দেশজুড়ে চলছে তীব্র দাবদাহ। এর মধ্যে দিনের অধিকাংশ সময়ে হচ্ছে লোডশেডিং। ভ্যাপসা গরমে নাকাল রাজধানীবাসীও। তাই কিছুটা স্বস্তি পেতে তারা ছুটছেন চার্জার ফ্যানের দোকানগুলোয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটার মহা উৎসবে মেতে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকায় চার্জার ফ্যান কেনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি তারা। তবে হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাধ্য হয়েই কিনছেন চার্জার ফ্যান। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এদিকে পাইকার থেকে বেশি দামে কিনে ও বেশি দামে বিক্রি করছেন জানিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলেকট্রনিকস এসব চার্জার ফ্যান গত ডিসেম্বরে শীতের মধ্যেই আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এখন গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে ধাপে ধাপে ফ্যানগুলো বাজারে ছাড়ছেন তারা। তাদের থেকে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম স্টেডিয়াম মার্কেট ও নবাবপুর রোডের বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের চার্জার ফ্যানের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, ১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়, যার পূর্বমূল্য ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। ১৬ ইঞ্চি ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়, যার পূর্ব মূল্য ছিল ৪ হাজার টাকা। ১৮ ইঞ্চি ফ্যান ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৯ হাজার টাকা। আবার ব্র্যান্ড ভেদে দাম হাজার টাকা কম-বেশিও বিক্রি হচ্ছিল।
এ বিষয়ে স্টেডিয়াম মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী জামিউল সাদ বলেন, আমাদের এগুলায় কোনও লাভ নাই। লাভ হলো আমদানিকারকদের আর বড় বড় দোকানদার, যারা ২০০ থেকে ৪০০ পিস স্টকে রাখছে। আমরা দিনে ৯ থেকে ১০ পিস করে আনি। চাহিদা বেশি দেখে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বেশিতে বিক্রি করি। মূল লাভ তো আমদানিকারকদের।
এসব ফ্যানের দাম ক্ষণে ক্ষণেই বাড়ে মন্তব্য করে নাজমুল নামে এক বিক্রয়কর্মী বলেন, এখন যেই দাম শুনবেন, ঘুরে আসলেই শুনবেন ৫০০ টাকা বেশি। আমি নিজে নবাবপুর থেকে সকালে ৫টা ফ্যান নিয়ে আসছি। এগুলা বিক্রি করে দুপুরে আরও দুই কার্টুন আনতে গিয়া দেখি পাইকারিতেই দাম বাড়ায়া দিছে।
বৃষ্টি হলেই চাহিদা কমে যাবে, তাই ঝুঁকি নিতে চান না জানিয়ে সুন্দরবন স্কয়ারের ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রেতা আশিক বলেন, আমার কাছে ৩০০ পিস ছিল, সব বিক্রি করে দিছি। এখন নতুন করে আনতে গেলে চার হাজার টাকার ফ্যান চার হাজার টাকাই ধরবো। তাহলে আমি বেচুম কত টাকায়? এখন লাভ করতে হইলে মাইনসের মাথায় বাড়ি দেওয়া লাগবো।
তবে ডলার সংকট ও এলসি করতে না পারার কারণ দেখিয়ে আমদানিকারকরা বলছেন, নতুন পণ্য আনতে না পারায় পণ্যের সংকট রয়েছে। আর গরম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে। তাই সব পক্ষই দাম বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে সামস ইলেকট্রিক মার্কেটের ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান ইলেকট্রিকের স্বত্বাধিকার লিটন খান বলেন, যেকোনও জিনিসের চাহিদা বেশি থাকলে দাম সামান্য বাড়ে। সরকারও এটার ওপর কর আরোপ করে বেশি। এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। আর ব্যবসায়ীরা লস করলে তো তখন আপনারা আসেন না। সুখের সময় কেন দেখতে আসেন?
চার্জার ফ্যানের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে লিটন বলেন, অস্বাভাবিক আবার কী? ডলার সংকট চলছে। ৯০ টাকার ডলার ১১০ টাকা হইছে। এইটা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে নাই? ব্যাংক কমিশন বেশি নিচ্ছে আমাদের থেকে। এখন আমাদের পুরো টাকাটা দিতে হয় আগে। তারপর মাল আনতে হয়।
এদিকে চার্জার ফ্যানের দাম শুনে নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার অবস্থা ক্রেতাদের। ধানমন্ডি থেকে স্টেডিয়াম মার্কেটে আসা ক্রেতা তাসলিম ইসলাম বলেন, দেশে যখন কোনও কিছুর চাহিদা বাড়ে, তখন সেটার দামও বেড়ে যায়। এটা খুব কষ্টের। জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে কিন্তু বেতন বাড়ছে না। খুব কষ্টে আছি।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আরেক ক্রেতা রকিবুল ইসলাম বলেন, এখন নিয়মিত কারেন্ট যাওয়া শুরু করছে। বাসায় বাচ্চারা থাকে, তাদের সুবিধার জন্য চার্জার ফ্যান কিনেছি। কিছুদিন পর হয়তো আবার চার্জার ফ্যানের চাহিদা কমে যাবে। কিন্তু এর মাঝে এরা দাম বাড়ায়া দিছে। আবার দাম জিজ্ঞেস করে ঘুরে আসলেই ৫০০ টাকা বেশি চায়। কিছু করার নাই, নিতেই হবে। এলাকায় আরও বেশি দাম চায়। আমরা অসহায়।