• শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৫২ অপরাহ্ন

জামায়াত, দখলদারিত্বে জড়িত নয়ডা: শফিকুর রহমান

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলদারিত্বে জামায়াত জড়িত নয় মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বিগত সরকারের আমলে ১৭ বছরে অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছি। যারা মানুষকে খুন ও গুম করেছে তাদের বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জ আমার একান্ত স্মৃতিবিজড়িত এলাকা। শিক্ষা জীবন শেষে প্রথম চাকরির সময় সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জকে স্মরণ করে বলেন, কিছুদিন চাকরি করার পর চাকরি ছেড়ে দেশ ও জাতির কল্যাণের কাজে অংশ নিয়েছি।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটায় সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘সুনামগঞ্জের বোরো ধান, বালু-পাথর, মাছ দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধ উর্বর ভূমি। দেশের সবচেয়ে বড় মাদার ফিশারি টাঙ্গুয়া এই সুনামগঞ্জে অবস্থিত। সুনামগঞ্জে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে যা অতীতে কেউ কাজে লাগাতে পারেনি দেশের জন্য। কৃষি শিল্প, ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, হিউম্যান ইন্ডাস্ট্রি (মানব শিল্প) এই তিন শিল্পের সমন্বয়ে যে দেশ গড়ে ওঠবে, সেই দেশকে আর অন্য দেশের কাছে পরনির্ভরশীল হতে হবে না।

তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জ বিশাল সম্ভাবনার জেলা এখানকার কৃষি শিল্পকে ভালো করে কাজে লাগাতে হবে। এই হাওড়া অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের অনেক সন্তানেরা তাদের মেধা বিকাশে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে। এই দেশ অর্থনীতির উর্বর ভূমি হওয়ায় আজ থেকে আড়াই শ’ বছর আগে ভীনদেশীরা রোজগার করার জন্য, তাদের ভাগ্য গড়তে এদেশে আসতো, তাই অতীতে ব্রিটিশরা, পর্তুগিজরা, মোগলরা হুমড়ি খেয়ে আমাদের দেশে এসেছিল। সেই দেশ এখনো গড়া সম্ভব যদি দেশ ও জাতির নেতৃত্বে যারা থাকেন তারা যদি সৎ হন, তাদের কমিটমেন্ট, মিশন-ভিশন যদি ঠিক রাখেন। কিন্তু এখন রাজনীতিতে চলছে ধোঁকাবাজি ও মিথ্যাচার। কথা ও কাজের মিল নেই। যারা এমনটি করে তাদের কাছে দেশ ও জাতি নিরাপদ নয়।

জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের মাথার তাজ পাঁচজন দেশবরেণ্য নেতাকে এক এক করে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়েছে। জেলে যারা ফাঁসি বাস্তবায়ন করেন তাদের মধ্যে একজন আমাকে বলেছিলেন, জীবনে কত মানুষকে ফাঁসি দিতে দেখলাম কিন্তু আপনাদের নেতাদের ফাঁসিটা ছিল খুবই ব্যতিক্রম। যখন ফাঁসির রায়ের আদেশ উনাদের শোনানো হয়েছে, তখন কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর অবস্থা দেখিনি। তারা উচ্চস্বরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। ফাঁসির মঞ্চে তারা কালিমা শাহাদাত পড়তে পড়তে নিজে নিজেই এগিয়ে গিয়েছিলেন। এমন বক্তব্যে অনেক নেতা-কর্মীদের অশ্রুসিক্ত হতে দেখা যায়।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীরা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। এই কিলিং মিশন বাস্তবায়নকারীদের সততা, মানবতা, ন্যায়পরায়ণতা ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ছিল না। এজন্য জঙ্গলে, পাহাড়ে, বনে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। বিনা ভিসায় ও বিনা টিকেটে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দলীয় নিবন্ধন প্রতিহিংসার পরায়ণতায় বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। মনের সব কষ্ট লুকিয়ে রেখে দেশের মানুষের কল্যাণে নেতা-কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। যারা এই বাংলা দেশের নাগরিক তারা সকলেই বাংলাদেশী এখানে মেজরিটি আর মাইনরিটি বলতে কিছু নেই। ধর্মীয় পরিচয় যার যার থাকবে, কিন্তু আমরা সকলেই এই দেশের মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে মিলে মিশে থাকতে চাই। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে নতুন রূপে সাজাতে চাই। আমাদের সংবিধান যে অধিকার দিয়েছে, দেশের সবার জন্য সমান অধিকার। কিছু দুষ্কৃতিকারীদের কারণে ৫ আগস্টের পর দেশের পটপরিবর্তনের সময় জামায়াতে ইসলামীর সকল সহকর্মী, স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে আমাদের ভিন্ন ধর্মের ভাইদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়িঘরও পাহারা দিয়েছেন।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের উপরে যদি কোনো বদনাম থাকে তাহলে সত্য তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের বিচার হোক, কিন্তু বিচার হতে হবে ন্যায় সঙ্গতভাবে। আমি জাতিসঙ্ঘে একটি চিঠি লিখেছিলাম হিউম্যান রাইটস কমিশনকে, বাংলাদেশে ৭২ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে তার একটি সুষ্ঠু তদন্ত করে এর স্বেতপত্র বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করে দেয়া হোক। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ এই কাজটি এখনো করেনি। আমাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করতে বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ উচ্চারণ করে গালিগালাজ দেয়, আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী সারা দেশে ১০ হাজার মানুষের একটি তালিকা তৈরি করেছেন, এর মধ্যে আশি ভাগ হল (আওয়ামী লীগ) তাদের লোক। তাদের লোক হওয়ায় এদের শাস্তির আওতায় আনেননি। এতেই বুঝা যায় যে তারা ভণ্ডামি করে এসব নাটক করেছিল।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা দাবি তুলে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করেছিল, আমরা বৈষম্যহীন সমাজ চাই, ন্যায়বিচার ও ইনসাফ চাই। বৈষম্য দূর করতে জীবন দিয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে দেশের মানুষ। অনেকের লাশ এখনো পর্যন্ত আমরা খুঁজে পাইনি। দেশের মানুষ পচা সমাজব্যবস্থা আর চায়না, আমরা কোনো দিন ক্ষমতায় গেলে সবচেয়ে প্রাধান্য দিব শিক্ষাব্যবস্থাকে। আধুনিক শিক্ষায় তাদেরকে শিক্ষিত করে কাজ করতে দেয়া হবে। তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরে আগামী পথ চলার আহ্বান জানান।

জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য উপাধ্যক্ষ মাওলানা তোফায়েল আহমদ খানের সভাপতিত্বে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এ সময় জেলা জামায়াতের সহ-সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট নুরুল আলম ও মাওলানা আব্দুল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান।

আরো বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী শিশির মনির, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মখলিছুর রহমান, সোনামগঞ্জ জেলা নায়েবে আমির নিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামস উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সুনামগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি মমতাজুল হাসান আবেদ প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ