বাগেরহাট প্রতিনিধি॥
বাগেরহাটে বনদস্যু ”ডনবাহীনির ১০ জন,ছোট্ট জাহাঙ্গীর বাহীনির ৯ জন, ছোট সুমন বাহীনির ৮ জন বনদস্যু ২৮ টি আগ্নেয়াস্ত্র. ১৪৫ টি .টুটু বোর রাইফেলের গুলি, ৭ টি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি সহ মোট ১১শ ৮১ টি কার্তুজ স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রির সামনে জমা দিয়ে তিন বাহীনির ২৭ জন বনদস্যু আতœ সমার্পন করেছে। এ সময় স¦রাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সুন্দরবনে কাউকে দস্যুতা করতে দেয়া হবে না। শুধু সুন্দরবনই নয় শেখ হাসিনার সাশনামলে গোটা বাংলাদেশের কোথাও কোন দস্যুতা করতে দেয়া হবে না। এখনো সুন্দরবনে যারা বিপথগামী হয়ে দস্যুতা বেঝে নিয়েছে, তাদের বনদস্যুতা ছেড়ে আসার আহবান জানান। একই সাথে হুশিয়ারি উচ্চারন করে বলেন, বাংলাদেশের ভূখন্ডে কোন কোন বনদস্যু- জলদস্যু, সন্ত্রাসী ও জঙ্গির ঠাই হবে না। তাদের সমূলে উপড়ে ফেলা হবে। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের উদ্যোশ্য করে বলেন, যেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করবেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এবারই প্রথম প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে র্যাব নিয়োজিত থাকবে। রবিবার বিকালে বাগেরহাট শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে সুন্দরবনের ৩টি বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স¦রাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মাদক আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যারা এই কাজের সাথে যুক্ত তাদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। সমাজে যারা এই কাজের সাথে জড়িত তারা যদি এইকাজ বন্ধ না করেন তবে মাদক ব্যবসায়ি, অর্থ লগ্নিকারী ও তাদের গডফাদারদের পরিনতি হবে ভয়াবহ। তাদের পরিনাম কি হবে দেশবাসি তা অচিরেই দেখতে পাবেন। মাদকের কারনে আমাদের যুবসমাজকে কোন ভাবেই ধংষ হতে দেয়া যাবে না। মাদক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচারনা করা হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ২০টি বাহিনীর ২১৭ জন সদস্য এপর্যন্ত আতœসর্মাপন করেছে। ৫৪৫জন বনদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ১৩০ জন বনদস্যু বিভিন্ন সময়ে র্যাবের সাথে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। মোট কথা সুন্দরবন থেকে ৮৯২ জন বনদস্যুকে আমরা তুলে আসতে সক্ষম হয়েছি। এই কৃত্বিত্ব শুধু আমাদের নয় – এই কৃতিত্ব এই এলাকার জেলো বাওয়ালীসহ সংবাদকর্মীদেরও। সুন্দরবনের বনদস্যুদের সমস্যা ৪০ বছরের। আমরা চাই খুব শ্রীঘই সুন্দরবনকে সম্পুর্ন ভাবে দস্যুমুক্ত করতে। সুন্দরবনে দস্যুতার কাজে এখনও ছোট, সাহেবআলী ও সাত্তার বাহিনী তৎপর রয়েছে। ওই ৩টি বনদস্যু বাহিনীর উদ্যেশে দৃঢ়তার সাথে ঘোষনা করেন,- আমরা দোকান খুলে নিয়ে বসে থাকবনা। তারা যদি আতœসমর্পন না করে, তাদের গ্রেফতার বা গোলাগুলিতে সুন্দরবন থেকে তাদের নিমূল করার সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবছরের মধ্যে সুন্দরবনকে ক্লিন করতে চাই বনদস্যুমুক্ত করতে চাই। র্যাবের মহাপরিচালক জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহবান রেখে বলেন আতœসমর্পনকৃত বনদস্যুরা যেন হেনস্থা না হয়। তাদেরকে সরকারের বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে পূর্নবাসন কাজে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
খুলনা র্যাব-৬ এর অধিনায়ক (সিইও) খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বাগেরহাট-৩ আসনের এমপি তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট- ২ আসনের এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, বিজিবি খুলানা সেক্টরের প্রধান ব্রিগেডিয়ার খালেক আল মামুন, র্যাব-৮ এর সিইও হাসান ইমন আল রাজীব, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
আত্মসমর্পনকারী বাহিনী ৩টি হল জাহাঙ্গীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনী, ছোট সুমন বাহিনী ও মেহেদী হাসান ওরফে ডন বাহিনী। এ অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের ৩ বাহিনীর ২৭ বনদস্যু ২৮টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৮১ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ স¦রাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে আত্মসমর্পন করেন। স¦রাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১৩টি একনলা বন্ধুক, ৩টি বিদেশী দোনলা বন্ধুক, ৪টি ২২ বোর বিদেশী রাইফলে, ৭টি পাইপগান, ১টি বিদেশী ওয়ান শূটারগানসহ ২৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ৮১টি গোলাবারুদ জমা দেন। অনুষ্ঠানে গত ১৬ জানুয়ারী র্যাবের কাছে আতœসর্মাপনকারী বড় ভাই বাহিনী, ভাই ভাই বাহিনী ও সুমন বাহিনীর ৩৮ সদস্যের হাতে প্রধান অতিথি স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সরকারের অনুদান হিসেবে প্রত্যেক বনদস্যুকে ২০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট তুলে দেন।
আতœসর্মাপনকরী বনদস্যদের মধ্যে রয়েছে ডন বাহিনীর প্রধান মো. মেহেদী হাসান ডন (৩২), জয়দেব মন্ডল(৩৫), মো. খলিলুর রহমান(৪৫), মো. সাইফুল¬ (২৯), মো. আবুল হোসেন ইসলাম(২৬), মো. আজিজুর ইসলাম(২৭), জয়ন্ত বিশ্বাস(৩০), মো. শাহজাহান((৪২), মো. আব্দুর রহমান শেখ (২৮), মো. মাহমুদুল হাসান(২৬), ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৭), মো. কবির সুলতান(৫৫), মো. মনিরুল শেখ(৩৩), মো. শহিদুল শেখ(৩২), মো. আব্দুস সালাম(৪৩), শেখ আল মামুন সোহেল রানা(২৯), মো. সেলিম মোল¬্যা(২৮), মো. ইদ্রিস ডালি(২৮), মো. মিঠু সরদার(৪০), ছোট সুমন বাহিনীর প্রধান মো. সুমন হাওলাদার(২৪), মো. লুৎফর শেখ (৪০), মো. ভুট্টো বয়াতি(২৮), মো. আ. সামাদ মোল¬া(২৬), মো. রিয়াজ শেখ(২৮), মো. ইয়াসিন শেখ(২৯), মো. তরিকুল হাওলাদার(২৩) ও মো. সিদ্দিক হাওলাদার (৩৯)। আত্মসমর্পনকৃত এসব বনদস্যুদের বাড়ী বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।