এস কে কামরুল হাসান (সাতক্ষীরা প্রতিনিধি)॥
চোরাচালানের টাকা পরিশোধ বাবদ হাতিয়ে নেওয়া এক চোরাচালানির বাড়ি নিয়ে রশি টানাটানি শুরু করেছে সাতক্ষীরা শহরের দুই চোরাচালানি। বাড়িটি নিজের দাবি করে মিলন পাল ওরফে গোল্ড মিলন এবং শেখ শফিউল্লাহ (মনি) একে অন্যকে চোরাচালানি আখ্যায়িত করে থানা ও আদালতে মামলা করেছেন। এ নিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে পরস্পর বিরোধী তিনটি সংবাদ সম্মেলন হযেছে।
জানা গেছে জেলার অন্যতম শীর্ষ চোরাচালানি শহরের মিল বাজারের জাহাঙ্গীর হোসেন ও গোল্ডেন মিলন এক সাথে সোনা , ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক এবং ভারতীয় পোশাকসহ অন্যান্য চোরাচালানের সাথে পার্টনারশীপে ব্যবসা করতেন। দীর্ঘকালের চোরাকারবারের সূত্র ধরে জাহাঙ্গীর মিলনের কাছে দেনা হয়ে পড়েন। কিছুদিন আগে অর্থনৈতিকভাবে মার খেয়ে জাহাঙ্গীর ধরাশায়ী হয়ে পড়েন। এই সুযোগে গোল্ডেন মিলন তার কাছে প্রাপ্য ৭৫ লাখ টাকার বিনিময়ে শহরের অদুরে মাগুরা দাসপাড়ার সুরম্য বাড়িটি জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে লিখে নেন নিজের ও স্ত্রী শম্পা রানী পালের নামে। এ ছাড়াও জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীর ও তার বাবা আব্দুস সাত্তার মিলন পালে কাছে ২০১৪ সালে কিছু জমি বিক্রি করে। এই বাড়িতেই গোল্ড মিলন গড়ে তোলেন বালাখানা। রাতে দিনে সেখানে বসতো আড্ডা। আসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকতেন বাড়ির অতিথিরা। এমনকি এক সময় সাতক্ষীরা পুলিশের বড় বড় কর্তারাও সেখানে ওঠাবসা করতেন। মদ খেতেন , বালাখানায় বসে নাচগান উপভোগে মেতে উঠতেন। বাড়িটি ব্যবহৃত হতো চোরাচালানের পন্য পাচার ও টাকা ভাগাভাগির কাজে।
এদিকে হুন্ডি কারবারী ও সোনা চোরাচালানের গড ফাদার মিলন পালের সাথে পুলিশের সখ্য এতোটাই গভীরে যায় যে পুলিশ কোনো সোনা আটক করলে মিলনের সোনার দোকানে নিয়ে তা মাপা হতো। এমনকি তা সোনা কিনা তাও পরিক্ষা করা হতো সেখানে। গরু ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে গরু এনে নগদে তার মূল্য পরিশোধ করতেন নির্ধারিত ব্যক্তি গোল্ড মিলনের কাছে। মিলন সেই টাকার সোনা কিনে পাচার করতো ভারতে। এভাবেই জিরো থেকে হিরো হয়ে ওঠা গোল্ড মিলন পুলিশকেও কব্জা করে ফেলে। কিন্তু এক পুলিশ কর্মকর্তার বদলী জনিত পট পরিবর্তনের ফলে মিলনের রাজত্বে ধ্বস নামে ২০১৬ সালে। কপাল ফেরে মনির। ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর তলুইগাছা সীমান্ত পথে ১৬ কেজি সোনা ভারতে পাচারের সময় গ্রেফতার হয় এক যুবক। এই মামলার অজ্ঞাতনামা হিসাবে গ্রেফতার হয় মিলন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েকটি সোনা চোরাচালানের মামলা হয়। এসব মামলায় মিলন বেশ কিছুদিন ধরে জেল খাটেন।
এদিকে শম্পা রানী পাল গত ২৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে আরেক সংবাদ সম্মেলনে বলেন মিলন পাল স্বর্ন শিল্পী হিসেবে ২০ বছর ধরে সুনামের সাথে ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন তলুইগাছা সীমান্তে মনির বিজিবি কর্তৃক আটককৃত ১৬ কেজি সোনা পাচার মামলায় প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার করানো হয় মিলনকে। এ ঘটনায় মিলন জেলও খাটে। কিছুদিন আগে শহরের কপোতাক্ষ ফিলিং স্টেশনের কাছে এক নারীর কাছ থেকে সাড়ে দশ লাখ টাকার ডায়মন্ড সেট ছিনতাই করে মনি বাহিনী। এ ঘটনার সাথে মিলনকে জড়ানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় মনি। এরপর থেকে মনি বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং তাদের বাড়িতে হামলা চালায়।
জানতে চাইলে মিলন পালের স্ত্রী শম্পা রানী পাল ও শেখ শফিউল্লহ মনি বলেন, তাদের বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থান করা হয়েছে।
তবে জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয়রা বলেন আলোচ্য সুদৃশ্য বাড়িটির মালিক ছিলেন সাতক্ষীরা মিল বাজারের চোরাচালানি মো. জাহাঙ্গীর। দেনার দায়ে তার হাত বদলে বাড়িটি এসেছে গোল্ড মিলনের কাছে। এবার সেটি কিনতে টাকা দিয়েছেন দাবি করে তা দখলে নিয়েছেন আরেক চোরাচালানি কাটিয়া লস্করপাড়ার চোরাচালানি শেখ শফিউল্লাহ মনি। এই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানসহ অন্য পণ্য চোরাচালান মামলা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে । শহরে তাদেরকে মানুষ বড় চোরাচালানি হিসাবে চিহ্ণিত করে । তারা সাতক্ষীরা পুলিশ ছাড়াও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর তালিকায় চোরাকারবারী হিসাবে চিহ্নিত। বাড়িটি নিয়ে তাদের রশি টানাটানি সাতক্ষীরার মানুষের কৌতুহল জাগিয়েছে।