চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে ঢাকায় জ্বালানি তেল (ডিজেল) পরিবহন কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে আগামী এপ্রিলে। সবশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জ্বালানি তেল দিয়ে খালি পাইপলাইন প্যাকিং (পূর্ণকরণ) প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্মাণকারী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে প্রায় ৮২ লাখ লিটার ডিজেল পাম্পিংয়ের মাধ্যমে পাইপলাইনে ঢোকানো হয়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। পুরো পাইপলাইনটি পরিপূর্ণ করতে আরও দুই লাখ ১৮ হাজার লিটার ডিজেল পাম্পিং করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম জ্বালানি সরবরাহ পাইপলাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আমিনুল হক বলেন, ‘পুরো প্রকল্পের সবশেষ অনুমোদিত মেয়াদ মার্চে শেষ হবে। খালি পাইপলাইনটি ডিজেল দিয়ে ভর্তি করার কার্যক্রম চলছে। ঢাকায় জ্বালানি পরিবহনের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে মার্চের পরে।
পুরো প্রকল্পের সবশেষ অনুমোদিত মেয়াদ মার্চে শেষ হবে। খালি পাইপলাইনটি ডিজেল দিয়ে ভর্তি করার কার্যক্রম চলছে। ঢাকায় জ্বালানি পরিবহনের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে মার্চের পরে।- প্রকল্পের পরিচালক মো. আমিনুল হক
পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, ‘পাইপলাইনে অপরপ্রান্তে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে হলে আগে খালি লাইনটি পূর্ণ করতে হবে। খালি পাইপলাইন পূর্ণ করতে প্রকল্পের অধীনে তিন কোটি লিটার ডিজেল কেনা হয়েছে। এসব ডিজেল পাইপলাইনে পাম্পিং করা হচ্ছে। পুরো পাইপলাইন পরিপূর্ণ হলেই চট্টগ্রাম থেকে অফিসিয়ালি ঢাকায় জ্বালানি পরিবহন কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত পাইপলাইনের চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে ৭১ কিলোমিটার লাইনে ডিজেল গেছে। এতে ৮২ লাখ লিটার তেল পাইপলাইনে পাম্পিং করা হয়েছে। পুরো পাম্পিং প্রক্রিয়ায় পাইপলাইনটি পরিপূর্ণ করতে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বছরে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের সক্ষমতাসহ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জ্বালানি পরিবহনের সিস্টেম লস কমানো, নৌপথে তেল পরিবহনের বিপুল খরচ সাশ্রয়সহ দ্রুততম সময়ে তেল পৌঁছানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার ফতুল্লা পর্যন্ত আড়াইশ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম জ্বালানি তেল পাইপলাইন নির্মাণের লক্ষ্যে ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুন মাসে সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করে বিপিসি। পরের বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডকে (ইআইএল) পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের অক্টোবরে একনেকের অনুমোদন পায়।
২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকল্পের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে পাঠানো ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারিত ছিল দুই হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে বহুমাত্রিক জটিলতা হয়। একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বাধার মুখে প্রকল্পে কাঁটছাট করে ডিপিপি সংশোধন করে বিপিসি। সবশেষ পদ্মা অয়েল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনী।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দফা সংশোধন হয়ে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর দুই হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকায় প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। গত বছরের ২২ জানুয়ারি তিন হাজার ১৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার এ প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় সরকার। পরে আবারও প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে সবশেষ তিন হাজার ৬৯৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়।
খালি পাইপলাইন পূর্ণ করতে প্রকল্পের অধীনে তিন কোটি লিটার ডিজেল কেনা হয়েছে। এসব ডিজেল পাইপলাইনে পাম্পিং করা হচ্ছে। পুরো পাইপলাইন পরিপূর্ণ হলেই চট্টগ্রাম থেকে অফিসিয়ালি ঢাকায় জ্বালানি পরিবহন কার্যক্রম শুরু হবে।- পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এতে সবশেষ চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয় প্রকল্পের। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দেশে ডলার সংকট ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্প ব্যয়ে প্রভাব পড়েছে। বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা
এদিকে পাইপলাইন প্রকল্প থেকে জ্বালানি পরিবহন খাতে প্রতি বছর ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ সবমিলিয়ে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকার মতো। এতে প্রতি বছর ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। ১৬ বছরের মধ্যে প্রকল্পের বিনিয়োগ উঠে আসার বিষয়ে আশা প্রকাশ করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের সবশেষ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও টেকনোলজি সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা এবং ফুলদী নদীর ১০টি পয়েন্টে বে-ক্রসিংয়ের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনটি স্থাপন করা হয়েছে।
পুরো পাইপলাইনে ২১টি রিমোট অপারেট্ডে শাটআপ বাল্প সংযোজন করা হয়েছে। কোনো দৈব দুর্ঘটনায় সংলগ্ন কাছের বাল্প পয়েন্টে তেল সঞ্চালন বন্ধ করা যাবে। প্রকল্পটি পুরোদমে অপারেশনে গেলে জ্বালানি সরবরাহে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। জানান প্রকল্প পরিচালক।