১৫ আগস্ট জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে চলছে ব্লক রেইড ও বিশেষ অভিযান। শনিবার (১২ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া ব্লক রেইড চলমান থাকবে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানা জানানো হয়েছে। এরইমধ্যে কমিশনারের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছেন সংশ্লিষ্ট উপ-পুলিশ কমিশনাররা।
ডিএমপির আদেশে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর এলাকায় নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং সোশ্যাল/ইলেক্ট্রনিক্স/প্রিন্ট মিডিয়ায় গুজব ও অপপ্রচারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা প্রতিরোধকল্পে আগে থেকেই অপরাধ দমনে প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে। কোনও সন্ত্রাসী/নাশকতাকারী জঙ্গি গ্রুপ যাতে কোনও বাসাবাড়ি, আবাসিক হোটেল, মেস, ব্যক্তিসহ যেকোনও এলাকায় আশ্রয় বা অবস্থান নিতে না পারে, সেজন্য এলাকাভিত্তিক ব্লক রেইড, তল্লাশি ও চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা এবং অনলাইনে গুজব ও অপপ্রচার রোধে নজরদারির মাধ্যমে যেকোনও ধরনের চক্রান্ত নাশকতামূলক ষড়যন্ত্র বানচাল ও তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ১২ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ব্লক রেইড ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
আদেশে আরও বলা হয়, ‘বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা মহানগর এলাকার সব আবাসিক হোটেল, মেস এবং বস্তি এলাকায় ব্লক রেইড ও তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। বিশেষ অভিযানের সময় উঠান বৈঠকের কার্যক্রম বেগবান করতে হবে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদের হুমকি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে এবং জনগণকে পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। কোনও ধরনের সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী যেন ঢাকা মহানগরীতে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে ও বিশেষ অভিযান সফল করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
ডিএমপি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘জঙ্গি, নাশকতাকারী, তালিকাভুক্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও সব ধরনের অপরাধীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সে অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কৌশলগত স্থান চিহ্নিত করে সম্পূর্ণ এলাকা বা স্থানটি সুপরিকল্পিতভাবে আকস্মিক চতুর্দিকে পুলিশি কর্ডন করে চিরুনি অভিযান চালাতে হবে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বস্তি, মেস, আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাস, ক্লিনিক, পরিত্যক্ত কারখানা, সন্দেহভাজন কোচিং সেন্টার, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানে তল্লাশিও ব্লক রেইড কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’
উঠান বৈঠক, চেকপোস্ট ও তল্লাশিসহ দৃশ্যমান পুলিশি কার্যক্রম বেগবান করা, বিট এলাকায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির আগমন পর্যবেক্ষণসহ ওপরে বর্ণিত নির্দেশনাগুলোকে কার্যকর করার কার্যক্রম বিশেষ অভিযানের আওতায় আসবে। সোশ্যাল/ইলেক্ট্রনিক্স/প্রিন্ট মিডিয়ায় গুজব ও অপপ্রচার রোধকল্পে অনলাইন নজরদারির মাধ্যমে যেকোনও ধরনের চক্রান্ত প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিএমপি’র প্রতিটি থানায় ভাড়াটিয়া এবং প্রতিটি মেসের সদস্যদের তথ্য হালনাগাদপূর্বক সন্দেহজনক বাকিদের তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে ডিবি এবং সিটিটিসি’কে অবহিত করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনাররা নিজ নিজ বিভাগ এলাকায় থানা/ ফাঁড়িতে নিয়োজিত অফিসার ফোর্স, থোক বরাদ্দের ফোর্স এবং থানায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে ব্লক রেইড, চেকপোস্ট স্থাপন ও তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কোনও অপরাধ বিভাগের কোন বিশেষ পরিকল্পনা থাকলে এবং সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফোর্সের প্রয়োজন হলে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস), ডিএমপি, ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করে সমন্বয় করবেন। অপরাধ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে গোয়েন্দা বিভাগ ও সিটিটিসি কর্তৃক পৃথক পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক ব্লক রেইড/তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করবেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার অপারেশন্স বিপ্লব কুমার সরকার রবিবার (১৩ আগস্ট) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্লক রেইড প্রতি মাসেই চলমান থাকে। ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ব্লক বা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকে এ মাসকে কেন্দ্র করে। সব ধরনের বিষয় মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে ডিএমপি।’