গ্রাহক পর্যায়ে বিদু্যতের দাম সাড়ে ১৪ শতাংশ বা ইউনিটপ্রতি ৯৮ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিদু্যত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
অপরদিকে পিডিবির এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিটপ্রতি বিদু্যতের দাম ৭২ পয়সা (১০.৬৫%) বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
তাদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হলে বিদু্যতের গড় খুচরা মূল্য ৬ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা হবে।
ভোক্তা প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো দাম বৃদ্ধির এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছে, বিদু্যতের দাম বাড়ালে ছোট-বড় সব ধরনের শিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবনযাপনের ব্যয় বাড়বে। বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিল্পকারখানা। এতে বেকারত্ব বাড়বে। অর্থনীতি চাপে পড়বে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে বিদু্যতের দাম বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত ধারাবাহিক গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে এ প্রস্তাব ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।
শুনানিতে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকেৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বিদু্যত্ কেনাবেচার মধ্যে ঘাটতি থাকায় ইউনিটপ্রতি ৩ শতাংশ হারে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
এ কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বিদু্যতের পাইকারি দাম বাড়লে চলতি বছর লোকসান আরও বাড়বে। তাই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
পিডিবির পরিচালন ব্যয় ও জ্বালানি খরচ হিসাব করে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য পিডিবির রাজস্ব চাহিদা সাত হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা, যা বিদু্যত্ বিক্রি করে আয় করতে হবে।
এজন্য সংস্থাটি বলছে, এখন যে দামে বিদু্যত্ বিক্রি করছে তা আরও ৭২ পয়সা বাড়ানো প্রয়োজন।
পিডিবি তার প্রস্তাবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, অবকাঠামো নির্মাণের অস্থায়ী সংযোগ ও বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটের গ্রাহকদের জন্য পৃথক দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে।
এর মধ্যে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার জন্য প্রতি ইউনিট সাত টাকা ২৫ পয়সা, বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সাত টাকা ৮০ পয়সা, অবকাঠামো নির্মাণের অস্থায়ী সংযোগে ১০ টাকা ৩০ পয়সা দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদষ্টো অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিদু্যত্ উত্পাদনে কস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সাশ্রয়ী উত্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি) মানা হচ্ছে না।
পিডিবির কম দামের বিদু্যতের উত্পাদন বন্ধ রেখে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে বেশি দামের বিদু্যত্ কেনা হচ্ছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে না। এভাবে অপচয়, অব্যবস্থাপনা ও সরকারের ভুল নীতির কারণে বিদু্যতের উত্পাদন ব্যয় বাড়ছে। আর ঘাটতি মেটানোর দায়ভার গ্রাহকদের ওপর চাপানো হচ্ছে। এটা যেৌক্তিক হতে পারে না।
শুনানিতে অংশ নিয়ে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এমসিসিআই, ডিসিসিআই প্রতিনিধিরা বলেন, দেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। দিন দিন বিশ্ববাজারে এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে।
ভারত, কম্বোডিয়া, মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে উত্পাদন ব্যয় কম রাখা জরুরি। কিন্তু বিদু্যতের দাম বাড়লে উত্পাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে পোশাক রফতানি হুমকির মুখে পড়বে।
বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিল্প-কারখানা। স্টিল ও রি-রোলিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জহির চেৌধুরী বলেন, স্টিল রি-রোলিং মিলগুলো দৈনিক এক হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত্ ব্যবহার করে।
বর্তমানে এ খাতে মন্দা চলছে। এই খাতের উত্পাদন ব্যয়ের ৮ শতাংশ এনার্জি খাতে খরচ হয়। তাই বিদু্যতের দাম বাড়লে তারাও বিপদে পড়বেন।
শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভুঁইয়া, আবদুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমান।
বক্তব্য রাখেন মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক একে মাহমুদ, সদস্য কামারুজ্জামান, গণসংহতির জুনায়েদ সাকী, রাজনীতিবিদ রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।