এস এম সালাহউদ্দিন দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি॥
খুন, হুমকি, চাঁদাবাজি, দখল বানিজ্য, অস্ত্রের মহড়া, জোর-জুলুম,অত্যাচার-নিপিড়ন এসব এখন তিতাসবাসীর নিত্যসঙ্গী। একের পর এক হত্যা,গুম-খুনের ভয়ে তিতাসবাসী আজ চরম আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায়।এ যেন এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরি।
তিতাসবাসীর ঘর কিংবা বাহির কোথাও নিরাপত্তা নাই। সে সাথে যোগ হয়েছে মাদকের ভয়াল থাবা। মাদকাসক্তদের নেশার টাকার যোগানের জন্য মাদকসেবীরা প্রতিনিয়ত একটি গ্রুপেই যোগ দিচ্ছেন। সে গ্রুপটির নাম সোহেল শিকদার গ্রুপ। এ গ্রুপে যোগ দিলে মাদক কিংবা টাকার অভাব হয় না। সে সাথে বোনাস হিসেবে যোগ হয় ক্ষমতা। যার অপব্যবহার করা যায় মন ইচ্ছামত। কেননা এ গ্রুপের ভয়ে শুধু সাধারন জনগনই নয় ভয়ে তটস্থ থাকেন প্রশাসনও।
উল্লেখ্য তিতাসে এ পর্যন্ত চারজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ঘটনায় শতাধিক ব্যাক্তি খুন হয়েছেন।
এ গ্রুপের প্রধান হোতা সোহেল শিকদারসহ তার একাধিক অনুসারীদের নামে হত্যা মামলাসহ ডজন খানিক করে মামলা রয়েছে। বিশেষ করে জিয়ারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন এবং যুবলীগ নেতা আলম হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামী এ সোহেল শিকদার গ্রুপ।
এ গ্রুপের তিন নক্ষত্র সোহেল শিকদার ওরফে দাদা, নুর মোহাম্মদ লালন শিকদার ও নাজমুল হাসান কিরন ওরফে ছেঁচড়া কিরন গত ২০১৭ সালের ১৫ আগস্টে কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক, তিতাস উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক ও বলরামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুর নবীর উপর হামলা করে এবং তার আকালিয়ার কার্যালয় ভাংচুর,চেয়ার টেবিল ভাংচুরসহ অফিসে টানানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাংচুর করে আনন্দ উল্লাস করেছিলেন বলে জানাযায়। এ ঘটনার আগে এ বাহিনীর ক্যাডাররা নুর নবী চেয়ারম্যানকে তিতাস উপজেলা পরিষদ থেকে অপহরনের চেষ্টা চালায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসীন ভূইয়া ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চলা এ বাহিনীটি ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির উপজেলা সভাপতি মো. সালাহউদ্দিন সরকারের পক্ষে টাকার বিনিময়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট কেটে নির্বাচিত করতে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে।এছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনেও সোহেল সিকদারের এই গ্রুপটি শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থী রিয়ার এডমিরাল আবু তাহেরের বিপক্ষে গিয়ে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করে। ২০১৬ সালের ২৮ মে ইউপি নির্বাচনে ৩নং বলরামপুর ইউপি নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী নুর নবীর নৌকা প্রতীকের ব্যাজ লাগিয়ে বুথের ভিতরে গিয়ে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট কাটার অভিযোগ রয়েছে।
২০১৭ সালে কোরবানীর ঈদে পশুর চামড়ার সিন্ডিকেট করে বাতাকান্দি বাজার থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার লুটে নেয়। নিজেরা সিন্ডিকেট করে কাউকে কিনতে দেয় নি। যারা পাইকারী চামড়া ক্রয় করেছে তাদের কাছ থেকে কম দামে জোর করে বিক্রি করতে বাধ্য করেছে।
১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ইং তারিখে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপজেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক মো. জাকির হোসেনকে বেদম প্রহার করে তার কাছে থাকা ২টি মোবাইল সেট কেড়ে নেয় এবং পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সোহেল সিকদারের বাহিনী।
সোহেল সিকদারের ছোট ভাই লালন ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই তিতাস উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি বদিউল আলমকে সন্ধ্যায় তুলে নিয়ে যায় গাজীপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে। ৩০ জুলাই লালপুর নদীতে ভাসমান অবস্থায় আলমের গলিত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। বর্তমানে লালন সিকদার ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সালিশ-বিচারে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে গুন্ডা হিসেবে গিয়ে বিচারের রায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে তার সাথে তিতাস থানা পুলিশের রয়েছে একটি অলিখিত চুক্তি। থানায় মামলা করতে গেলে তিতাস থানা পুলিশ লালনের কাছে পাঠিয়ে দেয় এবং চুক্তি অনুযায়ী লালন মামলার টাকার একটি অংশ পায়। এই কাজটি তখন হয় যখন থানা পুলিশ মামলা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে কিংবা মামলা উঠাতে বা অন্য কোন ঝামেলায় পড়ে।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ইং বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর নবী তিতাস থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন সোহেল সিকদার ,লালন সিকদার এবং কিরনের বিরুদ্ধে। তিনি উল্লেখ করেন ১৫/৮/২০১৭ইং বিকাল ৩টায় তারা তিনজন নুর নবী চেয়ারম্যানের দক্ষিণ আকালিয়াস্থ অফিসে গিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে তাকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। অফিসে না থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। ২৬/১২/২০১৭ইং সন্ধ্যা ৭.১২ মিনিটে লালন সিকদার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের নিজের আইডিতে প্রকাশ্যে পোষ্ট দেন “পারভেজ,নূরনবী তরা রেডি থাক তর কোন বাপ আছে বাঁচায় দেখি”। জীবন হানির আশঙ্কায় তিনি এই জিডি করেছেন বলে জানান নূর নবী চেয়ারম্যান। এখনো তাকে এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকারকে হত্যার চেষ্টা করছে সোহেল-লালন-কিরন গংরা। তারা জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানান।
সোহেল সিকদার,লালন সিকদার এবং কিরন তিন জনের জীবন রহস্যে আবৃত। সোহেল সিকদার ছাত্রলীগ নেতা মাসুম হত্যা মামলার প্রধান আসামী।সোহেল সিকদারের নির্দেশে গত ২০১৫ সালের ১৫ মে মাসুমকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে।
তিতাস থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম টিপু জানান,সোহেল শিকদার গংদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। একাধিক মামলায় তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। মহমান্য আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন। আমার কাজ তাদের ধরে আদালতে সোপর্দ করা আমি সেটা করেছি। বাকিটা আদালত করবেন।
সোহেল সিকদারের ত্রাসের রাজত্বে অসহায় তিতাসবাসী। প্রাণ ভয়ে সোহেল সিকদারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। শুধু সাধারণ জনগণ নয় আতঙ্কে রয়েছেন আ’লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। সোহেলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে পরিত্রাণ চায় তিতাসবাসী। শুধু সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নয় তার মাদক ব্যবসা তিতাসের যুব সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। দাদার এই অসামাজিক কর্মকান্ড থেকে পরিত্রান চান সবাই।