স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় ন্যূনতম দুবার আল্ট্রাসনো করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় সনোগ্রাফি (আল্ট্রাসনো) পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না বা থাকলেও তা কখন করা উচিত তা নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় আছে। চিকিৎসকের মতে, ক্লিনিক্যালি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার জন্য এই পরীক্ষা জরুরি নয়। অনেকের মতে, এমন কিছু জটিলতা আছে, যা সঠিকভাবে নিরূপণ করতে সনোগ্রাফি একটি অন্যতম মাধ্যম, যা শুধু শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা দুরূহ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় ন্যূনতম দুবার এই পরীক্ষাটি করা উচিত। কিন্তু তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করা হলে যেমন তথ্যবহুল হয়, আবার অসময়ে বারবার না করে ব্যয়ও সংকোচন করা যায়। নির্ধারিত সময়সীমা দুটি হল- গর্ভাবস্থার ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে (শেষ মাসিক শুরু হওয়ার দিন থেকে সপ্তাহ গণনা করা হয়) ও গর্ভাবস্থার ৩২-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে। এ ছাড়া ১৮ সপ্তাহের আগে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
১৮-২২ সপ্তাহ
* ভ্রূণের সঠিক বয়স নির্ণয় হয়।
* জরায়ুতে একটপিক ভ্রূণের অবস্থান আছে কিনা জানা যায়।
* শিশুর শারীরিক জটিলতা বা বিকলাঙ্গতা নির্ণয় করা যায়।
* জরায়ুতে ফুলের অবস্থান নির্ণয় করা যায় এবং মায়ের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা জানা যায়।
* জরায়ুতে টিউমার বা অন্য কোনো জটিলতা রয়েছে কিনা অথবা থাকলেও তা প্রসবে জটিলতা সৃষ্টি করবে কিনা জানা যায়।
৩২-৩৬ সপ্তাহ
* শিশুর বৃদ্ধি জটিলতা আছে কিনা তা জানা যায়।
* শিশুর বিকলাঙ্গতা নিরূপণ করা যায়, যা প্রথম আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে নির্ণয় হয় না।
* গর্ভের শিশুর প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
* জরায়ুতে সঠিক অবস্থান জানা যায়।
* জরায়ুর পানির পরিমাপ করা যায়।
* অন্যান্য জটিলতা, যেমন ফাইব্রয়েড, ওভারিয়ান টিউমার ইত্যাদি নিরূপণ করা যায়।
১৮ সপ্তাহের আগে
১৮ সপ্তাহের আগে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-
* পজিটিভ স্টিক টেস্ট সব সময় গ্রহণযোগ্য নয়। কিছু হরমোন সংক্রান্ত জটিলতায় এটা পজিটিভ (দুই দাগ) হতে পারে। অর্থাৎ স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা প্রমাণের জন্য পজিটিভ টেস্ট যথেষ্ট নয়।
* গর্ভের সঠিক বয়স নির্ণয় করা যায়।
* ভ্রূণের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। যেমন জরায়ুর ভেতরে না বাইরে (এক্টোপিক প্রেগনেন্সি)।
* ভ্রূণের সংখ্যা নির্ণয় হয় (এক বা একাধিক)।
* মোলার প্রেগন্যান্সি কিনা তা যাচাই করা যায়।
* তলপেটের কোনো টিউমার যা কিনা গর্ভধারণের মতো উপসর্গ প্রকাশ করে তা চিহ্নিত হয়।
* কোনো জরায়ু বা ওভারিয়ান টিউমার আছে কিনা বা শিশুর সঠিক বৃদ্ধি বা স্বাভাবিক প্রসবের অন্তরাল ইত্যাদি চিহ্নিত করা।
মূলত আল্ট্রাসনোগ্রাফি এমন একটি পরীক্ষা, যা সঠিক সময়ে, উৎকৃষ্ট পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে একটি সুস্থ শিশু জন্ম দেয়া যায়। এই পরীক্ষাটি সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে করার মাধ্যমে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, রেডিওলজি বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল