• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

মাইলকে মাইল সাইকেলে পাড়ি দিয়ে হাদিস পড়ান তিনি

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৩

গ্রামের মেঠোপথ বলতে যা বোঝায় তার বাড়ি থেকে মাদ্রাসা পর্যন্ত যে সড়কটি চলে গেছে, এটা ঠিক এমনই। আশপাশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও এই রাস্তাটি কাঁদামাটির, মানে কাঁচা। এ জন্য মাদ্রাসায় গিয়ে হাদিস পড়াতে বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেলে করে আসা-যাওয়া করতে হয় বর্ষীয়ান এই আলেমকে। এতে প্রতিদিন অন্তত ১০ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেল চালান তিনি। কারণ, এ পথে বিকল্প আর কোনো যানের চলাচল নেই।

আলোকিত এই মানুষটি হলেন মাওলানা আবুল খায়ের। বয়স ৭৪ বছর। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর গ্রামের মরহুম আব্দুস সামাদ মোল্লা তার বাবা। মাওলানা আবুল খায়ের বিগত ৪৬ বছর যাবৎ জেলার সালথা উপজেলার বাহিরদিয়া গ্রামে অবস্থিত দেশের অন্যতম প্রাচীন একটি কওমি মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া বাহিরদিয়ার (বাহিরদিয়া মাদ্রাসা) মুহাদ্দিস হিসেবে দ্বীনের খেদমত করছেন।

১৯৭৫ সালে জামিয়া কোরআনিয়া লালবাগ থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। এখানে তৎকালীন সময়ের শীর্ষ ও বুজুর্গ আলেমদের শিষ্যত্ব লাভে ধন্য হন। তার উল্লেখযোগ্য ওস্তাদরা হলেন মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর, দরসে মেশকাতের লেখক মাওলানা ইসহাক, বোখারি শরিফের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদক শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মুহাদ্দিস সাহেব হজুর নামে পরিচিত মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ (রহ.)। লালবাগে পড়ার আগে তিনি বাহিরদিয়া মাদ্রাসা, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.) কর্র্তৃক প্রতিষ্ঠিত গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা ও পুরান ঢাকার জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষে কিছুদিন পর ওস্তাদদের পরামর্শে নিজের দীর্ঘদিনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাহিরদিয়া মাদ্রাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং আজ অবধি এ প্রতিষ্ঠানটিতেই কোরআন, হাদিস, ফিকহ, তাফসিরসহ দ্বীনের নানা বিষয়ে পাঠদান করে চলেছেন।

এই মানুষটি ঘরকোনা হলেও সময়ের কীর্তিমান মানুষেরা তাকে ঠিকই চিনতে পেরেছেন। একাধিক বুজুর্গ আলেম উম্মাহর দাওয়াতি ও আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে তাকে খেলাফত ও এজাজত প্রদান করেছেন। ছুটফা হুজুর নামে খ্যাত মাওলানা খলিলুর রহমান (রহ.) তাকে সর্বপ্রথম খেলাফত দেন। পরে পাকিস্তানের শাহ হাকিম মোহাম্মদ আখতার (রহ.)-এর খলিফা কিশোরগঞ্জের মাওলানা ইসমাঈল থেকেও খেলাফতপ্রাপ্ত হন। তিনি এলাকায় ‘দাদপুর হুজুর’ নামে সমধিক পরিচিতি। মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি ওয়াজ মাহফিলেও সুন্দর ও তাত্ত্বিক আলোচনা করায় তার বেশ সুনাম রয়েছে।

তার বিগত ৪৬ বছরের খেদমতের সময়ে বাহিরদিয়া মাদ্রাসায় ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার সাক্ষী এই আলেম। গত বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে চার বছরের মতো প্রতিষ্ঠানটির মুহতামিমের দায়িত্বও পালন করেছেন। বোখারি শরিফসহ হাদিসের আরও একাধিক কিতাব পড়াচ্ছেন গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে। তার হাতেগড়া ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় জায়গায় খেদমত করছেন। তার সাদামাটা ও সহজ-সরল জীবনযাপন যেকোনো খোদাপ্রেমী মানুষের জন্য ঈর্ষার। দাদপুরের মতো এমন সাধারণ একটি গ্রামে তার মতো একজন মহান মানুষের জন্ম সত্যিই সেখানকার মানুষের জন্য বড় গর্বের। অনেক বড় হয়েও নিভৃতে দ্বীনের খেদমত করে যাওয়াটাই যেন তার জীবনের মহান ব্রত। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি আমাদের ওপর মহান এই মানুষটির ছায়া আরও দীর্ঘ হোক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ