মৌলভীবাজার (কমলগঞ্জ) প্রতিনিধি॥
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল গ্রামে প্রভাবশালী কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়ে আছে একটি প্রবাসী পরিবার। ভূমি দখলের অপচেষ্টা চালাতে পাকা ঘরের সিঁড়িতে প্রতিপক্ষের লোকজন জোরপূর্বক বাঁশের বেড়া বসিয়েছে। প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন পরিবার সদস্যরা। ইউপি চেয়ারম্যান ও থানায় অভিযোগ দেয়ার চারদিনেও ঘরের সিঁড়িতে দেয়া বাঁশের বেড়া অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। গত ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় গ্রামের মাসুক মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। অবরুদ্ধ থাকায় পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে ভানুবিল দেখা যায়, ভানুবিল গ্রামের প্রবাসী মাসুক মিয়ার পাকা দেয়ালের ঘর থেকে বের হওয়ার সিঁড়ি জুড়ে সম্মুখভাগে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে মাসুক মিয়ার পরিবার সদস্যরা। মাসুক মিয়ার ছেলে বদরুল ইসলাম বলেন, আমি বাড়িতে না থাকার সুযোগে গ্রামের আপ্তাব আলীর ছেলে গণি মিয়া নিজের লোকবল নিয়ে জোরপূর্বক ঘর থেকে বের হওয়ার সিঁড়ি জুড়ে পুরো উঠানে বাঁশের বেড়া স্থাপন করেছেন। এরপর উল্টো আবার আমাকে মারধোর করার হুমকি দিচ্ছেন। ফলে শিশুদের নিয়ে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আমি আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও কমলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেয়ার চারদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বাঁশের বেড়া অপসারণ করা হয়নি। আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যানের অনুরোধে স্থানীয় ইউপি সদস্য কে মনিন্দ্র কুমার সিংহ সরেজমিনে এসে গণি মিয়াকে বেড়া অপসারনের কথা জানালেও গণি মিয়া বেড়া অপসারণ করতে রাজি হননি। তিনি আরও বলেন, উপরন্ত গণি মিয়া আমাকে মারধোর করার বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা পরিবার সদস্যরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
তবে অভিযোগ বিষয়ে গণি মিয়া বেড়া স্থাপনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার নিজস্ব ভূমিতে বেড়া দিলেও মাসুক মিয়ার ঘরের সিঁড়ির সম্মুখে কোন বেড়া দেইনি। ঘরের সিঁড়িতে মাসুক মিয়ার লোকজন বেড়া দিয়েছেন। মাসুক মিয়া আমার ভূমি দখল করে নেয়ায় আমি কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কে মনিন্দ্র কুমার সিংহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শে সরেজমিনে গিয়ে গণি মিয়াকে ঘরের সিঁড়ি থেকে বেড়া সরাতে অনুরোধ করলেও তিনি রাজি হননি। আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, এই বিষয়ে স্থানীয় মেম্বারকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তবে নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েই বেড়া অপসারনের চেষ্টা করবো।
প্রতিপক্ষ গণি মিয়ার অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার এসআই কৃষ্ণমোহন দেবনাথ বলেন, সরেজমিনে গিয়ে নিজে বেড়া অপসারন করে দিয়েছি। আবার বেড়া দেয়া হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাসুক মিয়ার চেলে বদরুল ইসলামের অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার এএসআই সুশেন দাস বলেন, নিজে সরেজমিনে গিয়ে বেড়া সরিয়ে দিতে গণি মিয়ার লোকদেরকে বলেছি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বুঝিয়ে রাখেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে সাংবাদিকদের সরেজমিন পরিদর্শনের পর এ পরিস্থিতির খবর পেয়ে রোববার সন্ধ্যায় আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: আবদাল হোসেন সরেজমিন ভানুবিল গ্রামে এসে প্রবাসী মাসুক মিয়ার বসতঘরের সামনে বেড়া তুলে নেন এবং বিষয়টি সামাজিকভাবে দেখে দিবেন বলে আশ্বস্থ করেন।