• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ অপরাহ্ন

ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি গোপালভোগ আমের

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪

সময়ের পালাবদলে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের খরতাপে আবারও পুড়ছে রাজশাহী। তবে এই প্রখরতার মধ্যেই শুরু হয়েছে ফল উৎসব।

কিন্তু আম ছাড়া তো ফল উৎসব জমজমাট হয়ে ওঠে না। তাই একটু দেরিতে হলেও রাজশাহীর বাজারে নামল জাত আম খ্যাত ‘গোপালভোগ’। তবে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এবার আমের রাজধানী রাজশাহীতে ফলন কম হয়েছে। তাই বেড়েছে দাম।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় মেনে আজ সকাল থেকেই গোপালভোগ আম নামানো শুরু হয়েছে। তবে শনিবার (২৫ মে) বাজারে তেমনভাবে আমের দেখা মেলেনি। হাতে গোনা কিছু আড়ত ও খুচরা দোকানেই গোপালভোগ আম দেখা গেছে। আর ফলন কম হওয়ায় এবার দামও বেশি।

প্রতিবছর প্রথম দিকে এক হাজার দুইশ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার পাঁচশ টাকা মণ ধরে গোপালভোগ আম বাজারে উঠতে শুরু করে। এই দাম বাড়তে বাড়তে সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। কিন্তু আজই মাত্র গাছ থেকে গোপালভোগ আম নামানো হয়েছে। আর আজ প্রথম দিনই বাজারে গোপালভোগ আমের দাম হাঁকা হচ্ছে ২ হাজার ৪শ থেকে আড়াই হাজার টাকা!

এছাড়া ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম নামানো শুরু হলেও এখন পর্যন্ত জমে ওঠেনি রাজশাহীর আম বাজার। বাজার জমাতে আজই প্রথম উঠতে শুরু করেছে জাত আম খ্যাত গোপালভোগ। নামেই যার সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। সাধারণত গুটিজাতের (চোষা) আম দিয়ে প্রতিবছর মৌসুম শুরু হলেও গোপালভোগ আমের জন্যই অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় চাষি, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের।

কারণ গোপালভোগ দিয়েই আমের রাজধানী রাজশাহীর আম বাণিজ্য জমে ওঠে। এরপর এক এক করে বাজারে আসতে শুরু করে হরেক রকম নাম ও স্বাদের রসালো আম। সব মিলিয়ে এ বছর নির্ধারিত ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ মেনে আম নামানো পুরোদমে শুরু না হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে হাট-বাজার ভরে উঠবে বলে আশা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

কারণ গাছের আম পরিপক্ব না হওয়ায় রাজশাহীর অনেকেই এবার ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ অনুসরণ করছেন না। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী আজ ২৫ মে থেকেই রাজশাহীতে পুরোদমে গোপালভোগ আম নামার কথা। কিন্তু আজ গোপালভোগ আম নেমেছে অল্প-স্বল্পই। তাই রাজশাহীর বাজারে এখনও সেভাবে গোপালভোগ আমের দেখা মিলছে না। গেল সপ্তাহ থেকে বাজারজুড়ে কেবলই গুটি জাতের আমের আধিক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে টক-মিষ্টি স্বাদের এই আমের চাহিদা কম। তাই বেচা-কেনাতেও চলছে ঢিলেঢালা ভাব।

আজ বাজার ধরতে রাজশাহীর অনেক এলাকাতেই গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে এখন কেবল বুকিং বা প্রি-অর্ডার অনুযায়ী গোপালভোগ আম ভাঙা হচ্ছে বিভিন্ন বাগানের গাছ থেকে। তাই গোপালভোগের সরবরাহ বাড়তে কম করে হলেও আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী বড়বনগ্রাম এলাকার আমচাষি ফরিদুল ইসলাম বলেন, এবার মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরো এপ্রিল কেটেছে ভয়াবহ তাপদাহে। তীব্র রোদে পুড়েছে প্রকৃতি। তাপের দাপটে গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়েছে। তাই ফলন কম হয়েছে। এরপর আবহাওয়ার তারতম্য থাকায় সব এলাকায় একসঙ্গে এবার গোপালভোগ আম পরিপক্ব হয়নি। তাই একযোগে সবাই এখনো বাগান থেকে গোপালভোগ আম পুরোদমে নামানো শুরু করেননি। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে প্রায় সব বাগানেই রাজশাহীর জনপ্রিয় এই আম পাড়া শুরু হবে। তখন বছর ঘুরে আবারও আমময় হয়ে উঠবে রাজশাহীর হাট-বাজার এবং অলিগলি। মিষ্টি-মধুর সব আমে ভরে উঠবে রাজশাহীর জনপদ। তবে সরবরাহ কম থাকলেও আগামী সপ্তাহে গোপালভোগেই জমে উঠতে শুরু করবে এই আমের রাজধানী।

রাজশাহীর মহানগরের সবচেয়ে বড় মোকাম শালবাগান বাজার। এখানকার আম ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, আজ বাজারে খুব অল্প সংখ্যক গোপালভোগ আম নেমেছে। তবে ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। প্রথম দিনই দুই হাজার চারশ থেকে দুই হাজার পাঁচশ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে গোপালভোগ। স্বাদ ও গুণে অতুলনীয় হওয়ায় প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতে এই গোপালভোগের চাহিদাই বেশি থাকে। এবারও আছে কিন্তু সরবরাহ কম।

একই বাজারের আম ব্যবসায়ী শাহীন শেখ বলেন, বর্তমানে গুটি জাতের চোষা আমের দাম একটু কম। এক হাজার পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ আরও বাড়িয়ে বা কমিয়েও বিক্রি করছেন। তবে টক-মিষ্টি স্বাদের এই আমে আঁশও একটু বেশি। তাই কম বেশি সবার চাহিদা গোপালভোগ আমের প্রতিই। ফলন কম হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে গোপালভোগ আমের সরবরাহ বাড়বে। তখন রাজশাহীর চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকাম ও বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে আশার কথা শোনান। তবে দাম এবার শুরু থেকেই চড়া থাকবে বলেও উল্লেখ করেন এই ব্যবসায়ী।

এদিকে প্রতিবছরের মতো এ বছরও ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ ঘোষণা করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। সেই অনুযায়ী ১৫ মে থেকেই স্বল্প পরিসরে গুটি জাতের আম পাড়া ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময় পেরোলেও বাজার এখনো জমে ওঠেনি। তাই খুব কমই দেখা মিলছে পাকা আমের। বেশিরভাগ বাগানে আম পরিপক্ব না হওয়ায় বাগান মালিকরা এখনই আম নামাতে আগ্রহী নন বলে দাবি খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, জাত আম খ্যাত গোপালভোগ ২৫ মে থেকে, লক্ষ্মণভোগ (লকনা) ও হিমসাগর (ক্ষীরসাপাত) আম ৩০ মে থেকে পাড়া যাবে। এছাড়া আগামী ১০ জুন থেকে সবার প্রিয় মিষ্টি আম ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম নামবে। ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪ আম, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম পাড়া যাবে। আর নতুন জাতের উদ্ভাবিত কাটিমন ও বারি-১১ আম পরিপক্ব সাপেক্ষে বছরজুড়েই পাড়া যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোছাম্মত সাবিনা বেগম বলেন, রাজশাহী ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে। গত মৌসুমে রাজশাহীতে আম উৎপাদন হয়েছিল ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন।

উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহী জেলায় বাণিজ্যিক চাষি বেশি। তারা গুটি আম খুব একটা হার্ভেস্ট করেন না। তাই খুব বেশি যে গুটি আম চাষ হয় সেটাও না। এখানে যা হয় তা প্রায় সবই ব্রান্ডের আম। আর ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মতিক্রমেই ঘোষণা করা হয়েছে। তবে একই জাত বা গাছের আম একেক সময় পাকে। যার গাছের আম পরিপক্ব হবে তিনি পাড়বেন, বলাই আছে অপরিপক্ক আম পাড়া যাবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ