• শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

কালিয়াকৈরে নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ঘি ও ছানা, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

আপডেটঃ : বুধবার, ৯ মে, ২০১৮

 

 

কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি॥
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিএসটিআই ও সিভিল সার্জনের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে ঘি ও ছানা তৈরির কারখানা। একই স্থানে পাশাপাশি ঘি-ছানা তৈরি এবং পালন করা হচ্ছে গরু ও মাছ। এমন অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশেই ঘি ও ছানা তৈরির বিষয়টি জেনেও নীরব ভুমিকায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বেশি লাভের আশায় কেউ কেউ ঘিতে সয়াবিন তৈল মিশ্রণ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
এলাকাবাসী ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া ইউনিয়নের সাদুল্ল্যাপুর এলাকায় অনুমোদন ছাড়াই প্রায় ১৬-১৭টি ঘি ও ছানা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হলেও ওই এলাকাটি ইতিমধ্যে ঘি ও ছানার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। একেকটি কারখানা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪-১৫ কেজি ঘি ও প্রায় ৪০-৪৫ কেজি ছানা উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৭০ কেজি ঘি ও ৮১০ কেজি ছানা উৎপাদন হয়। এই ঘি ও ছানা স্থানীয় বিভিন্ন গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা জেলা বাসির চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। পোলাও, বিরিয়ানি, নান-রুটি ও নানান রকম ভর্তা ও ভাজিতেও ঘি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ছানা। ঘি ও ছানা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার খাচ্ছেন শিশু, যুবক, বৃদ্ধাসহ সব মানুষ। কিন্তু ওই এলাকার কারখানাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের ঘি ও ছানা তৈরি হওয়া খাবারে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুসহ সকল বয়সের মানুষ। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে ঘি ও ছানা তৈরির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কালিয়াকৈর উপজেলা সেনেটারী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই সাদুল্ল্যাপুর এলাকার বিশ^জিৎ ঘোষ, সঞ্জয় ঘোষ, ভম্বল ঘোষ, বিমল ঘোষ, প্রসাদ ঘোষ, আনন্দ ঘোষ,বিবেক ঘোষ,সুমীর ঘোষ, রাজিব ঘোষ, বিশনু ঘোষ, কার্তিক ঘোষ, অপূর্ব ঘোষ, দৌড়া ঘোষ, ভলরাম ঘোষ, অভিরাম ঘোষসহ আরো বেশ কয়েকজন তাদের নিজ বাড়িতে প্রায় ১৬-১৭টি ঘি ও ছানা তৈরির কারখানা বানিয়েছেন। ওই কারখানাগুলোর সরকারি অনুমোদন তথা লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। নিজেদের বাড়ির এক কোনো ছোট্র একটি কক্ষে ঘি তৈরির ইঞ্জিন চালিত মেশিন বসানো হয়েছে। পাশে দুধ জ্বাল করার চুলা ও ছোট পরিসরের পানির হাউজ রয়েছে। কেউ কেউ চুলার এক পাশে গরু পালন করছেন, আবার কেউ কেউ ওই হাউজে মাগুর মাছ চাষ করছেন। এছাড়াও ওই হাউজে কেচোসহ বিভিন্ন আবর্জনা পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। দুধ জ্বাল দেওয়ার সময় গরুর চনা-গোবর এবং তা ঠান্ডা করার সময় ওই হাউজের নোংরা পানি ছানা ঢুকে পড়ছে। এছাড়াও সেখানে রয়েছে নোংরা আবর্জনাও। কারো কারো বিরুদ্ধে বেশি লাভের আশায় ঘি’ এর মধ্যে সয়াবিন তৈল মিশ্রণ করছেন বলেও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। স্বাস্থ্য ঝুকি থেকে রক্ষা করতে তদন্ত করে এসব কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।
ঘি’ এ সয়াবিন তৈল মিশ্রণের বিষয়টি অস্বীকার করে কারখানার মালিকদের মধ্যে বিশ্বজিৎ ঘোষ, ভলরাম ঘোষ, অভিরাম ঘোষ জানান, পর্যপ্ত পরিমানের জায়গা না থাকায় কেউ কেউ এক স্থানেই দুধ জ্বালের চুলা ও গরু পালন করা হচ্ছে। এছাড়া সবাই পানির হাউজে মাছ চাষ করে না। তবে তাদের দাবি, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ বর্জন করে ঘি ও ছানা তৈরি করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কালিয়াকৈর উপজেলা সেনেটারী ইন্সপেক্টর আবু সাঈদ জানান, ওই এলাকার ঘি ও ছানার বিষয়ে অভিযোগ থাকায় সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এসব কারখানার বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। তবে নমুনা পরিক্ষার রিপোর্ট পেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ