লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি॥ লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই। কলাগাছ ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনার দিয়ে লক্ষ্মীপুরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর পার হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পলিত হলেও লক্ষ্মীপুরে বিভিন্নœ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধ জানানো হয় স্থানীয় ভাবে তৈরি করা কলাগাছ কিংবা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি শহীদ মিনার দিয়ে।
জেলা শিক্ষা অফিস কার্যালয় ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে পাওয়া তথ্য মতে. লক্ষ্মীপুর জেলায় সরকারি প্রাক-প্রাথমিক ও সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৭৩১টি, মাধ্যমিক ও নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৭৮টি, মাদরাসা ১৩৩টি, কারীগরী ও কলেজ ২৮টিসহ মোট ১০৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে তার কোন তথ্য জানাতে পারেনি জেলা শিক্ষা অফিসার।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৫টি উপজেলার ৭৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭২০টিতে নেই শহীদ মিনার। ১৩৩টি মাদরাসার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই নেই কোনো শহীদ মিনার এবং ১৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪০টিতে শহীদ মিনার নেই।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা প্রত্যেক বছর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঠের অনির্ধারিত কোন স্থানে নিজেরাই অস্থায়ীভাবে কলাগাছ ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দিবসটি পালন করে আসছে।
যে সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে সেগুলিও অযতœ ও অবহেলায় পড়ে থাকে বছরের দীর্ঘ সময় ধরে।
শহীদ মিনারের তথ্য জানতে জেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে শিক্ষার্থীরা জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আসলে তারা বাঁশের কঞ্চি কিংবা কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করে দিবসটি পালন করেন। এভাবে বছরের পর বছর যায় তবুও শহীদ মিনার নির্মাণ হয় না। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের দাবী জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী এসএম আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসলেহ উদ্দিন জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের আশপাশের চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শহীদ মিনার নেই। প্রতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি কলাগাছ দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ মিনার তৈরি করে পরদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে থাকি।
কমলনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান জানান, উপজেলার সরকারি-বেসরকারি ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনোটিতেই শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী শহীদ মিনারে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু ইউছুফ জানান, বিগত সভায় এ ব্যপারে বিশদ আলোচনা হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।