• সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ফ্যাসিস্ট আমলা-মিডিয়া আওয়ামী পুনর্বাসনে সমন্বিতভাবে কাজ করছে : হাসনাত ‘বোমা’ বিস্ফোরণে বিচ্ছিন্ন হলো শিশুর কব্জি ১৯ টাকা দাম বাড়ল এলপি গ্যাসের পশ্চিমাদের উদ্বেগ বারিয়ে নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করলো ইরান রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ চাষিদের মন্ত্রীত্ব হারানো টিউলিপের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের অপরাধ সংস্থা উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণ হলো চাঁদাবাজি: অর্থ উপদেষ্টা ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম পর্ব রাস্তায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট নারীরা: উমামা ফাতেমা ঢাবিতে প্রথমবারের মতো হলো হিজাব র‍্যালি

রামগঞ্জে সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ

আপডেটঃ : শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি প্রতিনিধি॥ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌর আউগানখীল সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত দুই বছর আগে পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় মেরাজ হোসেন সিয়াম নামে ৪র্থ শ্রেনীর এক ছাত্রকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া সেই প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে অভিভাবকদের মধ্যে ও এলাকাব্যাপী চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্যও। তারা জানান, প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম দীর্ঘ ১১ বছর অত্র স্কুলের দায়িত্বে থাকায় তিনি কাউকেই পাত্তা দেননা । তিনি খামখেয়ালিপনায় যখন যা মনে চায়, তাই করেন। এমনকি স্কুলের ব্যাপারে যেকোন সিদ্ধান্ত তিনি একাই নেন। ম্যানেজিং কমিটির লোকদের সাথেও আলাপ করেননা।
প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগমের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রামগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দৌলতউর রহমানের নিকট অভিযোগ পত্র দায়ের করেছেন ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য ও ভুক্তভোগী অভিভাবকগন।
অভিযোগপত্রের অনুলিপি জমা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ইউছুপের নিকট। এছাড়াও অভিযোগ পত্রের অনুলিপি ডাকযোগে পাঠিয়েছেন, জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক  প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর।
অভিযোগপত্র ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আউগানখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শেষে অভিভাবকগন প্রশংসাপত্র/ সার্টিফিকেট নিতে গেলে তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিমাসে মাসিক পরীক্ষা নেওয়ার নাম করে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী থেকে অর্থ আদায় করেন বলে জানা যায়।
৫ম শ্রেণীর জন্য ৪০ টাকা, ৪র্থ ও ৩য় শ্রেণীর জন্য ৩০ এবং ২য় ও ১ম শ্রেণীর জন্য ২০ টাকা হারে প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর থেকে প্রতিমাসে মাসিক পরীক্ষার জন্য এ টাকা নিয়ে থাকেন প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম। এছাড়াও শিশু শ্রেণী ও প্রথম শ্রেণীতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি বাবদ অতিরিক্ত অর্থও আদায় করেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানায়।
জানা যায়, প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম বেশিরভাগ সময়ই স্কুলে ১০টার পর আসেন এবং স্কুল চলাকালীন সময় প্রায়ই তিনি স্কুল থেকে তার ব্যক্তিগত কাজে বাহিরে যান। সাময়িক পরীক্ষার মার্কশীট দেওয়ার সময় ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে থাকেন।
কয়েকজন অভিভাবক ও সচেতন মহল অভিযোগ করেন, স্কুলের দপ্তরী থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে থালাবাসন দোয়া, টয়লেটের পানি নেওয়া, স্কুল ঝাড়– দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করান নিয়ম বর্হিভূতভাবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর সরকারি ছুটি না পেয়েও লক্ষ্মীপুরের একটি বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও গত ১ ডিসেম্বর চন্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে পরীক্ষার ফি ৩০ টাকার পরীবর্তে ১০০ টাকা করে অত্র স্কুলের প্রায় ২০ জন পরীক্ষার্থীর থেকে নিয়েছেন।
সুমন হোসেন ও মাসুদ হোসেনসহ ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগমের অনিয়ম দিন দিন বেড়েই ছলছে। আমরা তাকে অনেকবার সাবধান করা সত্ত্বেও তিনি আমাদের কথা শুনছেননা। বাধ্য হয়ে আমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেছি। স্কুলের যেকোন ব্যাপারে তিনি একক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আমাদের কোন পরামর্শ নেননা। অভিভাবকদের সাথে প্রায়ই খারাপ আচরণ করেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সোববার দুপুরবেলা স্কুল খোলা রেখে স্কুলের সকল শিক্ষক বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছেন। পরে ৪টার কিছুক্ষণ আগে স্কুলে এসে ছাত্র-ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে দেন।
মাহবুবুর রহমান রাব্বানী নামে একজন অভিভাবক জানান, তার বোন সাদিয়া আক্তারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা সার্টিফিকেট আনতে গেলে সাজেদা বেগম তার কাছে ৫শত টাকা দাবী করে। টাকা দিতে রাজিনা হলে তিনি শিক্ষকদের খাবার খাওয়াতে বলেন। পরে খাওয়াবো বলি। পরে ঢাকা যাওয়ার কারনে স্কুলে আর যাওয়া হয়নি।
কিন্তু গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি আমাকে স্কুলে দেখে আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন।
সুফিয়া বেগম নামে একজন অভিভাবক জানান, আমার মেয়ে মারিয়া অত্র স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রতিমাসে পরীক্ষার ফি ৪০ টাকা দিলেও গত মাসে টাকা না থাকায় ৩৫ টাকা দেই। কিন্তু সাজেদা ম্যাডাম ৫ টাকার জন্য আমার মেয়েকে আবার বাড়িতে পাঠায়।
এ ব্যপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম জানান, বিদ্যালয় মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় বিদ্যালয়ের মিটার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সুমন তাকে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করে। এছাড়া বিদ্যালয়ের বে-দখলকৃত জমি উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালালে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু ষড়যন্ত্রমূূলক অভিযোগ দাখিল করে। এসব ঘটনায় আমি রামগঞ্জ থানায় সাধারন ডায়েরী করতে বাধ্য হয়েছি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দৌলতুর রহমানকে বেশ কয়েকবার তার ব্যক্তিগত মোবাইলে কল করেও বক্তব্য নেয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু ইউছুফ জানান, এ ব্যাপারে আমি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে পূর্বে একবার আলোচনা করেছি। আশা করি তদন্তপূর্বক শীগ্রই মূল ঘটনা উন্মোচন হবে আশা করছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ