• রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

আপডেটঃ : শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি॥
দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সদর উপজেলার মাছিমনগর এলাকায় বেকারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করছে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বাইরেও চাকরির সুযোগ তৈরিতে নিরলস কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বেকারত্ব দূরীকরণে ২০০৭ সালে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুরু হয়। ৯৩ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও ৫৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে কেন্দ্রটি পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছর এখানে এসএসসি (ভোকেশনাল) নবম শ্রেণিতে ১৪২ ছাত্রছাত্রী ও দশম শ্রেণিতে ৯৭ ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। নিয়মিত প্রকল্পে ২৩ প্রশিক্ষণার্থী ও স্বনির্ভর প্রকল্পে ২৩২ প্রশিক্ষণার্থী সাতটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এছাড়া সেইফ প্রকল্পের আওতায় ৩০০ প্রশিক্ষণার্থীকে পাঁচটি ট্রেডে ছয় মাসমেয়াদি হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
জানা যায়, সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে এসএসসি (ভোকেশনাল) শিক্ষার্থীদের পাঁচটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, গামের্ন্ট, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন ও আর্কিটেকচারাল ড্রাফটিং উইথ কেড (অটোকেড) প্রোগ্রামে নিয়মিত এবং স্বনির্ভর প্রকল্পের আওতায় বেকারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। সেইফ প্রকল্পের মাধ্যমে হাউজওয়্যারিং, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, রেফ্রিজারেটর অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, অটোমোবাইল ও ব্লক বাটিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে বিদেশগামীদের নানা ধরনের প্রতারণা এড়াতে তিন দিনের প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র দেওয়া হয়। সরকার নির্ধারিত দুইশ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে কীভাবে বিমানে চড়তে হবে, নামতে হবে, বিদেশে নিরাপত্তা, ভাষা, কাজের বিষয়, চুক্তিপত্রবিষয়ক সম্যক জ্ঞান, দেশে অর্থ পাঠানো ও ওইসব দেশের নিয়ম-শৃঙ্খলার ব্যাপারে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সপ্তাহে দুটি ব্যাচে গড়ে ২০০ বিদেশগামী এখানকার প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
সদর উপজেলার বশিকপুর গ্রামের মো. কাউছার সৌদি আরব যাবেন। কারিগরি প্রশিক্ষণ থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ ছাড়া সব কাজ শেষ। প্রশিক্ষণটি আগে ঢাকায় গিয়ে নিতে হতো। এখন নিজ জেলায় এ কেন্দ্র হওয়ায় তার খুব সুবিধা হয়েছে। সদর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকার মহিব উল্লাহ জানান, ডিগ্রি পাস করে তিনি বেকার ছিলেন। গত বছর ছয় মাসমেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। এখন এ সনদ দিয়ে তিনি একটি স্কুলে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন।
রামগতি উপজেলার চরবাদাম গ্রামের স্বামীপরিত্যক্তা আম্বিয়া খাতুন জানান, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ব্লক ও বাটিকের কাজ শিখছেন তিনি। এখান থেকে প্রতি মাসে ৪০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাচ্ছেন। তাতে তার উপকার হচ্ছে। কাজ শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার আগ্রহ তার।
রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের জসিম মিয়া জানান, লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সরকারিভাবে ছয় মাসমেয়াদি রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ তিনি স্বাবলম্বী। এক মাসে তিনি এয়ারকন্ডিশন ও ফ্রিজের কাজ করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেছেন। এ কাজে পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জনের কারণে তার কাজের চাহিদাও ভালো বলে জানান তিনি।
তিন দিনের প্রশিক্ষণ শেষে বিদেশগামী মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, তিনি ওমান যাবেন। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি বিদেশ যাত্রা ও ওমানের ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান লাভ করেছেন। ফলে সে দেশে যাওয়ার পর কোনোভাবে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মির্জা ফিরোজ হাসান জানান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা ও অধ্যয়নরত প্রশিক্ষণার্থীদের সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এছাড়া এখানে বেকারদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও সহযোগিতা করা হয়। বিদেশগামীদের তিন দিনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্ব-স্ব দেশের প্রাথমিক নিয়ম-শৃঙ্খলার ওপর ধারণা দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ