• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন

চিরচেনা চড়ুই পাখি

আপডেটঃ : রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭

বারান্দায় বাগান করা আমার পুরনো সখ। কিছুদিন আগে বশেমুরকৃবি ক্যাম্পাস থেকে সাদা আর সবুজ রঙের পাকা মরিচ এনে রোদে শুকিয়ে তা থেকে বীজ সংগ্রহ করে চারা করেছি। বড় হলে টবে লাগাব। গাছের পরিচর্যা করব নিজের হাতে। দুদিন পর গাছের মরিচও খাব। বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সোম থেকে বৃহস্পতি দিনের বেলা চারাগুলোর পরিচর্যা করা সম্ভব হয় না। রাতে যখন গাছে পানি দিতে যাই প্রায় দিনই লক্ষ্য করি চারাগুলোর দু’একটা পাতা খাওয়া। বড়ই চিন্তার বিষয়! মরিচের পাতা প্রতিদিন কে খেয়ে যায় তা ধরতেই পারছি না। এক ছুটির দিনে সকাল দশটার দিকে বারান্দায় যেতেই দেখলাম, ছোট একটা পাখি চারার কচি পাতায় ঠোঁট চালাচ্ছে। কাছে যেতেই উড়ে গিয়ে পাশের বাসার কার্নিশে বসল। দ্রুত ঘরে গিয়ে ক্যামেরা এনে চোর সাহেবের দিকে তাক করে বার কয়েক ক্লিক করলাম। ভাবতেই পারিনি মরিচের পাতা কোনো পাখির প্রিয় খাবার হতে পারে!

মরিচের পাতা খাওয়া পাখিটির নাম চড়–ই। কোনো কোনো অঞ্চলে চড়াই নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম House Sparrow. Passeridae পরিবারের চড়ুইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম Passer domesticus.

চড়ুই ছোট আকারের পাখি। দৈর্ঘ্য ১৫ সেন্টিমিটার। ওজন মাত্র ২৪ গ্রাম। চড়ুইয়ের স্ত্রী-পুরুষে ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষ চড়ুই স্ত্রী তুলনায় দেখতে সুন্দর। এদের মাথার চাঁদি ধূসর, ঘাড় ও চোখে তামাটে ডোরা। পিঠ জলপাই-বাদামি। বুক-পেট ও গাল সাদা। গলা কালো। মোটা ঠোঁট দুটো কালচে। অন্যদিকে স্ত্রী চড়ুই হালকা হলদে-বাদামি। বুক ও পেট বাদামি-ধূসর। ঠোঁট গোলাপি। উভয়েরই চোখ বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা গোলাপি-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে মায়ের মতো, তবে অপ্রাপ্ত পুরুষ বাচ্চাগুলোর থুতনি কালো ও দেহ উজ্জ্বল বাদামি।

চড়ুই বহুল দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। শহর, বন্দর, গ্রাম তথা লোকালয়ে এরা বাস করে। দালান ঘরে, কৃষি জমিতে, ফলের বাগানে, ছোট ঝোপঝাড়ে এরা বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে দেখা যায়। মাটিতে হেঁটে হেঁটে শস্য, ঘাসবিচি, ফুলের কুঁড়ি, ফল, পোকামাকড়, ভাত, খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ইত্যাদি খায়। দলবেঁধে ধূল্লিন করতে বেশ পছন্দ করে। ‘চির…চির…চির…’ বা ‘চুর…চুর…’ আওয়াজ করে ডেকে থাকে। মার্চ থেকে জুন প্রজননকাল। এসময় খড়, শুকনো ঘাস-লতা, পাটের আঁশ ইত্যাদি দিয়ে মানুষের ঘরবাড়ির ফোকর, ভেন্টিলেটর বা ঘরের চালের নিচে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩ থেকে ৭টি। ডিমের রং ফিকে সবুজাভ সাদা, তাতে বাদামি ছিট থাকে। ডিম ফোটে ১৪ দিনে। বাচ্চারা ২০ থেকে ২১ দিনে উড়তে শেখে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ