রংপুর অফিস॥
রংপুরে নদী-নালা আর খাল-বিলে দেশীয় জাতের মাছ খুঁজে পাওয়া দুরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালের বিবর্তন ও রাসায়নিক সারের অবাধ ব্যবহারে এ জাতীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। যদিও বর্ষা মৌসুমে দেশীয় জাতের মাছ পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
জেলা মৎস্য অফিস থেকে জনান গেছে , রংপুর জেলায় বাৎসরিক মাছের চাহিদা ৬৩০৯৫.৭০ মেট্রিক টন ২০১৮ সালে উৎপাদন হয়েছে ৪২০০৫.৭ মেট্রিক টন। মাছের ঘাটতি রয়েছে ২১০৮৯.৯৩মেট্রিক টন । গ্রামাঞ্চলের চীর পরিচিত নানা প্রজাতির দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল এখন সর্বত্র। নদী নালা খাল বিল পুকুর ডোবা সহ মুক্ত জলাশয় গুলো মারাত্বক ভাবে দেশী মাছ শুন্য হয়ে পড়েছে।
রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় এক সময় দেশী প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝে থেকে । হাটে বাজারে গ্রামে গঞ্জে এখন দেশী মাছ চোখে পরে না যদিও মাঝে মধ্যে দেশী মাছ বাজারে উঠে তা বেশী মুল্যে বিক্রয় করতে দেখা যায়। ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে ক্রেতা সাধারন মাছ ক্রয় করতে হিমসিম খাচ্ছে। পুষ্টিগুণে আর স্বাদে ভরপুর এ্ই সব মাছ বাঙ্গালী খাবারে অপরিহার্য একটি উপাদান হিসাবে পরিবেশিত হয়ে থাকতো। ছোটছোট মাছের সাথে ভোজন বিলাসি বাঙ্গালীদের র্স্পকটা খুবই গভীর। তাই তো বলা হয় মাছে ভাতে ব্ঙ্গাাল। ৪১ প্রজাতি দেশীয় প্রজাতির মধ্যে শৈল, গজার, বোয়াল, শিং, মাগুর, কৈ, পুঁটি, পাপদা,টেংরা, মোয়া, বালিয়া, খলিশা, ছোট চিংরী, খাখিলা,চান্দা, ঢেলা, টাকি, চ্যাং গতা, ফলি, চ্যাপলাই, ভেঁদা, খরকুটিসহ বহু প্রকারের মাছ আজ দেখা পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। এগুলোর মধ্যে অবশ্য কয়েক প্রকারের মাছ এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মাছ আজ আর পাওয়া যায় না। স্থানভেদে কিছুৃ কিছু দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও তা সকলের নজরে আসে না। যার কারণে নতুন প্রজন্ম সে সকল মাছের নামও জানেনা এবং চিনতেও পারেনা। ফলে বিলুপ্ত প্রায় এই জাতের মাছ নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। অতি পুষ্টিগুণের দেশীয় জাতের মাছের অভাবনীয় চাহিদার বিপরীতে তা রক্ষায় গড়ে তোলা হয়নি কোন অবকাঠামো।
এদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পিছনে রয়েয়ে অনক কারণ। এর মধ্যে চাষাবাদের জমিতে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার অন্যতম। কেননা চাষের জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় তা গিয়ে পড়ছে নদী-নালা এবং খাল-বিলে। এতে করে মাছের প্রজনন বাঁধাগ্রস্ত হয়ে আজ তা বিলুপ্ত প্রায়। তাছাড়া চাষাবাদের জমিতে যে সকল মাছ জন্ম নিত তা আজ প্রায় শূণ্যের কোঠায়। অবশ্য ভরা বর্ষা মৌসুমে নতুন পানিতে মাছের বংশ বৃদ্ধি হওয়ায় এখনও কিছু কিছু দেশী মাছ মানুষ খেতে পারে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অসচেতন মানুষের কারণেই এই সব মাছ তাদের স্বাভাবিক বংশ বিস্তার করত পারে না। ডিমওয়ালা মাছ ও অপরিপক্ক মাছ ধরে তা খেয়ে ফেলায় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। অপর দিকে চাহিদা থাকায় মানুষ এখন সব জলাশয়ে বিদেশী জাতের মাছ চাষ করছে। এতে করে দেশী জাতের ছোট মাছগুলো তাদের খাবার হিসেবে পানিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সামনে দিনগুলোতে দেশীয় জাতের সব ধরণের মাছ পাওয়া না গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে দেশী জাতের মাছের চাহিদা কতটুকু তা জানার জন্য বই পুস্তকের দরকার নেই। প্রায় শুকিয়ে যাওয়া খাল-বিল, নালায় দল বেঁধে মাছ খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা লক্ষ্য করলেই তা বোঝা যায়। গ্রামের দ্রুন্ত কিশোর-কিশোরীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী মানুষের মাছ ধরার দৃশ্য এর চাহিদার কথা মনে করে দেয়। একটি মাছ ধরার জন্য কেউ পানি ছেঁকে আবার কেউ বা হাতিয়ে চেষ্টা করছে। ঘন্টার পর ঘন্টা চেস্টা করে যে ২/৪টি মাছ পাওয়া যায় তাতেই যেন আত্মহারা মাছে ভাতে বাঙ্গালী সমাজ। তাই তো বিলুপ্ত হওয়া থেকে দেশী জাতের মাছ বাঁচাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে নদী নালা খাল বিলে পানি না থাকায় এসব প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করতে পাচ্ছে না। ফলে মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত কাউনিয়ায় দেশীয় মাছের আকাল বিরাজ করছে।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জয় ব্যানার্জী জানান,কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার,কারেন্ট জালের ছড়া-ছড়ি ও মা মাছের অভয়াশ্রম গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দেশী মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এলাকার মানুষ সচেতন হলে আবার দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
রংপুর জেলা মৎস্য অফিসার ডক্টর মোঃ জিল্লুর রহমান জানান, জেলায় মিঠা মাছের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করা হচ্ছে। তিনিবলেন,জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়,কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার,অপরিমিত কিটনাশক ব্যবহার,জলাশয় দুষন,নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস,উজানে বাধঁ নির্মাণ,নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া,ডোবা জলাশয় ভরাট করা,মা মাছের আবাস স্থলের অভাব,মা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই ধরে ফেলা,ডোবা নালা ছেকে মাছ ধরা,নদী নালায় বানা দিয়ে মাছ ধরা,বিদেশী আগ্রাসী রাক্ষুসে মাছের চাষ ও প্রজননে ব্যঘাত ঘটার কারণে অসংখ্য ডোবা-নালা থাকার পরও র দেশী মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।