• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ অপরাহ্ন

২০১৮ সালেই দেশে ৬০-৭০ লাখ হ্যান্ডসেট তৈরি করবে সিম্ফনি: আশরাফুল হক

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭

দেশীয় মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড সিম্ফনি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ডিজিটাল জগতে যুক্ত হওয়ার ব্র্যান্ড হয়ে উঠছে। বিশ্বখ্যাত স্মার্টফোন ব্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সুলভ মূল্য ও উন্নত বিক্রয়োত্তর সেবার বদৌলতে দেশের স্মার্টফোন বাজারের ৩৮ শতাংশ এখন সিম্ফনির দখলে, ভবিষ্যতে পরিকল্পনা দেশের বাইরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। ইত্তেফাক অনলাইনের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাতকারে সিম্ফনির মোবাইলের ডিরেক্টর অব মার্কেটিং আশরাফুল হক এসব কথা বলেন। পাঠকদের জন্য সেই আলাপচারিতা হুবহু তুলে ধরা হলঃ
সিম্ফনির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলবেন?
সিম্ফনির বর্তমান পরিস্থিতি বেশ ভাল। গত দুই ঈদে আমরা যা প্রডাক্ট বিক্রি করেছি তার মার্কেট শেয়ারের ৩৮ শতাংশের মতো।
গত বছরে মার্কেট শেয়ার কত শতাংশ ছিল?
গত বছর আমাদের মার্কেট শেয়ার ছিল ৩৯ শতাংশ। সারা বছর যেটা থাকে ৩৭ শতাংশের মতো। এই সময়ে এসে এখন ৩৮ শতাংশের মতো আছে। এক্ষেত্রে আমাদের বিক্রি কিন্তু কমেনি, বরং বাড়ছেই। তবে বাজার বড় হচ্ছে, এজন্য মার্কেট শেয়ারে তার প্রতিফলন দেখা যায়।
দেশের অন্যান্য মোবাইল ফোন ব্রান্ড ও সিম্ফনির মধ্যে তুলনামূলক চিত্র সম্পর্কে বলবেন?
বাংলাদেশে অনেকেই মোবাইল ব্যবসায় আসার চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ ভাল করছে, কেউ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যারা ভাল করছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিম্ফনি। সিম্ফনি এত ভাল করছে যে,বাংলাদেশে দেশি ও বিদেশি যতগুলো ব্রান্ড আছে তার মধ্যে বিক্রির দিক দিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। সিম্ফনি ২০০৮ সালে ব্যবসায় শুরু করে এবং মাত্র ২ বছরের মধ্যেই সর্বাধিক বিক্রিত ফোনের ব্রান্ডে পরিণত হয়। ২০১১ থেকে পরিষ্কারভাবে মার্কেট লিডার হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং তখন থেকে এই ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমরা বিক্রির দিক থেকে বাজারের ১ নম্বর ব্রান্ড হিসেবে আছি। তবে আমরা এক নম্বরে অবস্থানে আছি মোট কত পিস মোবাইল ফোন বিক্রি হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু যদি সবচেয়ে ভাল ফোনের কথা বলেন, আমাদের ফোন দিয়ে সবকিছু করা যায় কি না? সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যদি আপনি আইফোন টেন এর সাথে তুলনা করেন,তাহলে আমি বলবো ওই ডিভাইস দিয়ে যা কিছু করা যায়,আমাদের ফোন দিয়ে অতকিছু করা যায় না। আবার স্যামসাং এর এস-৮ দ্বারা যত কিছু করা যায় আমাদের ফোন দিয়ে অত কিছু করা যায় না। কারণ ওইটার দাম হল ৮০ হাজার টাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি দামের। কিন্তু আমাদের অত দামের ফোনই নাই। আমাদের সর্বোচ্চ মূল্যের যে ফোন,তার দাম হয়তো ২৩ হাজার টাকা। কিন্তু ২৩ হাজার টাকার ফোনে আমরা যেসব সুবিধা দিয়ে থাকি,সেই সুবিধা যদি অন্যরা দেয়,তাহলে তার দাম পড়ে যাবে ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকা।
আপনাদের মার্কেট পলিসির মূল টার্গেট কি বা কারা?
আমাদের মূল টার্গেট হল আমাদের দেশের নিম্ন-মধ্য আয়ের সাধারণ জনগণ। তাদের চাহিদা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার কথা চিন্তা করেই আমরা আমাদের ফোনগুলো বাজারজাত করি।
স্মার্টফোন নাকি ফিচারফোন,কোন ধরনের ফোন আপনাদের বেশি বিক্রি হয়?
আমাদের মোট বিক্রির ৭০ শতাংশ ফোনই ফিচার ফোন আর ৩০ শতাংশ স্মার্টফোন বিক্রি হয়।
স্মার্টফোন বিক্রির দিক দিয়ে বাংলাদেশে মার্কেট লিডার কারা?
বাংলাদেশে স্মার্টফোন বিক্রির দিক দিয়েই আমরাই মার্কেট লিডার। তবে আমাদের একেবারেই কাছাকাছি বলতে গেলে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে স্যামস্যাং। স্মার্টফোন বিক্রির দিক দিয়ে আমাদের মার্কেট শেয়ার ৪০ শতাংশের মতো। অবশ্য দুই-এক মাস স্যামসাং আমাদের টপকে যাচ্ছে আবার আমরা তাদের টপকে যাচ্ছি।
অন্যান্য মোবাইল ফোন ব্রান্ড ও আন্তর্জাতিক ব্রান্ডগুলোর সাথে সিম্ফনির পার্থক্য কি?
দেশি ব্রান্ড হিসেবে সিম্ফনি অনেক বেশি বাঙালিবান্ধব। সিম্ফনি মোবাইল ফোনে বেশ কিছু ফ্রি অ্যাপস দেওয়া থাকে, যেগুলো বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য খুব সহজেই ব্যবহারযোগ্য। আমাদের ফিচারফোনগুলোর কি-বোর্ডগুলো দেখবেন বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য উপযুক্ত। এই বিষয়গুলোর বাইরে কোয়ালিটির দিক দিয়ে বিদেশি ব্রান্ডগুলোর সাথে আর তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে বাংলাদেশি অনেক ব্রান্ড আছে যারা ব্যাটারিকে বলে ২০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন। কিন্তু আমরা পরীক্ষা করে কখনও কখনও সেখানে ১০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার কিংবা তার চেয়েও কম পাই। আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাই,এটা আমাদের ব্যবহারকারীদের জন্য এক ধরনের প্রতারণা। এগুলো আমাদের দেশেরই ব্রান্ড। এক্ষেত্রে সিম্ফনি যেটা ঘোষণা দেয়,সেটাই থাকে ব্যাটারিতে।
ব্যবহারকারীদের জন্য সিম্ফনির ভাল দিকগুলো কি কি,অন্যান্য ব্রান্ড না নিয়ে কেন তারা সিম্ফনি ফোন ব্যবহার করবে?
আমরা আমাদের ফোনের স্পেসিফিকেশনের ব্যাপারে যা ঘোষণা দিই সেটা নিশ্চিত করি। এখানে কোথাও কোন কমতি থাকে না। আর আমাদের অন্যতম সুবিধা হল বিক্রয়োত্তর সেবা, যেটা অতুলনীয়। অন্য যে কোন ব্রান্ডের তুলনায় আমাদের বিক্রয়োত্তর সেবা একদম হাতের নাগালে।মানুষ একেবারে দোরগোড়ায় আমাদের সার্ভিস সেন্টার পায়। প্রত্যেকটা জেলা শহরে আমাদের সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। দেশব্যাপী আমাদের প্রায় ১০০ এর মতো সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। জেলা শহরের পাশাপাশি অনেক উপজেলা শহরেও আমাদের সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। বড় শহরগুলোতে একাধিক সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। যেমন ঢাকাতে ৯টি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। যে কোন সময়ে যে কোন সমস্যা হলে সিম্ফনি ব্যবহারকারীরা হাতের নাগালে সেবা পেয়ে থাকে।
ব্যবহারকারীরা কোন অভিযোগ দিলে কিংবা কোন সমস্যা নিয়ে সার্ভিস সেন্টারে আসলে কত সময়ের মধ্যে সেটার সমাধান দেওয়া হয়?
আমাদের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৮৫ শতাংশের মতো ফোন যেদিন দিবে সেদিনের মধ্যেই সমাধান দেওয়া হয়। আর তিনদিনের মধ্যে ৯৯.৯ শতাংশ সমাধান আমরা করে দিই। কিছু সেট থাকে যেটার সমাধান করতে একটু বেশি সময় লাগে।
ব্যবহারের দিক থেকে সিম্ফনির নেতিবাচক দিক কোনগুলো বলে আপনি মনে করেন?
অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো আনতে আনতে আমাদের একটু সময় লেগে যায়। যেমন ধরনের স্যামসাং এস৮ এ কিছু অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে, যেটা আমাদের ফোনে এখন পর্যন্ত আসে নি। স্যামসাংয়ের ফোনগুলো অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের মাত্র ২টি ফোনে অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আমাদের ফোনগুলো এইচডি+, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেগুলো স্যামসাং এস৮ এর মতো অতোটা অত্যাধুনিক না। আমরা চেষ্টা করি সবচেয়ে ভাল প্রযুক্তি দিয়ে ক্যামেরাটা সাজাতে। কিন্তু তারপরও দেখা যায় সেলফিতে এর চেয়ে ভাল ডুয়াল ক্যামেরা নিয়ে আসছে অপ্পো। সেলফিকে ২১ মেগাপিক্সেলের ফোনও বাজারে আসছে,কিন্তু আমরা ওইটা পারি না।
সিম্ফনি ব্যবহারকারীদের পক্ষ থেকে সিম্ফনির ক্যামেরা নিয়ে বেশ অভিযোগ শোনা যায়। অন্যান্য বিদেশি ব্রান্ডে যত ভাল ছবি তোলা যায় সিম্ফনি দিয়ে নাকি ততোটা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে আপনাদের ভাষ্য কি?
এক্ষেত্রে বিদেশি ব্রান্ডগুলো অনেক সময় সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন করে। এর মাধ্যমে ছবির কোয়ালিটি একটু ভাল করে দেয়। এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় আছে,যেটা স্যামসাং করে। তাদের ফোনগুলোর স্ক্রিন দেখবেন খুব ঝকঝকে, চকচকে। ফলে ছবি তুললে সেটা ওই স্ক্রিনে দেখলে মনে হয় অনেক ভাল। ওদের ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা আর আমাদের একই ক্যামেরার ছবি কম্পিউটার স্ক্রিনে নিয়ে দেখলে দেখবেন কোন পার্থক্য নাই। এর মূল কারণ হল স্যামসাংয়ের অ্যামোলেড ডিসপ্লে। যেটা আর কেউ ব্যবহার করতে পারে না। অ্যাপলও তাদের একটা ফোনে অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করেছিল, সেটাও স্যামসাংয়ের কাছ থেকে কিনে নিয়ে।
বাজার সম্প্রসারণে সিম্ফনি কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?
আমরা বাজার সম্প্রসারণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, আরও নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা দেশব্যাপী ব্র্যান্ডেড আউটলেট তৈরি করেছি। দোকানে দোকানে অভিজ্ঞ কনসালট্যান্ট দিয়েছি,যারা মোবাইল ফোনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে এবং ক্রেতাসাধারণকে বুঝিয়ে বলে। এর বাইরে আমরা অনেকগুলো দোকানের ভিতরে আমাদের কিছু ব্রান্ডিং করা হয়েছে। এ ধরনের আরও অনেক কার্যক্রম আমাদের অব্যাহত রয়েছে।
দীর্ঘ ৭ বছর আগে থেকেই আমরা শুনে আসছি, সিম্ফনি দেশের ভিতরে মোবাইল ফোনসেট তৈরি করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন চোখে পড়ে নি। এ বিষয়টি কতদূর?
দীর্ঘদিন ধরে আমরা সংগ্রাম করছিলাম যেন মোবাইল ফোনসেট উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার আমাদের কিছু সুবিধা দেয়। অতঃপর ২০১৭ সালের জুনে ঘোষিত বাজেটে আমাদের জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করে। সেটা হল আমরা যদি উৎপাদন করি, সেক্ষেত্রে ট্যাক্স পড়বে ১০ শতাংশের মতো। আর আমদানির ক্ষেত্রে এই ট্যাক্স ৩২ শতাংশ। তাই এখন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি আমদের উৎপাদন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য। আমাদের দুইটা প্লান্ট রেডি হচ্ছে। একটা হচ্ছে কালিয়াকৈর আইটি পার্কে আরেকটা আশুলিয়াতে। আমাদের দুইটা প্ল্যান্ট রেডি করার কারণ হচ্ছে,আইটি পার্ক রেডি হতে একটু দেরি হতে পারে এজন্য আশুলিয়াতে আমাদের  নিজস্ব জায়গাতে অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতেই আমরা উৎপাদনে যাবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রারম্ভিক লক্ষ্য থাকবে প্রতি বছর ৬০-৭০ লাখ হ্যান্ডসেট তৈরি করার। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী সেটা বাড়ানো হবে।
দেশের বাজার ছাড়িয়ে দেশের বাইরে আর কোথায় কোথায় সিম্ফনির মোবাইল ফোন বাজারজাতের পরিকল্পনা করছেন?
আমাদের কারখানা থেকে উৎপাদিত ফোন থেকেই শুধু নয়, আমরা এখন থেকেই পরিকল্পনা করছি দেশের বাইরের বাজার ধরার জন্য। আমরা জেনে খুশি হবেন,সৌদি আরবের প্রায় ১ শতাংশ মানুষের হাতে সিম্ফনি মোবাইল ফোন। অবশ্য তাদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী জনগণ। সেখানে প্রায় ২৪ লাখের মতো জনগণ বাঙালি। তারাই মূলত দেশ থেকে যাওয়ার সময় কম দামী সিম্ফনি স্মার্টফোন নিয়ে যায়। এভাবে আমাদের বাজারও সম্প্রসারণ হচ্ছে। এর বাইরেও আফ্রিকার কিছু দেশে,শ্রীলঙ্কা,পাকিস্তান,ফিলিপাইন্স,মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে আমরা টার্গেট করছি। ইনশাল্লাহ পরবর্তী বছর থেকেই আমরা রপ্তানি শুরু করবো।
গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য সিম্ফনির পক্ষ কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
মোবাইল ফোনের মার্কেট ধরে রাখার জন্য আমাদের প্রচুর গবেষণা করতে হয়। ক্রেতাসাধারণের জন্য নতুন কি কি সুবিধা আমাদের ফোনগুলোতে সংযোজন করা যায় সেটা গবেষণার জন্য চীনে আমাদের প্রায় ৩০ জনের মতো প্রকৌশলী আছে। এবং বাংলাদেশে আমাদের ২টা টিম আছে যেখানে প্রায় ৪০ জনের মতো জনবল সার্বক্ষণিকভাবে গবেষণার কাজ করছে।
সিম্ফনি মোবাইলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? 
আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল আমাদের দেশের ভিতরে যে মোবাইল ফোনসেট উৎপাদন করবো সেটা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো। প্রথম পর্যায়ে অ্যাসেম্ব্লিং করা,তারপর ম্যানুফ্যাকচারিং করা। এবং এই ফোনগুলো যে শুধু দেশের মধ্যে আটকে রাখবো তা নয়,বরং চীন থেকে বিভিন্ন সুবিধা সংবলিত যে ফোনগুলো তৈরি করি সেগুলো দিয়েই বিদেশের মার্কেট ধরবো। পরবর্তীতে আমাদের ইচ্ছা,দেশে যে ফোনগুলো তৈরি হবে সেগুলোকে বিদেশে পৌঁছে দেওয়া।
সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটে চলা লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন,পূরণ করছেন—এ সময়ে কোন খারাপ লাগা কিংবা ক্লান্তিবোধ কাজ করে কি না?
আসলে কাজটাই আমার ভালবাসা। এখানে কখনই কোন ক্লান্তি কিংবা খারাপ লাগা কাজ করে না। কাজের ভিতরে ক্লান্তি কি জিনিস সেটাই ভুলে যাই। শুধু আমিই না,আমার পুরো অফিসের কেউই কাজের মধ্যে কোন ক্লান্তি খুঁজে পায় না। এর মধ্যে দুইটা কারণের একটা হল আমাদের এখানে যারা উদ্যোক্তা আমিনুর রশিদ ও জাকারিয়া শহীদ,তারা আমাদেরকে এমনভাবে উদ্দীপ্ত করে রাখেন,কখন রাত হয়ে যায়,কখন সন্ধ্যা হয়ে যায় সেটা আমরা বুঝতেই পারি না। নতুন নতুন জিনিস,নতুন নতুন কার্যক্রমে আমরা এত বেশি নিবেদিত থাকি যে ক্লান্তি আমরা টেরই পাই না।
সিম্ফনি নিয়ে অনেক কথাই শুনলাম। অনেক কিছু জানতে পারলাম। এখন আপনার ব্যক্তিগত জীবন, শৈশব কৈশোর, লেখাপড়া নিয়ে জানতে চাই।
আমার শৈশব-কৈশোর কাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। আমার বাবা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। ছোটবেলায় আমি পড়াশোনা করেছি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে। এরপর স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করি। তারপর আমি সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি) তে জয়েন করি। সেখানে দীর্ঘদিন জব করার স্কয়ার কনজ্যুমার প্রডাক্টসে ছিলাম। সেখানে রাঁধুনি, রুচির মতো প্রডাক্টগুলো আমার হাত দিয়েই তৈরি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছিলাম বেশ কিছু বছর। ওখান থেকে বের হয়ে কিছুদিন আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে থাকার পর সিম্ফনিতে জয়েন করি ২০১৪ সালে। সিম্ফনিতে এসে আমি আবারও গতি ফিরে পাই। আমি এবং আমার টিম এখানকার কর্মপরিবেশ খুবই উপভোগ করি।
আপনার দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
বাংলাদেশে সিম্ফনি শুধু মোবাইল ব্রান্ড হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ব্রান্ডটিকে অনেক বেশি ছড়িয়ে দিতে। আপনারা খুব শিগগিরই দেখবেন সিম্ফনি নামে এসি আসবে,ফ্রিজ আসবে। আরও অনেক কিছু আসবে। আবার আমাদের মাদার কনসার্ন এডিসন গ্রুপের অনেকগুলো শাখা আছে। এডিসন ফুটওয়্যার আছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন খুব শিগগিরই আমরা এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড জুতা উৎপাদনে যাচ্ছি। আগামী দু-একমাসের মধ্যেই এই জুতাগুলো বাজারে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর পাশাপাশি হেক্সাগন নামে আরেকটি শাখা আছে। তারা খুব শিগগিরই হেক্সাগন বৃক্ষ নিয়ে বাজারে আসবে।
আপনাদের সম্প্রতি বাজারে আসা হেলিও নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কি?
হেলিও হল সেই ব্রান্ড,যেই ব্রান্ড আস্তে আস্তে স্যামসাংকে ধরবে। এটা বলতে পারেন আমাদের একটা উচ্চাভিলাষ। আধুনিক যেসব প্রযুক্তিগুলো আছে সেসব প্রযুক্তির সবগুলোই এই ফোনটির মধ্যে পাওয়া যাবে। উচ্চ রেজোল্যুশেনের ক্যামেরা ও সফটওয়্যার অপটিমাইজেশনের বিষয়গুলো থাকবে এই ফোনটির মধ্যে। সেক্ষেত্রে ক্যামেরা নিয়ে সেই আক্ষেপটা আর ব্যবহারকারীদের মধ্যে থাকবে না। এক্ষেত্রে দামটা একটু বেশিই হবে, তবে একই সুবিধাসম্পন্ন স্যামসাং কিংবা অন্যান্য ব্রান্ডের মতো অতোটা বেশিও হবে না। এগুলোর দাম হবে ১৬০০০ থেকে ৩০০০০ এর মধ্যে। আমরা আমাদের এই নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের হয়তো ১নং কিংবা ২ নং ব্রান্ডকে টেক্কা দিতে পারবো না, তবে ৩/৪ নম্বরের ব্রান্ডগুলোকে টেক্কা দিতে পারব বলেই আমাদের বিশ্বাস।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ