• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

গাজায় হোঁচট খেয়েছে ইসরায়েলি স্থল হামলা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩

হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর সঙ্গে সপ্তাহখানেক আগে হামাসের বিরুদ্ধে বড় আকারে স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা উত্তর গাজা ঘিরে রেখেছে এবং ৭ অক্টোবর হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত ১০ হামাস কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে। এ অর্জনকে চমৎকার সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, হামাসও ব্যাপক প্রস্তুতি ও দক্ষতার সঙ্গে এসব হামলা মোকাবিলা করছে। বলা যায়, এখন পর্যন্ত স্থল হামলা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়, ইসরায়েল স্থল হামলার ক্ষেত্রে যে কৌশল অবলম্বন করেছে, তা হলো গাজা উপত্যকার উত্তরে একই জায়গায় বারবার হামলা চালিয়ে হামাস ও তাদের মিত্রদের দুর্বল করা। তবে এ কারণে ওই অঞ্চলের গাজাবাসীর ওপর নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ এবং সারাবিশ্বের কাছে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

ব্যাপক হামলা সত্ত্বেও হামাসের রকেট নিক্ষেপ অবকাঠামোর তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ইসরায়েল। এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি ভূখণ্ডের দিকে গড়ে ১২টি করে রকেট ছুড়েছে হামাস। তবে গত শুক্রবার রকেটের সংখ্যা কমে ৯ হয়েছিল।

ইসরায়েল জানিয়েছে, স্থল হামলা শুরুর পর তাদের ৩২ সেনা নিহত হয়েছে। ফলে চলমান এ সংঘাতে তেল আবিবের নিহত সেনার সংখ্যা বেড়ে ৩৪৬ হয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে হামাস জানিয়েছে। ইসরায়েলের ২৬০ সেনা আহত হয়েছে। এ ছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি হিসেবে আছে ২৪২ জন বেসামরিক ব্যক্তি।

নতুন ধরনের হাইব্রিড যুদ্ধ
২৫ অক্টোবর হামাসকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার অঙ্গীকার করেন নেতানিয়াহু। এর পর সীমিত আকারে উত্তর গাজায় স্থল হামলা চালাতে শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। শুরুতে একটি সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন ও বুলডোজার নিয়ে হামলা চালায় তারা। পরে ২৮ অক্টোবর ইসরায়েল পূর্ণ মাত্রার স্থল হামলা শুরু করে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হামাসের হামলা ও ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া দুই বিষয়টিই আগের সংঘাতগুলোর মাত্রা ও ধরনকে ছাড়িয়ে গেছে।

লামসা মাস্টার স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বিষয়ের অধ্যাপক মাত্তেও ব্রেসান বলেন, ৭ অক্টোবর থেকে আমরা যা দেখেছি, তা এক নতুন ধরনের হাইব্রিড যুদ্ধ। হামাস ইসরায়েলে ছয় হাজার রকেট নিক্ষেপ করে। এই সংখ্যাটি হামাসের নজিরবিহীন সামরিক সক্ষমতার পরিচয়। এখানে প্রশ্ন হলো, হামাস কীভাবে ২০টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে ২০টি যুগপৎ হামলা চালাতে সক্ষম হলো? এর অর্থ, হামাস এর জন্য প্রশিক্ষণ পেয়েছে ও প্রস্তুতি নিয়েছে। এবার আর বিষয়টি সহজ-সরল নেই।

মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার ডিমেট্রিয়াস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, হামাস এই যুদ্ধের জন্য দীর্ঘসময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার ইসরায়েলি লক্ষ্যমাত্রাকে অত্যন্ত কঠিন বলে অভিহিত করেন।

হামাস দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের বেশ কিছু ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে। তবে গ্রাইমস মনে করেন, সংঘাতের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের অসংখ্য সেনা নিহত হয়েছে, এটি দেশটির সামরিক সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ইসরায়েলের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বন্ধুত্বে ফাটল
গত সপ্তাহের পুরোটা সময় ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের কাছ থেকে আসা ‘মানবিক কারণে’ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে অস্বীকার করেন নেতানিয়াহু। তবে গত শুক্রবার তিনি তাঁর এই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসতে বাধ্য হন।

ইসরায়েল শর্ত দিয়েছে, হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হলে তারা যুদ্ধবিরতির বিষয়টি বিবেচনা করবে। গাজায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশেও খানিকটা নমনীয় হয়েছেন নেতানিয়াহু। শুরুতে অল্প কয়েক ট্রাক খাবার, পানি ও ওষুধ প্রবেশের অনুমতি দেন তিনি। তবে ৩১ অক্টোবর তিনি দিনে ১০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশে সম্মতি জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ