• শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

দুই মামলায় ৮ মাস কারাগারে জগন্নাথের শিক্ষার্থী খাদিজা : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি মামলায় প্রায় আট মাস ধরে কারাগারে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। বিচারিক আদালতে দুবার ওই শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি।

খাদিজাতুল কুবরার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে চেম্বার বিচারপতি ওই আদেশ স্থগিত করেন। এ নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে।

অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালে অক্টোবরে খাদিজাতুল কুবরা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় আলাদা দুটি মামলা করে পুলিশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে করা দুটি মামলার এজাহারের অভিযোগ এবং বর্ণনা প্রায় একই রকম।

একটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খাইরুল ইসলাম এবং অন্যটির কলাবাগান থানার এসআই আরিফ হোসেন। দুই বাদীই দায়িত্ব পালনকালে মুঠোফোনে ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেনের ভিডিও দেখতে পান। তারপর দুজনই নিজ নিজ থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন।

নিউমার্কেট থানার মামলায় এসআই খাইরুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ২৫ মিনিটের সময় মুঠোফোনে মেজর (অব.) দেলোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও দেখতে পান। ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামের ভিডিওর সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় দেলোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের বৈধ গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। মামলাটি রেকর্ড করা হয় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। মামলার এজাহারের সঙ্গে তিন পাতার স্ক্রিনশট ও ভিডিও–সংবলিত সিডি সংযুক্ত করা হয়।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, খাদিজাতুল কুবরা ও দেলোয়ার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনগড়া, বানোয়াট, মিথ্যা, মানহানিকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। আসামিরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের প্রয়াস চালাচ্ছেন।

নিউমার্কেট থানায় মামলা করার আট দিনের মাথায় কলাবাগান থানায় আরেকটি মামলা করেন এসআই আরিফ হোসেন। কলাবাগান থানার মামলার এজাহারেও উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর রাত ৯টা ১৫ মিনিটে মুঠোফোনে ইউটিউব দেখার সময় দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেল দেখতে পান। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি থানায় মামলা করেন। দুই মামলার অভিযোগের ভাষ্য প্রায় একই রকম।

মামলা দুটি তদন্ত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা এবং দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাসে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল খাদিজাতুল কুবরা ও দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাতুল কুবরাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। তাঁর পক্ষে জামিন চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়। আদালতকে লিখিতভাবে জানানো হয়, খাদিজাতুল কুবরার কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছে। আবেদনের সঙ্গে চিকিৎসাসংক্রান্ত কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয়।

খাদিজাতুল কুবরার আইনজীবী হাইকোর্টে বলেছিলেন, তিনি (খাদিজা) সম্পূর্ণ নিরপরাধ। হয়রানির উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।

খাদিজাতুল কুবরার মুক্তি দাবি করেছেন বোন মনিরা খাতুন। তিনি বলেন, তাঁর বোনের নামে মামলা হয়েছে, সেটি তাঁরা জানতেন না। রাতে মিরপুরের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ