রংপুর অফিসা॥
‘মা-বাবাই সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। যতই কষ্ট-যন্ত্রনা হউক না কেন, মা-বাবারা চান না সন্তানরা অমঙ্গলে থাকুক। সন্তানকে অভিশাপও দেন না কখনও । সবসময় তারা কামনা করেন সন্তানের সাফল্য। কিন্তু এসব মা-বাবাই এক সময় সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তখন তাদের কাছে আপনজন বলতে কেউ না থাকলেও কেউ না কেউ এগিয়ে আসেন। ঠিক তেমনেই একজন পীরগাছা উপজেলার রাজেকা বেগম। সামান্য বীমা কর্মী হয়েও বেতনের অর্ধেক টাকা ব্যয়ে তিনি নিজ উদ্যোগে স¦ামী-সন্তান হারা বৃদ্ধদের জন্য গড়ে তুলেছেন বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র।
পীরগাছা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিনে এবং রংপুর-সুন্দরগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়কের কৈকুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের পাশে একটি বসতবাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছেন ইতিহাসখ্যাত দেবী চৌধুরাণী বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র। আর কেন্দ্রে বর্তমানে রয়েছেন ভাগ্যহীন অর্ধ শতাধিক মা-বাবা। যারা জীবনের পড়ন্ত বেলায় আপন করে পেয়েছেন বীমা কর্মী রাজেকা বেগমকে। সরকার বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে দেখভালের জন্য আইন করলেও আশ্রয় বঞ্চিত মা-বাবারা চান না সন্তান আসামীর কাঠগড়ায় দাড়াতে করাতে। বর্তমানে এ কেন্দ্রটিতে তিন বেলা উন্নত মানের খাবার, চিকিৎসা সেবা, ঔষধ, পোশাক-পরিচ্ছেদসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বৃদ্ধরা। তাদের জন্য প্রতিদিন গড়ে ব্যয় করা হয় কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। রাজেকা বেগমের একার পক্ষে এ ব্যয় বহন করা সম্ভব না হলেও কতিপয় দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পার করছেন এ ক্লান্তিকাল।
সরেজমিনে গিয়ে এক বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধরা কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ তফসি পড়ছে, কেউ কেউ ভিন্ন কাজে ব্যস্ত। এসময় বৃদ্ধা নছিম উদ্দিন (৭২), জাহানারা বেওয়া (৮০), সফুরন বেওয়া (৭৩) সহ বেশ কয়েকজন বৃদ্ধা জানান, পড়ন্ত বেলায় নিজেদের করুণ-কাহিনী। তারা বলেন, আশ্রয়দাতা রাজেকা বেগম আমাদের মা-বাবা বলে ডাকেন। সেই আমাদের শেষ সম্বল।
এসময় বীমা কর্মী রাজেকা বেগম জানান, আমি প্রতিদিন বীমার কাজে গ্রাম-গঞ্জে ঘুরি। এসময় অনেক ভবঘুরে বৃদ্ধকে ভিক্ষাবৃত্তি সহ অসহায় অবস্থায় দেখতে পাই। পরে বিবেকের তাড়নায় প্রথম অবস্থায় কয়েকজনকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেই। এরপর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এশটি বসতবাড়ি ভাড়া নিয়ে বৃদ্ধা আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলি। এসব মা-বাবাই আমার আপনজন। আমি নিজে যা খাই, তাদেরকেও তা খাওয়াই। তবে আর্থিক সংকট থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। পীরগাছা সমাজ সেবা অফিসে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রটি রেজিস্ট্রশন সহ আর্থিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করা হলেও দীর্ঘদিনেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র সম্পর্কে অবগত হয়েছি। সময় মত দেখে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।