ব্যাংকগুলো অনেক দিন ধরেই সুদহারের সীমা তুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। কারণ ঋণে ৯ শতাংশ সুদের সীমা থাকায় আমানতে সুদ বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ঋণের সুদহার তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সভাপতিত্ব করেন। এ সময় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করা। এখন যে ৯ শতাংশ ক্যাপ রয়েছে তা কীভাবে তুলে বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেয়া যায় এটার কৌশল নির্ধারণে আলোচনা হয়েছে। যেমন লাইবর রেটের সঙ্গে ব্যাংক নির্ধারিত সুদ যোগ করে মোট সুদহার নির্ধারণ কর হয়। ঠিক সেভাবে পাঁচ ধরনের বন্ডের সুদহারের গড় রেটের সঙ্গে একটি রেট নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকগুলো অনেক দিন ধরেই সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। কেননা ঋণে ৯ শতাংশ সুদের সীমা থাকায় আমানতে সুদ বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার সুদ না বাড়িয়েও ঋণ পাচ্ছে না। আইএমএফের সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার অথবা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী জুনের তৃতীয় সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। চলমান মুদ্রানীতির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও আগামী মুদ্রানীতিতে কী কী থাকবে বৈঠকে সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখানে ব্যান্ডিং ও রেফারেন্সের রেটের কথা ভাবা হচ্ছে। এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা করা হবে।মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর মেয়াদি বন্ডে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি বন্ডে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই পাঁচ ধরনের বন্ডে সুদহারের গড় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এই রেটের সঙ্গে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ শতাংশ করিডোর রেট নির্ধারণ করে দেয় তাহলে ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশে ঋণ বিতরণের সুযোগ পাবে ব্যাংক।