• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন

শমসেরনগর বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালুর অপেক্ষায় প্রবাসী-পর্যটকরা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩

চারদিকে সবুজ চা-বাগান, এর মাঝে রানওয়ে। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে পড়ে থাকা রানওয়েতে ডানা ঝাপটিয়ে আবারো উড়বে উড়োজাহাজ, সেই স্বপ্নে বিভোর চা-অঞ্চলের মানুষজন।

মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমানের ফ্লাইট চালুর জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী ও পর্যটকরা। বিমানবন্দরটি চালু হলে সিলেট বিভাগে পর্যটকদের সুবিধা দিতে পারবে প্রাইভেট এয়ারলাইনসগুলো। পাশাপাশি মৌলভীবাজার জেলা পর্যটন ও প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় রুটটি খুবই সম্ভাবনাময়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরে এই বিমানঘাঁটি অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোর তুলনায় অনেকটা বড়। এখানে প্রশস্ত রানওয়ে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অবকাঠামো সুবিধা রয়েছে। শমসেরনগর বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট ও প্রস্থ ৭৫ ফুট। বর্তমানে এই জায়গাটিতে রিক্রুটস ট্রেনিং স্কুল স্থাপন করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। পতিত জমিগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি খামার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রানওয়ের অল্প কিছু অংশ সংস্কার করে চলছে বিমানবাহিনীর নিয়মিত প্রশিক্ষণ। ২০২২ সালে সিলেট অঞ্চলের বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণের বিশেষ কাজ সম্পূর্ণ করা হয় এই বিমানঘাঁটি থেকে।

জানা যায়, ১৯৪২ সালে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ বিমানবন্দরটি তৈরি করা হয় সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য। কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চা-বাগানের ৬২২ একর জমি অধিগ্রহণ করে এটি নির্মাণ করা হয়। তখন বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয় ‘দিলজান্দ বন্দর’। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শমসেরনগর বিমানবন্দর’। ১৯৭৫ সালে এই বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট খোলা হয়। ১৯৯৫ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রচেষ্টায় বেসরকারিভাবে অ্যারো বেঙ্গল এয়ার সার্ভিসের ফ্লাইট চালু হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে এই এয়ারলাইনস যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। এরপর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক দুই মন্ত্রী জিএম কাদের ও রাশেদ খান মেনন বিমানবন্দরটি চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রবাসীদের আগ্রহ বেশি ফ্লাইট চালুতে,

সরকারি তালিকা অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা দুই লাখ ৫ হাজার ২৪ জন। তবে বাস্তবে এর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। প্রতি বছর কয়েক লাখ প্রবাসী এই দেশে আসা-যাওয়া করেন। তারা ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি শমসেরনগর বিমানবন্দরটিতে ফ্লাইট চালু করা।

স্পেন প্রবাসী মোহাম্মদ মুবিন খান বলেন, যদি বিমানবন্দরটি চালু হয়, আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা হয়। আমরা নিয়মিত দেশে আসি। একদিকে যেমন ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে, অন্যদিকে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার আসতেও অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শমসেরনগর বিমানবন্দরটি চালু হলে আমাদের সবচেয়ে বেশি উপকার হয়। এছাড়া সরকারও এখান থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিয়াজ আহমেদ নাইম বলেন, আমি কয়েক দিন আগে দেশে এসেছি। দেড় ঘণ্টা যাবত ঢাকা বিমানবন্দরের পার্কিং লট থেকে বের হতে পারিনি, এত যানজট ছিল। যদি সুযোগ থাকত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের মাধ্যমে নিজ জেলায় পৌঁছে যেতাম, অনেক সময় বেঁচে যেত। যুক্তরাষ্ট্রে দেখলাম, ওদের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই একটি বিমানবন্দর রয়েছে। আমাদের সড়ক পথের যা অবস্থা, দুই ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগে ছয় ঘণ্টা। শমসেরনগর বিমানবন্দরটি চালু হলে আমাদের যাতায়াত সহজ হত।

বৃটিশ-বাংলা চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মুহাইমিন শমসেরনগর বিমানবন্দর চালু হ‌ওয়া দীর্ঘদিনের দাবি। বিশেষ করে আমরা যারা যুক্তরাজ্যে‌‌ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি তাদের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন। এতে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি আমাদের এলাকাও উন্নত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ