বিশাল এলাকাজুড়ে রাজধানীর আফতাবনগরে গরুর হাট বসেছে। সিটি কর্পোরেশনের ইজারা নীতি অনুযায়ী গতকাল (রোববার) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশুর হাট বসেছে রাজধানীতে। রাজধানীতে বসা কোরবানির পশুর বড় হাটগুলোর মধ্যে আফতাবনগর হাটটি অন্যতম।
কয়েকদিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা গরু আনতে শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজও হাটে ট্রাকে ট্রাকে ঢুকছে গরু। হাট ঘুরে প্রচুর পরিমাণে গরু দেখা গেলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি এখনো সেভাবে দেখা যায়নি। এছাড়া বিক্রেতারা প্রতিটি গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন। বিশেষ করে মাঝারি সাইজের গরুর দাম অতিরিক্ত হাঁকছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে যে অল্প সংখ্যক ক্রেতারা হাটে আসছেন, তারা শুধু দাম সম্পর্কে জানছেন। খুব কম সংখ্যক ক্রেতা গরু কিনছেন। সেই কারণে হাটে স্থাপিত হাসিল বুথগুলোও ফাঁকা দেখা গেছে।
মেহেরপুর থেকে আফতাবনগর হাটে ৭টি গরু এনেছেন আজগর আলী নামের একজন বিক্রেতা। তিনি বলেন, হাটে গরুর কোনো অভাব নেই, প্রচুর পরিমাণে গরু। এসব গরুর মধ্যে মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সেইসঙ্গে দামও বেশি। যদিও এবার গরুর দাম বেশি যাবে, কারণ এবার বেশি দামে গরু কিনেছেন পাইকাররা। মূলত গরুর খাবারের দাম অনেক বেশি যাচ্ছে, তাই সব ধরনের গরু বাড়তি দামে কেনা আমাদের। গত বছর যে গরু দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই গরু কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে।
তিনি আরও বলেন, হাটে এসেছি চারদিন হয়ে গেল, কিন্তু ৭টি গরুর মধ্যে এখনো একটি গরুও বিক্রি হয়নি। আসলে হাটে সেভাবে এখনও ক্রেতা আসতে শুরু করেনি। হাট জুড়ে শুধু গরুই আছে কিন্তু তেমন ক্রেতা নেই। হয়ত আগামীকাল ও পরশু হাট জমজমাট হবে। এখন হাটে অল্প সংখ্যক ক্রেতা আসছে। তবে তারা গরু কিনছে না, হাট ঘুরে শুধু গরুর দরদাম জানছে।
গরুর দাম কেমন চলছে এ বিষয়ে ধারণা দিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে গরু আনা পাইকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গরুর দাম এবার বেশি যাচ্ছে। কারণ গরুর খাবারের দাম বেশি ও পরিবহন খরচ বেশি। আমার কাছে ৫টি গরু আছে এর মধ্যে ৩টি মাঝারি সাইজের আর দুইটা তুলনামূলক বড়। এখানকার একটি গরু ওজন প্রায় ৪ মণ। এই গরুর দাম চাচ্ছি এক লাখ ৪০ হাজার। একটা গরু আছে যার ওজন প্রায় ৭ মণ, এই গরুর দাম চাচ্ছি ২ লাখ ৫০ হাজার। দরদামের মধ্যে দিয়ে একটু কম-বেশি করে এগুলো বিক্রি করব। গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি যাচ্ছে। তবে এখনও সেভাবে ক্রেতা হাটে না আসায় অনেকেই গরু বিক্রি করতে পারছে না। ক্রেতারা এসে শুধু দরদাম করে চলে যাচ্ছে।
রাজধানীর মগবাজার থেকে আফতাবনগর হাটে গরু কিনতে এসেছেন একজন রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, প্রতি বছর আফতাবনগর হাট থেকেই কোরবানির গরু কিনি। এই হাটটিও বড় হাটের মধ্যে একটি, তাই প্রচুর গরু পাওয়া যায়। আজ এসেছি মূলত গরুর দরদাম দেখতে। এসে যা বুঝলাম তাতে দেখলাম বিক্রেতারা এবার গরুর দাম বেশি চাচ্ছে। আর মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা যেহেতু সবচেয়ে বেশি তাই বিক্রেতারা এই গরুগুলো দাম আরও বেশি দাম চাচ্ছে। গতবার দেড় লাখ টাকার গরু এবার চাওয়া হচ্ছে ২ লাখ টাকা। তবে দাম বেশি চেয়েও বিক্রেতারা হতাশ, কারণ হাটে এখনো ক্রেতা নেই। হাট এখনো জমে উঠেনি, কাল থেকে জমে উঠতে পারে। আজ আমিও গরু কিনতে আসিনি, একটু বাজার ঘুরে ধারণা নিতে এসেছি।
ঝিনাইদহ থেকে আফতাবনগর হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, হাটে যেহেতু এখনো সেভাবে ক্রেতা আসতে শুরু করেনি, তাই প্রকৃত বাজার কেমন যাবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে বিক্রেতাদের দিক থেকে গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে আনুমানিক মণের হিসাবে। যে গরু যে কয় মণ সেই গরুর দাম সেভাবে চাওয়া হচ্ছে। বিক্রেতারা প্রতি মণে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দাম চাচ্ছে। একটি গরু যদি দেখে মনে হয় এর ওজন ৫ মণ হবে তাহলে বিক্রেতারা চাচ্ছে দেড় লাখ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে বাজারে আজ গরু কেনার ক্রেতা সেই অর্থে নেই। যারা আসছে তারা শুধু দাম জানতে চাচ্ছে। এছাড়া সিংহভাগ ক্রেতার চাহিদায় আছে মাঝারি সাইজের গরুগুলো। সব কারণ মিলিয়ে মাঝারি সাইজের গরুর দাম একটু বেশি যাচ্ছে।
হাটে ঘুরে ঘুরে গরু সাজানোর মালা ও ঘণ্টাসহ সাজ-সজ্জার উপকরণ বিক্রি করছিলেন মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, হাট থেকে গরু কেনার ক্রেতা আজ কম। হাট এখনো জমে উঠেনি, তাই আমার সাজ-সজ্জার জিনিসগুলোও কম বিক্রি হচ্ছে। হাটের মধ্যে ক্রেতাদের ঢুকে শুধু দরদাম করতেই দেখা যাচ্ছে, কিন্তু খুব কম মানুষ গরু কিনছে। গরু কিনতে যারা আসছে সবাই বলছে এবার গরুর দাম বেশি।