ৫শ ৬০ হেক্টর জমি চিহ্নিত করে বিভিন্ন ফসলের সুষ্ঠ আবাদ, নিরাপদ গোচারণ ভূমি সহ বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে জনকল্যাণকর প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় বলে জানা যায়। প্রকল্পটি দু’টি জেলার ৭ উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ জনবসতির আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক একটি প্রকল্প বলে জানা যায়।
প্রকল্প এলাকার দহকুলা গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ ইকবাল বলেন পাউবোর বিগত প্রকল্পটি পূনরায় উদ্যোগ নিয়ে সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত জনগণের খুবই উপকার হবে। নদীগুলোয় স্লুইচ গেটের সংখ্যা বাড়ানো দরকার বলে তিনি জানান।
নাগরৌহা গ্রামের কৃষি পেশার আব্দুল করিম মিয়া বলেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন জরুরি। এটি করা হলে বিভিন্ন এলাকায় বছরে দু থেকে চার ফসলের আবাদ করা যাবে। প্রকল্প এলাকার নদীগুলো পূনঃখনন করা দরকার রয়েছে।
উল্লাপাড়ার পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ৮ বছর আগে হাতে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারীর ক্ষমতায়ন ও বিপুল জনগোষ্ঠী আর্থিক সামাজিক অবস্থার ব্যপক উন্নয়ন ঘটবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ হলে উল্লাপাড়ায় পাউবোর বিভাগীয় কার্যালয়টি সহজেই পুনঃস্থাপন হবে বলে জানান। তবে প্রকল্পটি দাখিলের পর তা ওই অবস্থাতেরই রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া উল্লাপাড়া এলাকায় করতোয়া নদীর উৎস মুখ থেকে বড়াল নদী পর্যন্ত নদী পুনঃখননে অবাধ পানি প্রবাহ, মৎস্য চাষসহ নদী পথে পণ্যবাহী নৌযান গুলোর সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা আবারও গড়ে উঠবে। তিনি আরও জানান, উল্লাপাড়ায় অফিস করার মত কোন পরিবেশ নেই। এটি পরিত্যাক্ত হয়ে অছে। এ অফিসটি ফের চালুতে বিগত সময় বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে তা আর হয়নি।