• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের লাইসেন্সে গাজা হত্যাযজ্ঞ,

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

আরবিতে একটা কথা আমরা প্রায়ই বলে থাকি– ‘পাপের চেয়ে যখন অজুহাত অধিকতর কুৎসিত হয়ে ওঠে’। গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে একটা ভোটাভুটি হয় গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতি বিষয়ে। এর বিরুদ্ধে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ভোট দেয়। ওই বিরোধিতার ছুতো হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যে কথাটি বলেছে, সেটি শুনেই আমার ওই আরবি প্রবাদটি মনে পড়েছে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাম্বাসাডর রবার্ট উড নিরাপত্তা কাউন্সিলকে বলেছেন, এ সংক্রান্ত খসড়া রেজুলেশনটি ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত’। যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে হামাস আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে– যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সরকারের এ অফিসিয়াল অবস্থানও তিনি তখন পুনর্ব্যক্ত করেন। কিন্তু এখানে বলতে হয়, সত্যিই যদি কোনো কিছু ‘বাস্তবতাবিবর্জিত’ হয়ে থাকে, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান। বিশেষত ইসরায়েলকে ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য গোলাবারুদ বিক্রি করার অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্যে কংগ্রেসকে উপেক্ষা করা এবং এ সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনা প্রদানে স্বরাষ্ট্র বিভাগকে প্ররোচিত করার পর থেকে এ কথা বলাই যায়।

পরিহাস হলো, গাজার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো এবং ইসরায়েলের জন্য এই জরুরি সাহায্যের ঘটনা এমন সময়ে ঘটল যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন জনসমক্ষে বলেছেন, ‘বেসামরিক লোকদের রক্ষা করার উদ্দেশ্য এবং গৃহীত পদক্ষেপ’– এ দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। এ সময় তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর জন্য দেশটির সমালোচনাও করেন। প্রশ্ন হলো, এই একই বিভাগ থেকে কীভাবে এ ধরনের সাংঘর্ষিক ঘোষণা আসতে পারে, যেখানে ট্যাঙ্কে ব্যবহারের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যে ১৪ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ ইসরায়েলকে সরবরাহের কথা বলা হয়েছে! তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলে হামাস অধিকতর শক্তিশালী হয়ে উঠবে– এ বক্তব্য আরও বেশি ‘বাস্তবতাবিবর্জিত’।

প্রথমত, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল হামাসকে অধিকতর শক্তিশালী হতে বাধাগ্রস্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠত, তাহলে তারা হামাসকে ‘ক্রমশ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে একজন অংশীদারের পর্যায়ে উন্নীত করা’ থেকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ১৬ বছর আগেই থামাত। সম্প্রতি দ্য টাইমস অব ইসরায়েল পত্রিকা নেতানিয়াহুর পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বৈধ কর্তৃত্বকে অস্বীকার করার দীর্ঘকালীন নীতি গ্রহণ এবং গাজায় হামাসকে শক্তিশালী করার তীব্র সমালোচনা করে এই বক্তব্য তুলে ধরেছে।

দ্বিতীয়ত, যে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৭ হাজার ৭০০ বেসামরিক নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন, তা অব্যাহত রেখে হামাসকে আরও দুর্বল করা যাবে– কীভাবে একজন মানুষ এমন চিন্তা করতে পারে তা আমার বোধগম্য হয় না। উল্লেখ্য, এ কথা বলে আমি হামাসের পক্ষ নিচ্ছি না। পুনরায় বলছি, বেসামরিক ব্যক্তিকে সুচিন্তিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা কিংবা হত্যা করাকে কোনো কিছুই বৈধতা দিতে পারে না। এটা অক্টোবরের ৭ তারিখের আগে হোক বা পরে। এই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কেবল হামাসই সমবেদনা পাচ্ছে এবং সমমনা গোষ্ঠীর উত্থান ঘটছে। চারপাশের তথ্য-প্রমাণ থেকে ঘটনার কারণ সহজে বোঝা যায়। ব্যাপক হত্যাকাণ্ড পরিচালনা, উৎখাত ও বেসামরিক অবকাঠামোর ক্ষতিসাধন ছাড়া এসব গোষ্ঠীকে পরাভূত করা যাবে না। সুতরাং এসব নারকীয় কাণ্ডের মাধ্যমে হামাস নির্মূলের ইসরায়েলি লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এসব কারণে দ্রুত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের বিরুদ্ধে একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রদান ইসরায়েলকে আরও হত্যাকাণ্ডের লাইসেন্স দিয়েছে বলে মনে করি। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অবস্থান তাদের ঘোষিত মূল্যবোধ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা করার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একই কারণে এটিও হাস্যকর যে, স্বনামধন্য পিবিএস চ্যানেলের উপস্থাপক নিক স্কিফরিন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজপুত্র ফয়সাল বিন ফারহানকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে সৌদি সরকারের দ্বিচারিতা সম্পর্কে সাহস করে প্রশ্ন করতে পারবেন। সৌদি সরকার জনগণকে বলছে এক কথা; ভেতরে ভেতরে ভাবছে ভিন্ন কিছু। যদি এ ক্ষেত্রে কোনো ভন্ডামি থাকে, তাহলে এটি সুস্পষ্ট– এসব ঘটনার কারিগর ওয়াশিংটন। এ ধরনের কোনো কিছুর আশঙ্কা থাকলে স্কিফরিনের উচিত একই প্রশ্ন তাঁর নিজের প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করা। এ ছাড়া আমেরিকার দেওয়া হত্যার এই লাইসেন্স কেবল ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে না, গাজার ভেতর ও বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভেটো ভবিষ্যতে চরমপন্থি একটি প্রজন্ম সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।

সুতরাং যুদ্ধ থামাতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্রের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের পথ উন্মোচনের পথ বের করতে হবে। সৌদি রাজপুত্র ফয়সাল পিবিএসকে বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতি’র মধ্য দিয়ে এসব উদ্যোগের সূচনা ঘটে। তবে তাঁর মতে, বর্তমানে এটি ‘দুর্ভাগ্যবশত একটি নোংরা শব্দ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, কোনো সুস্থ মাথার লোক এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটাতে (যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে) পারে বলে তিনি মনে করেন না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ