দুটি ঈদসহ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রচুর অ্যালবাম প্রকাশিত হয় বাংলাদেশে- এটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা নির্মাণ ও প্রচার করে থাকে। উপলক্ষ করে চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়া যদিও দুই ঈদেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস এমনকি বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন থেমে নেই। এটা ভালো। ব্যবসা প্রসারের জন্য এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু শারদীয় পূজা উপলক্ষে আমাদের দেশে বিশেষভাবে কোনো ছবি মুক্তি দেয়া হয় না। যদিও অন্যান্য উৎসবের মতো পূজায়ও পোশাক ব্যবসায়ীরা জমজমাট ব্যবসা করে থাকেন। আমাদের দেশে সংখ্যালঘু হলেও সনাতন ধর্মের জনসংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাদের পূজা মণ্ডপে ও মেলায় শুধু তারাই যান না, যান অন্য ধর্মাবলম্বী উৎসুক জনগণও। তাহলে এ উৎসবকে উপলক্ষ করে ছবি মুক্তি কিংবা অ্যালবাম প্রকাশ করে এবং চ্যানেলে চ্যানেলে নাটক ও অন্যান্য অনুষ্ঠান প্রচার করে উৎসবটিকে বরণ করে নিতে বাধা কোথায়? পোশাকশিল্পের লোকজন এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করলে বিনোদন শিল্পে তা করতে কোনো সমস্যা আছে?
আমরা বরাবরই দেখেছি, দুই ঈদকে সামনে রেখে ভারতে ছবি মুক্তি দেয়া হচ্ছে একের পর এক। এমনকি সেগুলো হিট তালিকার শীর্ষেও ওঠে। তার মানে, তারা এই উৎসবে লগ্নি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ বিষয়টি ভাবা হচ্ছে না। অনেকে মনে করেন, শারদীয় পূজা উপলক্ষে মুক্তি দিতে হলে হিন্দুয়ানী গল্পের নাটক কিংবা সিনেমা মুক্তি দিতে হবে। এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত সব নাটকের গল্পে কি ঈদ থাকে? হয়তো হাতেগোনা কয়েকটি নাটক কিংবা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানগুলোতে ঈদের কিছুটা ছোঁয়া থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ নাটকই ঈদের ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। একেবারেই আলাদা গল্প নিয়ে তৈরি হয় নাটক-টেলিফিল্মগুলো। পূজায় কোনো সিনেমা না থাকা প্রসঙ্গে চিত্রপরিচালক জাকির হোসেন রাজু বলেন, ‘আমাদের দেশে পূজা এখনও ঈদের মতো এত বড় আয়োজনে পালিত হয়নি। ঠিক যেমন প্রতিবেশী দেশ ভারতে ঘটা করে ঈদ আয়োজন করা হয় না। এখানে দু’দেশেরই সংখ্যালঘু বিষয়টি আলোচ্য নয়। মূলত ব্যবসায়িক কারণেই পূজায় কোনো ছবি মুক্তি দেয়া হয় না বলে আমি মনে করি। ঈদে যেমন সিনেমা দেখতে মানুষের ঢল নামে, ছুটিও থাকে তুলনামূলক বেশি, পূজায় সেরকম থাকে না। এ কারণেই পূজা উপলক্ষে ছবি মুক্তির কোনো আয়োজন দেখা যায় না। তবে ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে যে কেউ ভাববে না তা কিন্তু নয়।’
অডিও কোম্পানিগুলো ঈদ কিংবা অন্যান্য দিবসে ঘটা করে অ্যালবাম প্রকাশ করলেও পূজায় থাকে একেবারে নীরব। কয়েকজন শিল্পী কিংবা দু-একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি অ্যালবাম প্রকাশ করলেও সেটি নিয়ে থাকে না কোনো আলোচনা। এবারের পূজায় ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে বাপ্পা মজুমদারের একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। ‘আহারে’ শিরোনামের এ গানে তার সহশিল্পী হিসেবে রয়েছেন কলকাতার শিল্পী শাওলী মুখার্জি।
পূজায় অ্যালবাম কিংবা একক গান প্রকাশ করা যে ব্যবসায়িক ব্যর্থতা তা কিন্তু নয়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে দু-একটি অডিও কোম্পানি অ্যালবাম রিলিজ করে সাফল্যও পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাউন্ডটেক ইলেকট্রুনিক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান মাহমুদ বাবুল বলেন, ‘আমি প্রতিবছর পূজাতেই অ্যালবাম ও সিঙ্গেলস প্রকাশ করি। এবারও বের হচ্ছে পূজা উপলক্ষে তপন চৌধুরীর গাওয়া একটি সিঙ্গেল। আশা করি গানটি শ্রোতাদের ভালো লাগবে।’ তপন চৌধুরীর গাওয়া ‘মায়ের হাসি’ শিরোনামের এ ভক্তিসঙ্গীত সুর করেছেন সুবীর নন্দী। জীবক বড়–য়ার কথায় গানটির সঙ্গীতায়োজন করেছেন উজ্জ্বল সিনহা। এ ছাড়া সাউন্ডটেক থেকে ‘আমার সাধ না মিটিল’ শিরোনামে পান্নালাল ভট্টাচার্যের বিখ্যাত গানটি কাভার করেছে স্বরলিপি ও রাশেদ উদ্দিন। এটির নতুন সঙ্গীতায়োজনে ছিলেন সাব্বির জামান।’ এ ছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দু-একজনের সিঙ্গেল গান প্রকাশ করে পূজার আয়োজন দায়সারাভাবে পালন করার চেষ্টা করেছেন।