ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি॥
‘ভর্তির টাকা ফেরত না দিক, আমার পোলারে নিয়া যামু, মাদরাসায় পড়ামু না’…! এক ছাত্রের পিতা বলছিলেন। আরেক নারী তার সন্তানকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন- আমার আর মাদরাসা লাগতো না, পড়াইতাম না’।
ময়মনসিংহের ভালুকায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বর্বর নির্যাতনের শিকার তাওহিদুল ইসলাম (১০) নামে এক শিশু ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে রোববার (৪ মার্চ) রাতে। ওই মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর অভিভাবকগন বিভিন্ন মন্তব্য করছিলেন আর তাদের সন্তানদের বাড়ী নিয়ে যাওয়ার সময় আতংকে ছিলেন।
জানাযায় ভালুকার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামের কয়েশ মিয়ার পুত্র জামিরদিয়া মাদরাসায়ে ওমর (রাঃ) হাফিজিয়া এন্ড ইসলামী কিন্ডার গার্টেনের হেফজ্ শ্রেণীর ছাত্র তাওহিদুল ইসলাম ৩ মার্চ রোববার রাতে ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করে। অভিযুক্ত শিক্ষক ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরনিখলা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে হাফেজ আমিনুল ইসলাম ।
তাওহিদের পিতা জানান তার ছেলেকে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আমিনুল ইসলাম পড়া মুখস্থ না করার কারনে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বুকের পাজরের হাড় ও একটি পা ভেঙ্গে ফেলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। বিষয়টি গোপন রেখে খেলা করতে গিয়ে আঘাত পেয়েছে বলে তাদের কাছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কয়েকদিন আগে তাওহিদকে রেখে চলে যান। পরে তাওহিদ তার বাবা মা ও দাদীর কাছে ঘটনা খুলে বলেন। এর পর তার অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তারা তাওহিদকে প্রথমে ভালুকা পরে চুরখাই কমিউনিটি ব্যাজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৪ মার্চ রোববার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকায় রেফাড করা হয়। রোববার মধ্যরাতে তাওহিদ ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।
এ ঘটনায় ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক এনামুল হককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। অপরদিকে হাফেজ আমিনুল ইসলাম ঘটনার পর হতে পলাতক রয়েছে। তাওহিদের মা হাসনা হেনা জানান প্রায় চার বছর পূর্বে ছেলেকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করেন, বর্তমানে সে ১৮ পারা কোরআন মুখস্থ করেছিল, কিন্তু মাদ্রাসা থেকে ছেলের লাশ বাড়ীতে আসবে কখনও ভাবেননি। সোমবার সরেজমিন ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখাযায় ছোট ছোট ছেলেরা ভিতরে বাহিরে দৌড়াচ্ছে, ওই সময় কোন শিক্ষককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোন কোন অভিভাবক তাদের শিশুদের নিয়ে যাচ্ছেন।
তাওহিদের সহপাঠি নূর আলম ও মিনহাজ সহ সকলেই জানান ২৩ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাতে পড়া না পারার কারনে ওই হাফেজ মোটা একটা লাঠি দিয়ে তাওহিদকে মেরেছিলো। এ ব্যাপারে ওই মাদ্রাসার সভাপতি আঃ হামিদ জানান বিষয়টি তিনি জানতেন না সোমবার সকালে জানতে পেরেছেন। এদিকে ঘটনার পর হতে আবাসিক ছাত্রদের মাদ্রাসায় ফেলে সকল শিক্ষকরা গা ঢাকা দিয়েছে। যে যার মত ছাত্রদের নিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভালুকা মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মামুন অর রশিদ (পিপিএম) জানান লাশ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।