• মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রোডম্যাপ সাজাতে ব্যস্ত সব দল

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩

সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সাত মাসের বেশি সময় হাতে নেই। আইন অনুযায়ী, আগামী বছরের- অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। সব মিলিয়ে চলমান সময়টি আগামী নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর এ অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়া নিয়ে মুখে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা যে যাই বলুক, আসলে তারা নির্বাচনের দিকেই এগোচ্ছেন। ছোট-বড় সব দলই নিজ নিজ নির্বাচনি মাঠ ও নির্বাচনি কৌশল ঠিক করতে এখন মরিয়া। সব দলই এখন রোডম্যাপ সাজাতে ব্যস্ত।

নির্বাচনপূর্ব এই সময়টাতে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দিকেই নজর বিদেশিদেরও। তারাও এ দেশের রাজনৈতিক হালচালের খোঁজ-খবর রাখছেন। কেমন হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনব্যবস্থা, সে নিয়েও তৎপরতা রয়েছে তাদের।

এদিকে বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো বলছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে তিন-চার মাসের মধ্যেই এক দফা আন্দোলনে যাবে দলটি। সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে চায় বিএনপি। বিগত দুই নির্বাচনের আগে ‘ব্যর্থ আন্দোলনে’র অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই আন্দোলনের রোডম্যাপ সাজাচ্ছে তারা। তৃণমূলকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠ পর্যায়ে দলকে গোছাতে গ্রহণ করেছে নানামুখী উদ্যোগ। তার অংশ হিসেবে গতকাল সারাদেশের মহানগরীর সব থানা এবং উপজেলায় দুই ঘণ্টা যুগপৎ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন ‘তৃণমূল থেকে পর্যায়ক্রমে এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়া হবে। সরকার দাবি না মানলে ধাপে ধাপে রাজধানীতে বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সরকারের উন্নয়নের বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন ক্ষমতাসীনদের। শরিকদের নিয়ে ইতোমধ্যেই সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- প্রচারের কাজ শুরু করেছে দলটি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগের প্রশংসা থাকলেও দ্রব্যমূল্যের লাগাতার ঊর্ধ্বগতি তাদের এ সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। বাজারে স্থীতিশীলতা আনাই দলটির এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিএনপিকে নির্বাচনে আনাও সরকারের জন্য আরেক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ প্রচার করছে বিএনপি সরকারের আমলের ‘দুর্নীতি, তারেক রহমানের অপকর্ম, দুঃশাসন, গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিবাদের উত্থান, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত কানেকশন ও আগুন-সন্ত্রাস’ ও বিএনপির নেতিবাচক দিকগুলো।

আর বিএনপি প্রচার করছে, সরকারের ব্যর্থতাগুলো। একইসঙ্গে তৃনমূলকে গোছাতে দলের নিষ্ক্রিয় ও ‘সরকারঘেষা’ নেতাদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি। এছাড়া ক্ষমতায় গেলে বড় পদ দেওয়ার আশ^াস দেওয়া হচ্ছে ত্যাগী নেতাদের ও সমমনা দলগুলোকে। এমনকি বৈঠক করা হয়েছে বিএনপিমনা সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও।

এছাড়া বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধেছে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল। তারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে। এসব দলের বেশির ভাগেরই ভোট ব্যাংক না থাকলেও জোটে দলের সংখ্যা বাড়াতে এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে তাদের এই দুঃসময়ে কাছে টানা হয়েছে। আশ^াস দেওয়া হচ্ছে- দল ক্ষমতায় গেলে জোটের শরিকদের চুক্তি অনুযায়ী মন্ত্রিত্বসহ নানান সুযোগ সুবিধা দেওয়ার।

আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গেও ১৪ দল ছাড়াও কয়েকটি দল ভেতরে ভেতরে সরকারের মতবাদকেই সমর্থন করছে। ১৪ দলে থাকা কয়েকটি দল থেকে সংসদ সদস্যও রয়েছেন। তবে তাদের নিজস্ব তেমন একটা ভোট নেই, নেই জনপ্রিয়তাও। আওয়ামী লীগের পাখায় ভর করেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন এসব দলের নেতারা। সঙ্গত কারণেই, তারা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল বা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সর্বদা মাঠে থাকছেন। এমন কথাই বলছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে তাতে বিএনপি সাড়া না দেয়নি। আবারও উদ্যোগ গ্রহণ করা হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

তবে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘সরকারের পদত্যাগের পর সংলাপের ডাক দিলে বিএনপি সাড়া দেবে।’

তবে এর পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি গতকাল বলেছেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয়।’

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, পবিত্র রমজান মাসের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনকে আরও জোরদার করার নানা পরিকল্পনা করছে বিএনপিসহ বিরোধী সমমনা দলগুলো। তৃণমূলে দল ও অঙ্গসংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ ও আহ্বায়ক কমিটিও সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

বিএনপির চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১০ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সব বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি রয়েছে। বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দলটির ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করছেন, ঘরোয়া প্রস্তুতি সভা করছেন, মতবিনিময় সভা করছেন নেতাকর্মীরা। আগামীতে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের আগে নিজেদের প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন করতে নেওয়া হচ্ছে নানান পরিকল্পনা। একদিকে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি, অন্যদিকে জনমত বাড়াতে ও নিজেদের পক্ষে রাখতে ইস্যুভিত্তিক মাঠে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আলোকে রমজান মাসের মাঝের ১০ দিন কর্মসূচি নিয়ে তৎপর দলটি। এর পরে বিরতি দিয়ে ঈদের পর নতুনভাবে সমমনা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, সারাদেশে নেতাকর্মীর মনোবল চাঙ্গা রাখতে, তাদের সক্রিয় করতে এবং আন্দোলনে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ